• মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩১ পূর্বাহ্ন

অনিশ্চয়তার কালোরাত / কলমেঃ মোঃ নজরুল ইসলাম (বিপুল)

মোঃ নজরুল ইসলাম বিপুল / ৪২ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ, কুয়াশার চাদরে ঢাঁকা বাড়ীর আঙ্গিনার দিকে একধ্যানে চেয়ে আছে সুইটি। মাথায় রাজ্যের চিন্তা।
মিনিট দশেক আগে সে পেয়েছে খবরটা। তার বাবাকে সকালে উচ্চস্বরে বলতে শুনেছে, এভাবে মেয়ের জীবন চোখের সামনে নষ্ট হতে তুমি দেখতে পারো, আমি না। আমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক ভেবে চিন্তেই নিয়েছি। তুমি মেয়েকে বুঝাও। যা হবার হয়েছে। আমরা তো চেষ্টা কম করিনি। তাছাড়া কপালের লিখন কে খন্ডাতে পারে বলো?
দুপুরের খাবারের পর মা অত্যান্ত শান্ত কন্ঠে সুইটিকে জানালো তোর বাবা তোর জন্য ছেলে দেখেছে। ছেলে চাকুরি করে শিক্ষিত, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো। এই দেখ ছবি। তুই আর অমত করিসনে মা।
কথাগুলি ঝড়ের মত বলে দ্রুত ঘর থেকে মা বেরিয়ে গেলেন। হয়ত মেয়ের সামনে অশ্রু লুকাতে চাইলেন। কারন সেই ঘটনার পর মেয়ের সাথে তিনিও কি কম ব্যথিত হয়েছিলেন!
এইবার নিয়ে চতুর্থবার সুইটিকে এসবের মুখোমুখী হতে হচ্ছে। কি করবে সে আরও কিছুদিন কি সে অপেক্ষা করবে, নাকি বাবার প্রস্তাবে মত দেবে। এইতো ভালই আছে সে। আবারও আরেক সম্পর্কে জরিয়ে কি হবে। জীবনটা কি এতোই সহজ?

সুইটি তার জীবনে আকস্মিক ভাবেই তানভীর কে পেয়েছিলো। চোখ বন্ধ করলেই সব যেন ছবির মতই মনে হয়। এইতো সেদিনের কথা, সবেমাত্র ইন্টারমেডিয়েট শেষ করেছে সে। সুইটির বাবা তার এক ক্লায়েন্ট মারফত পার্শবর্তি গ্রামের তানভীরের খোঁজ পায়। ব্যাবসা করত সে। মোটামুটি শিক্ষত ও সুদর্শন হওয়ায়, এমন সুপাত্রের হাতে কন্যাদান করতে সেদিন কালবিলম্ব করেননি সুইটির মহুরি বাবা।
তিনি সকলের মুখের উপর সেদিন বলেছিলেন সাত ঘাটের পানি খাওয়া এই আমি বলছি, এই ছেলের ঘরে মেয়ে আমার সুখেই থাকবে। খুব ধুমধাম করেই বিয়ে হয়েছিল তার।
কিন্তু বিধি-বাম! এক বন্ধুর কারসাজিতে বিয়ের মাত্র ছয়মাসের মাথায়, ইম্পোটের ব্যাবসায় বড় ধরনের লোকশানের মুখে পরে তল্পিতল্পা গুটিয়ে শুন্য হাতে ঘরে এসে উঠে তানভীর। এরপর দিকভ্রান্ত তানভীর শশুর এর সামান্য সহযোগিতায়
ও নিজের ব্যাংকের জমানো শেষ সম্বল খরছ করে পরবর্তি এক মাসের মাথায় দেশ ছেড়ে মালওয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। সবকিছুই যেন খুব দ্রুতই শুরু হয়ে আবার শেষও হয়ে গেল। বিয়ের পর মাত্র সাতমাস সুইটি তার স্বামীকে কাছে পেয়েছিল। সংসারটাও ঠিকভাবে করা হলোনা তার। ছেলে বাড়ী না থাকায় শাশুরির কাছেও তেমন কদর পায়না সে। বড় জা সহ্যই করতে পারেনা তাকে। আজকাল ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এমন তুলকালাম কান্ড বাঁধায় না জানি কত্তবড় অন্যায়টা সে করে ফেলেছে। এভাবে আরাইটা বছর চোখের পানি আর নাকের পানি এক করে, শশুরবাড়ী বাপেরবাড়ী করে কোনক্রমে দিন পার করছে সে। অবশেষে একরকম বাধ্য হয়েই স্বামীর পরামর্শে ছয়মাস ধরে বাবার বাড়ীতে স্থায়ীভাবে রয়েছে সুইটি। এরমাঝে তানভীর দুইবার দেশে এসেছিল। সে সময় ওর সাথে শশুর বাড়ী গিয়ে আবার সে বিদেশ ফিরে গেলে সুইটি বাবার বাড়ীতে চলে এসেছে। সুইটির বিশ্বাস ওর শশুর যদি বেঁচে থাকতো তবে হয়ত এমনটা না ও হতে পারতো।
বিদেশে যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সে চাকুরি করে, তার ভিসার মেয়াদ আর এক বছর আছে। ইতিমদ্ধে তানভীর একদিন জানায় যে সে তার চাকরির স্থান পরিবর্তন করতে চায়। সেখানে নাকি আকামা পরিবর্তনের খরছ ও ঝামেলা ছাড়াই অনেক বাঙ্গালী অনায়াসে বছরের পর বছর রয়েছে। শুধুমাত্র মালয় পুলিশের চোখ এড়িয়ে যাওয়া চাই। তাছাড়া নতুন দোকানে বেতুনের পরিমানও বেশি।
যা ভাবা তাই কাজ। অচিরেই তানভীর পাশ্ববর্তি স্ট্রেইট চালানতুনের এক দোকানে চাকুরি খুজে নিল। সবকিছু ঠিকঠাকই চলতে লাগলো।
এখন তানভীর পুর্বের তুলনায় অনেক বেশি টাকা পাঠায়। বাড়ী তৈরির জন্য দেশে জমির খোঁজ চালাতে থাকে, ভবিস্ব্যৎ এর কত পরিকল্পনা চলে।প্রতিদিন অনেক রাত অবধি কথা বলত ওরা দুজন। এখন স্বামীকে অনেক ভারমুক্ত মনে হয় সুইটির।
এভাবে ভালো না হলেও এক রকম দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে দিনগুলি দ্রুতই এগিয়ে চলতেছিল।
এরপর গত দুই বছর আগে এক সকাল বেলা তানভীরের এক বাঙ্গালী সহকর্মীর ফোন আসে। আসে মাথায় বজ্রপাতের মত এক খবর। মিরন ভাই (ঐ ফোনদ্বাতা লোকটির নাম) জানায় সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা তানভীরকে রুমে পায়নি। তার পাশের বিছানায় যে ঘুমায় সে বলেছে খুব ভোরে ওকে ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখেছে। এরপর কখন যে রুম থেকে বেড়িয়েছে, সে বলতে পারেনা।
সুইটি বলে আমার সাথে গতকাল রাত্রে প্রায় দুইটা পর্যন্ত কথা বলেছে কই আমার কাছেতো কিছু বলেনি বা অন্যরকম কিছু মনে হয়নি?
ওরা নাকি পুর্বের চাকরির স্থান হতে শুরু করে সব যায়গায় খোঁজ করেছে। ওদের মধ্যে একজন বলছে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা সবাই এখানে বেআইনি ভাবে অবস্থান করছি, যার কারনে পুলিশের কাছে যাওয়া বা প্রকাশ্যে খোজ খবর নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আমাদের মালিক ও বেআইনি ভাবে  শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার অপরাধে অভিযুক্ত হবার ভয়ে কোন সহযোগীতা করতে তেমন ইচ্ছুক নয়।
এভাবে একটা সপ্তাহ পার হল। তানভীর একেবারে লাপাত্তা। ধরাপরার ভয়ে এক সময় সবাই আস্তে আস্তে এই বিষয়টি এরিয়ে যেতে লাগলো।
মিরন ভাই একদিন বলল ভাবি আপনি চিন্তা করবেন না, আমরা যেকোন খবর পেলে প্রথমে আপনাকে জানাবো।
সুইটির বাবা ও তানভিরের মা সহ এদেশের স্থানিয় দালাল, সচিবালয়, মন্ত্রনালয়, রাস্ট্রদুত ভবন সহ সম্ভাব্য সকল যায়গায় সাহায্যের জন্য হাত পাতল কিন্তু আশাব্যঞ্জক কোন ফলাফল এলনা।
সুইটি রং জীবনে সেই থেকে শুরু এক অন্ধকারাচ্ছোন্ন দুর্যোগময় সুদীর্ঘ রজনীর!
কালবৈশাখী তান্ডবের এই কালোরাত কি কোনদিনও শেষ হবে?
ঐ দূর দিগন্ত হতে সূর্যদয়ের লালরস্মী এসে সুইটি নয়ন তারা স্পর্স করবে?

চলবে …….


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন