✒️ পর্ব ২: বইয়ের বদলে মনিটর
চাষী এসকে খান
মৌসুমী আপা একজন স্কুল শিক্ষিকা। ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল শিশুদের হাতে কলম তুলে দিয়ে আলোকিত মানুষ তৈরি করবেন। পঁচিশ বছর ধরে পড়াচ্ছেন—কখনো বইয়ের পাতায়, কখনো Blackboard-এ। কিন্তু ইদানীং ক্লাসরুমটা বদলে গেছে। ছাত্রদের চোখে এখন প্রশ্ন নেই, কেবল ক্লান্তি।
একদিন ক্লাসে তিনি প্রশ্ন করলেন— —”তোমরা নিজেরা একটা গল্প লেখো, কল্পনা করে।”
সবাই মাথা নিচু করে বসে রইলো। কল্পনার বদলে হাতে মোবাইলের অভ্যাস। মৌসুমী আপা একজনকে জিজ্ঞেস করলেন,
—”তুমি লিখো না কেন?”
ছেলেটা বলল— —”ম্যাম, আমি তো গল্প গুগল করে বের করে ফেলেছি, কপি করে দিলেই হবে, তাই না?”
আপা থমকে গেলেন। এ যেন একটা কাঠিন্য আর ব্যর্থতার মিলনবিন্দু।
তিনি জানতেন, এক সময় এই ছাত্ররাই শিখতো খাতা খুলে, প্রশ্ন করতো আকাশ দেখে, পাতা দেখে রঙ চিনতো, শব্দ দিয়ে জগৎ বানাতো। এখন তারা স্ক্রিনে তাকিয়ে চিন্তা করে, কল্পনা নয়—কপি করে।
স্কুলের লাইব্রেরিতে আগে বসার জায়গা পেতো না, এখন ধুলো জমে বইয়ের মলাটে।
তিনি ফিরে দেখেন, তার নিজের ছেলেও সারাদিন কম্পিউটার স্ক্রিনে। একদিন জিজ্ঞেস করলেন, —”তুই কবিতা পড়িস না কেন?”
ছেলে হেসে বলল— —”এখন কে আর কবিতা পড়ে, মা? ওগুলো ভাইরাল হয় না।”
মৌসুমী আপা জানেন, ভাইরাল হওয়া আর বাঁচা এক জিনিস নয়। যেটা মানুষ করে, সেটা কেবল প্রযুক্তি নয়—সেটা অনুভব, সৃষ্টি আর চরিত্র।
কিন্তু এই প্রজন্ম কি তা বুঝবে?
মনিটরের পেছনে বসে থাকা এই শিশুরা যেন পৃথিবীর নয়, কোনো প্রোগ্রামড জগতে হারিয়ে যাচ্ছে—যেখানে বই নেই, কল্পনা নেই, শুধু স্ক্রল আর স্ক্রিপ্ট।
এভাবেই একদিন মৌসুমী আপা বোঝেন— বইয়ের গন্ধ আজ আর কারও নাকে যায় না। শুধু স্ক্রিনের আলোয় চোখ জ্বলে, মন থাকে নিঃসঙ্গ, কল্পনা মৃত।