পর্ব – ১০
লেখক : আরাফাতুল ইসলাম
ভোরের আলো ফোটার আগেই আরাফাতের ঘুম ভেঙে যায়। পাশে তাকাতেই বুকটা কেঁপে ওঠে—সাহিদা গভীর ঘুমে তার বুকের ওপর মাথা রেখে শুয়ে আছে, এক হাতে ওর বুকের শাড়ির আঁচল আঁকড়ে ধরে যেন স্বপ্নে ওকেই খুঁজছে।
আরাফাত নিঃশ্বাস আটকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। সাহস করে হাত বাড়ায়, মাথায় আলতো করে ছোঁয়া দেয়।
একটা নিঃশব্দ ভালোবাসা ধীরে ধীরে জমে ওঠে চারপাশে।
সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই জড়ো হয়েছে। চাচা হালকা গম্ভীর গলায় বললেন, —"এই ছেলেটা এখন বড় হয়েছে। বুঝি না ভেবেছিলাম, কিন্তু এখন দেখছি… কিছু একটা যেন বদলে গেছে ওর মধ্যে।"
চাচি হেসে উঠলেন,
—"সেই বদলটার নাম সাহিদা, তাই না?"
সবাই হেসে ফেলে। আরাফাত মুচকি হেসে মাথা নিচু করে।
পাশেই সাহিদা, শাড়ির আঁচল গুছিয়ে চুপচাপ বসে, কিন্তু ঠোঁটের কোণে লুকানো হাসিটুকু আর কারও চোখ এড়ায় না।
---
বিকেলে, মাহিয়া এসে বলল, —"ভাই, আজ সন্ধ্যায় তুই আমার সাথে মার্কেটে যাবি। সাহিদার জন্য কিছু গিফট কিনে নিবি।"
—"গিফট কেন?"
—"তুই নিজেই বুঝিস না? ওকে প্রথমবার পেয়েছিস… এখন তো একটু স্পেশাল কিছু করতেই হবে!"
আরাফাত একটু হাসে। মাথা নেড়ে রাজি হয়।
চাচা পাশে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন, কথাটা শুনে বললেন,
—"গিফট দিলে মেয়েরা খুশি হয় ঠিকই, তবে মনে রাখিস, মন থেকে দিলে সেটাই সবচেয়ে দামি উপহার হয়।"
চাচি আবার যোগ করলেন,
—"আর বউ পছন্দ করলে মায়েরও পছন্দ হবে, এটা মাথায় রেখো!"
সবাই হেসে উঠে। মুহূর্তেই ঘরটা এক আবেগী আনন্দে ভরে যায়।
---
সন্ধ্যায়, আরাফাত আর মাহিয়া শহরের বাজারে যায়। মাহিয়া ওকে সাহিদার জন্য একটা হালকা গোলাপি শাড়ি, একটা ছোট্ট মেটালিক চেইন, আর একটা চিরকুট কেনার পরামর্শ দেয়।
আরাফাত একমনে গুছিয়ে রাখে সব। চিরকুটে ছোট্ট করে লেখে—
> “তুমি আমার নিঃশব্দ কবিতা।
তোমার স্পর্শ ছাড়া কিছুই সম্পূর্ণ মনে হয় না।”
---
রাতে, বাসায় ফিরতেই তিশা দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বলল —
"তুই কি আরাফাত?"
আরাফাত একটু অবাক হয়। মেয়েটাকে সে চিনে না, কিন্তু কথা বলার ভঙ্গিমায় যেন পরিচিত কেউ।
পাশ থেকে মাহিয়া বলে,
—"আরাফাত এই হচ্ছে আমার বান্ধবী তিশা, আমি তোকে বলেছিলাম না ও আসবে?"
তিশা মুচকি হেসে বলে,
—"তোর গল্প আমি অনেক শুনেছি মাহিয়ার মুখে। এখন চোখে দেখা হচ্ছে, সত্যি গল্পের হিরোইনের জন্য একজন হিরো দরকার ছিল!"
আরাফাত হালকা হাসে, তিশার খোলামেলা স্বভাব ওকে কিছুটা অপ্রস্তুত করে ফেলে।
সাহিদা তখন পেছন থেকে বলে ফেলে,
—"হিরোইন না, জীবনসঙ্গী..."
সবার মুখ হা হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
আলতো হেসে, সাহিদা চুপচাপ হেঁটে চলে যায় নিজের রুমে।
আরাফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তিশা ফিসফিস করে বলে,
—"ভাইরে! তোর প্রেম তো সিনেমার মতো!"
---
রাতে, সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।
আকাশে মেঘ, হালকা বাতাস। আরাফাত বিছানায় শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল ঠিক তখনই…
একটা স্পর্শ!
সাহিদা এসে নিঃশব্দে তার পাশে শুয়ে পড়ে, মাথাটা রাখে ওর কাঁধে।
—"আরাফাত, ঘুমোচ্ছো?"
—"না…"
—"ভয় পেও না। আজ ঘুমাতে এসেছি, কোনো স্বপ্ন নিয়ে না… বাস্তব ভালোবাসা নিয়ে।"
আরাফাত মুখ ফিরিয়ে সাহস করে ওর গালে একটা চুমু খায়। আর বলে তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি
— কই দাও দেখি
তারপর আরাফাত গিফট বক্সটা সাহিদার হাতে তুলে দেই গিফট পেয়ে সাহিদা খুব খুশি
আরাফাতকে জড়িয়ে ধরে
শুয়ে পড়ে
তারা দু'জনেই চুপচাপ।
কিন্তু এই নীরবতা এতটা গভীর… এতটা পূর্ণ।
---
চলবে…
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।