
সন্ধ্যা নেমে এলো। জানালার পাশে রাখা এক টুকরো আলোও হারিয়ে গেল শহরের কংক্রিট দেয়ালে। ঘরের কোণায় চুপচাপ বসে আছেন রফিক সাহেব। তাঁর বয়স ষাট ছুঁইছুঁই, চোখের কোণ দু’টো ক্লান্ত, তবু ভরা।
ছেলেটা পাশের ঘরে। দরজা বন্ধ। সারাদিন কোনো শব্দ নেই—শুধু মাঝে মাঝে মাউস ক্লিকের শব্দ, কখনো মৃদু হাসি।
একটা সময় ছিল, সন্ধ্যার আজানের পর রফিক সাহেব নিজ হাতে ছেলেকে নিয়ে নামাজে যেতেন। এখন ছেলেটা নামাজের চেয়ে বেশি সময় দেয় কীবোর্ডে।
একদিন তিনি সাহস করে জিজ্ঞেস করলেন—
—"তুই একবার আমার সঙ্গে বসবি, মা তোকে কিছু বলতে চায়।"
কণ্ঠস্বরের ভেতর কী যেন একধরনের অনুরোধ ছিল।
ছেলে না তাকিয়েই বলল—
—"আব্বু, একটু পরে আসি, আমি এখন লাইভে আছি।"
রফিক সাহেব ধীরে ধীরে ফিরে যান তাঁর সেই পুরোনো সোফায়। দেয়ালের পাশে বসে থাকেন তিনি, যেখান থেকে ছেলের ঘরের দরজাটা অর্ধেক দেখা যায়। কখনো তাকিয়ে থাকেন নিরবে, যেন চোখ দিয়ে ছেলেকে ছুঁতে চাইছেন।
তিনি ভাবেন—
ছেলেটা এখনো ঘুম থেকে উঠে “আব্বু” বলে না।
তার কণ্ঠে আর আগের মতো “মা কই?” বলে ডাক নেই।
সকাল মানে তার জন্য স্ক্রিনের আলো, আর রাত মানে হেডফোনে ঘোর লাগা।
আজকাল কেউ আর কথা বলে না।
শুধু লেখে... কিবোর্ডে।
শুধু দেখে... স্ক্রিনে।
রফিক সাহেবের বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাস জমে।
তিনি চোখ বন্ধ করে ভাবেন—
"আমি মানুষ তৈরি করতে চেয়েছিলাম।
তাকে ভালো মানুষ করতে চেয়েছিলাম।
কিন্তু আমি কি বানিয়ে ফেলেছি...
একটা কম্পিউটার?"
সন্ধ্যার আলো নিভে যায়,
আর দেয়ালের পাশে চুপচাপ বসে থাকে এক পিতা—
যার জীবন এখন নীরব...
আর সন্তান একটি অপারেটিং সিস্টেম।
বাবার একাকীত্ব ও অনুভূতির অভাব
সন্তানের প্রযুক্তি-নির্ভরতা ও পারিবারিক দূরত্ব
একটি ‘জীবন্ত সম্পর্ক’ কীভাবে ‘মেশিনিক আচরণ’-এ পরিণত হয়
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।