অচেনা শহরের প্রেম
নাহিদ ট্রেন থেকে নামার পর চারপাশে একবার তাকাল। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে শহরের বাতাস গায়ে মাখল। এটা তার পরিচিত শহর নয়—অচেনা, অজানা। চাকরির প্রয়োজনে এখানে আসতে হয়েছে। ঢাকা থেকে অনেক দূরে, একেবারে সীমান্তের কাছে এক ছোট্ট শহর।
শহরটা অদ্ভুত। এখানে ভোর একটু দেরিতে হয়, বিকেল নামে দ্রুত। আর রাত? রাত যেন এক অদৃশ্য পর্দা টেনে নেয় চারপাশে।
নাহিদের অফিস বড় নয়। সরকারি প্রকল্পের এক অস্থায়ী দপ্তর। সহকর্মীরা মোটামুটি ভালো, কিন্তু একমাত্র যার কথা আলাদা করে বলতে হয়, সে হলো রূপা।
রূপা এখানকার মেয়ে। কিন্তু তার চেহারায় শহুরে ছাপ, কথাবার্তায়ও। যেন সে এখানকার নয়, অথচ এখানেই আটকে আছে। অফিসে প্রথম দিনই পরিচয় হয়েছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই কথা হয়েছিল—
— “আপনি নতুন?”
— “হ্যাঁ, এই শহরে প্রথমবার।”
— “ভালো লাগছে?”
— “আসলে বুঝতে পারছি না। শহরটা একটু অদ্ভুত, তাই না?”
— “সবাই প্রথমে তাই ভাবে। পরে অভ্যস্ত হয়ে যায়।”
এরপর নাহিদ আর রূপার কথাবার্তা বেড়ে যায়। অফিসের কাজের বাইরে টুকটাক গল্প, মাঝে মাঝে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাওয়া।
একদিন নাহিদ জানতে চাইল, “আপনি এই শহর ছেড়ে যান না কেন?”
রূপা হেসে বলল, “আপনি জানেন, কিছু কিছু জায়গার প্রতি মানুষের অদৃশ্য টান থাকে। আমি এই শহর ছেড়ে কোথাও যাইনি, কারণ এটা আমাকে ধরে রেখেছে।”
নাহিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। সে নিজেও কি ধীরে ধীরে এই শহরের প্রেমে পড়ে যাচ্ছে? নাকি রূপার?
বৃষ্টি ছিল সেদিন। অফিস ছুটির পর নাহিদ আর রূপা একসঙ্গে ফিরছিল। ছাতা ছিল একটাই। রূপা বলল, “আমাদের শহরে এই রকম বৃষ্টি হলে মানুষ একটু চুপচাপ হয়ে যায়। আপনি কি চুপচাপ হয়ে গেলেন?”
নাহিদ বলল না কিছু। শুধু দেখল—এই অচেনা শহর ধীরে ধীরে চেনা হয়ে যাচ্ছে। আর রূপা? সে কি নাহিদের জন্যই এই শহরের সবচেয়ে সুন্দরতম স্মৃতি হয়ে উঠছে?
একদিন রূপা বলল, “আপনি যখন এই শহর ছেড়ে চলে যাবেন, তখন কি আমাকে মনে পড়বে?”
নাহিদ কিছু বলল না। শুধু জানত, এই অচেনা শহরের প্রেম হয়তো কখনো বলা হবে না, কিন্তু অনুভব করা হবে চিরকাল।