প্রিয় আম্মু,
কেমন আছেন আপনি? জানি, আমি প্রায়ই ব্যস্ততায় ডুবে থাকি, ঠিকমতো খোঁজ নেওয়া হয় না, তবুও আপনি আমার জন্য দোয়া করতে কখনও ভুলেন না। কিন্তু আজ মনটা খুব খারাপ, আম্মু। তাই ভাবলাম, আপনাকে একটা চিঠি লিখি— জানি না, আপনি পড়ে কী ভাববেন, তবে এটুকু জানি, আপনার কাছে কোনো কথাই বোঝানোর দরকার হয় না, আপনি সব অনুভব করতে পারেন।
আম্মু, আপনার ছেলে আজ বড্ড ক্লান্ত। জীবনটা যেন ধোঁয়াশার মতো মনে হচ্ছে, কোথায় ছুটছি, কেন ছুটছি— কিছুই বুঝতে পারি না। ছোটবেলায় তো এমন ছিল না! তখন তো আমি শুধু আপনার ছায়ায় আশ্রয় নিতাম, পৃথিবীর কোলাহল থেকে দূরে, আপনাকে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়তাম। আজ এত মানুষের মাঝে থেকেও মনে হয়, আমি একা। বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট সারাক্ষণ কুরে কুরে খাচ্ছে, কিন্তু কারও সাথে ভাগ করে নিতে পারি না।
কখনো কখনো মনে হয়, ফিরে যাই ছোটবেলায়, যেখানে কোনো দায়িত্ব ছিল না, ছিল না হারানোর ভয়। আপনার কোলে মাথা রেখে সব দুঃখ ভুলে যেতে চাই আবার। আপনি কি মনে রেখেছেন, আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন আপনার শাড়ির আঁচল ধরেই হাঁটতাম? একটু দূরে গেলেও কেঁদে ফেলতাম। এখন তো দূরত্ব শুধু শরীরের না, মনে জমে গেছে এক সমুদ্র দূরত্ব। আপনি কেমন করে এত সহজে সব সহ্য করেন, আম্মু? কেমন করে আমার দুঃখ বুঝেও নিজেকে শক্ত রাখেন? আমি জানি, আপনি প্রতিদিন আমার জন্য দোয়া করেন, কিন্তু আমি তো আপনাকে ছুঁতে পারি না, অনুভব করতে পারি না আপনার সেই মমতার হাত।
আপনি জানেন, আমি খুব অবাধ্য হয়ে গেছি। জীবন আমাকে বদলে দিয়েছে। আগের মতো সব শোনার ধৈর্য নেই, সবকিছুতে বিরক্ত লাগে। কিন্তু আপনার সামনে গেলে আজও ছোট সেই ছেলেটাই হয়ে যাই, যে এক মুঠো ভালোবাসার জন্য আপনার কাছে ছুটে যেত। আপনার ছেলের মনটা আজ হাহাকারে ভরা, আম্মু।
আমি জানি না, এই ক্লান্ত পথের শেষ কোথায়, জানি না, কবে আবার আপনার কাছে ছুটে আসতে পারব। শুধু এটুকুই জানি, আপনার জন্য আমার হৃদয়ে যে ভালোবাসা, তা কখনও কমবে না। আমি হয়তো সব কথা বলতে পারি না, হয়তো আপনাকে সব অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি না, কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই হৃদয়ের গভীরে আপনার জন্যই সবচেয়ে বেশি জায়গা রাখা আছে।
আম্মু, আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন। আমাকে মাফ করে দেবেন যদি কখনো আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি। আমি সবসময় চাই, আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমি আবার একদিন আপনার কোলে মাথা রেখে বলব— “আম্মু, আমি ক্লান্ত, একটু আদর করে দাও?”
ভালোবাসায়,
আপনার অবাধ্য ছেলে.
এইচ.এম. মোশাররফ হোসাইন
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।