একটি জানালা দুটি মন
পর্ব –চতুর্থ
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
কুমিল্লা স্টেশনে ট্রেন থেমেছে ঠিকই, কিন্তু আরাফাতের ভেতরে যেন সময় থেমে গেছে।
পেছনে ফেলে গেল এক অচেনা পরিচয়, এক জানালার গল্প, এক চোখে চোখ রাখার মুহূর্ত। সাহিদা চলে গেছে। স্রেফ একটুখানি তাকিয়েছিলো, সেই বিদায়ের আগে। তাতেই বুকের ভিতর যেন হালকা একটা কষ্ট ছড়িয়ে পড়েছে।
আরাফাত জানালার ধারে বসে, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে প্ল্যাটফর্মের দিকে। সাহিদার পায়ের চিহ্ন হয়তো এখনো শুকায়নি ওই মেঝেতে। কিছু স্মৃতি কি সত্যিই এত তীব্র হয়?
সে নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করে—
এই কদিনের অচেনা দেখা কি এতটা ছুঁয়ে যায়?
নাকি পুরনো সাহিদার নামের সঙ্গে মিল বলেই নতুন সাহিদা এতটা হৃদয়ের কাছাকাছি চলে এলো?
ট্রেন আবার চলতে শুরু করেছে। জানালার বাইরে পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্য, কিন্তু আরাফাতের ভেতরের দৃশ্য আটকে আছে একটিমাত্র চোখের দিকে। সেই চোখ দু’টো—যেখানে অনভিপ্রেত ভালোবাসার শুরুর গন্ধ লেগে ছিল।
একবার সে ভেবেছিল—কিছু একটা বলবে, হয়তো নাম্বার চাইবে। কিন্তু সাহস হলো না। হয়তো বলেও ফেলতে পারতো,
“আবার দেখা হবে?”
কিন্তু সেই কথাটাও গলার কোথাও আটকে গিয়েছিল।
চোখ বন্ধ করে বসে থাকে সে। বাতাসে ভেসে আসে কুমিল্লা স্টেশনের মাইকের শেষ ঘোষণা।
"ট্রেন ছাড়ছে... জীবনও কি কিছু কিছু জায়গা থেকে ঠিক এভাবেই ছেঁটে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়?"
ট্রেনের গতি বাড়ে। গন্তব্য এখন আর দূরে নয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্টেশন চোখের সামনে এলে, বুকের ভেতর হঠাৎ কেমন করে ওঠে। বাড়ি ফিরছে সে—কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু একটা রেখে এল কোথাও।
ফেনী থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত যে ছোট্ট পথ ছিল, সেখানে ছিল এক জানালার গল্প।
সেই গল্পের শেষে এখন শুধু নীরবতা।
বাসায় ফিরে মা জিজ্ঞেস করলেন,
— ভালো করে আসলি তো বাবা?
আরাফাত মৃদু হাসলো। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
— হ্যাঁ মা, সব ভালোই ছিল।
কিন্তু মা তো জানে না, তার ছেলেটা ফেরার পথে একটা অদ্ভুত শূন্যতা নিয়ে ফিরেছে।
রাতে ঘুমাতে গিয়ে বারবার একটা নাম মাথায় আসে—
সাহিদা।
এক নাম, দুই গল্প। এক অতীত, এক বর্তমান।
হয়তো আগামীকাল সকালে ঘুম ভাঙার পরও সে এই নামটাকে ভুলতে পারবে না।
হয়তো সাহিদা হয়ে উঠবে তার স্মৃতির কোনো দীর্ঘ জানালা—
যেখানে দুটো মন একসময় পাশাপাশি বসে ছিল।
একটি জানালা, দুটি মন।
চলবে...
🔹 পাঠকদের প্রতি:
এই গল্প যদি আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তবে দয়া করে , কমেন্টে আপনার অনুভূতি জানান আপনার মন্তব্যই আমাদের প্রেরণা।
আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে ভুলবেন না!
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।