পর্ব – ৬
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
সকালটা অন্যরকম কেটেছে আজ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরতলিতে ঈদের দাওয়াতের জন্য চাচা ইমাদুলের বাসায় এসেছে আরাফাত। শহরের ভিন্ন পরিবেশ, চেনা মানুষের মাঝে অচেনা কিছু মুহূর্ত—এইসব মিলিয়ে দিনটা যেন একটু রঙিন, একটু অস্থির।
চাচাতো বোন মাহিয়া সদ্য কলেজে উঠেছে। চঞ্চল, হাসিখুশি, আর দুষ্টু প্রকৃতির এক প্রাণবন্ত মেয়ে। সারাদিন ঘরে বাইরে ঘুরে বেড়ানো, কাউকে না কাউকে জ্বালানো—এতেই যেন তার আনন্দ।
দুপুরের পর হঠাৎ মাহিয়া এসে বলল—
—“আরাফাত ভাইয়া, আমার এক বান্ধবী আজকে কুমিল্লা থেকে আসতেছে। রাতে ট্রেন নামবে স্টেশনে। তুমি কি একটু গিয়ে আনতে পারবা?”
আরাফাত চমকে উঠলো “কুমিল্লা” শুনে। এক মুহূর্তের জন্য বুকের ভিতর দোলা দিয়ে উঠলো সেই পুরোনো স্মৃতি। সাহিদার মুখ, সেই জানালা, সেই চোখ… সবকিছু যেন এক ঝলকে মনে পড়ে গেল।
—“বান্ধবী মানে? কুমিল্লা থেকে আসতেছে কেন?”
—“ওদের বাসায় কেউ আসতে পারেনি। আমি বলেছি ও আমার গেস্ট, চাচি তো অনেক ভালো মানুষ, আপত্তি করেনি। তুমি গেলে ভালো হয়, বাসা চিনে আসতে পারবে।”
আরাফাত মাথা নাড়লো। তেমন কিছু না বলে বললো, “ঠিক আছে। সময়টা জানিয়ে দিস।”
—“ভাইয়া, একটা কাজ করো, এই নাম্বারটা সেভ করে রাখো। ট্রেন থেকে নামলে ও তোমাকে কল দিবে, অথবা তুমি ওকে দিও। নামটা এখন বলছি না, তোকে সারপ্রাইজ থাকবে।”
মাহিয়া হেসে হেসে বললো।
আসলে মাহিয়ার এমন হাসির পেছনে যে কী রহস্য লুকানো আছে, তা তখন আরাফাত জানতো না।
—
রাতের শহর একটু অন্যরকম হয়। স্টেশনের পাশে ভিড়, আলো, ভিখারিদের হাহাকার, আর কাঁচা মাটির গন্ধে ভেজা ট্রেনের লাইনগুলো।
আরাফাত দাঁড়িয়ে ছিল নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে। ট্রেনের হুইসেল শোনা গেল।
মোবাইল বেজে উঠলো। অপরিচিত নাম্বার।
—“হ্যালো, আপনি কি মাহিয়ার ভাইয়া? আমি এখন নেমেছি, কালো রঙের স্যুট পড়া একটা মেয়ের দিকে তাকান, সামনে এসে দাঁড়াচ্ছি।”
আরাফাত ফোন কানে রেখেই চোখ তুলে তাকালো সামনে।
আর মুহূর্তেই দুনিয়া থেমে গেল তার জন্য।
সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মেয়ে… সেই চেহারা… সেই চোখ…
সেই জানালার মেয়েটি—সাহিদা!
আরাফাতের বুক ধক করে উঠলো।
তার মনে পড়ে গেল সেই প্রথম দেখা, সেই একপলক চাওয়া, সেই না বলা কথা।
“সাহিদা… তুমি?”
তার চোখ যেন বলে দিল অনেক কিছু, অথচ মুখে একটা শব্দও এল না।
সাহিদা হালকা হাসলো।
—“চলেন?”
আরাফাত কোনো উত্তর দিল না। শুধু তার পাশে হাঁটতে শুরু করলো। কিন্তু তার মাথার ভেতর চলতে লাগলো হাজার প্রশ্ন, হাজার আবেগের ঢেউ।
“মাহিয়ার বান্ধবী… আর ও সাহিদা?
এটা কী কোনো নিছক ঘটনা?
নাকি বিধাতার লিখে রাখা গল্প?”
চোখে জল জমে ওঠে না, তবু ভিতরে কোথাও এক অদ্ভুত বেদনা, আবার আনন্দও।
একটা নাম… একটা চোখ… একটা জানালা…
আজ সত্যি সত্যিই flesh and blood হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে তার সামনে।
এটা কি তাহলে দ্বিতীয় দেখা?
নাকি… প্রথম পরিচয়ের শুরু?
চলবে…