উপন্যাস একটি জানালা দুটি মন পর্ব – ১১
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
সকালটা কেমন যেন ঘোরলাগা…
একটা অনুভব, একটা বাস্তবতার ছোঁয়া—আরাফাতের ঘুম যেন সত্যি কোনো স্বপ্নের মতো ভাঙলো। পাশে তাকাতেই দেখে বিছানাটা খালি, কিন্তু সাহিদার সেই গায়ের গন্ধটা এখনও বালিশে লেগে আছে। যেন রাতের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থেকে গেছে বালিশটা।
চাচির ডাক শুনে নীচে নেমে আসে সে।
ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে—চাচা, চাচি, মাহিয়া, আর তিশা।
চাচি হেসে বলে,
—”আরাফাত, এই ছেলেটা এখন ঠিক যেন বাসার জামাই হয়ে গেছে! সাহিদা আর ওকে একসাথে দেখে মনে হয়… বুঝতেই পারছো!”
চাচা হেসে বলেন,
—”বাইরে, প্রেমের গন্ধ ছড়াচ্ছে সকাল সকাল! আমরা কি বুড়া হয়ে যাচ্ছি নাকি?”
সবাই হেসে ওঠে।
আরাফাত মাথা নিচু করে শুধু হাসে। সাহিদা লাজুকভাবে পাশে বসে।
তিশা বলে,
—”ভাইয়া, তোমার চোখে ঘুম নাকি রোমান্স? নাকি দুটোই?”
মাহিয়া চিমটি কেটে বলে,
—”তুই তো দেখি একেবারে প্রেমিকের বড় বোন হয়ে গেছিস!”
হাসিঠাট্টার মধ্যে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয় সাহিদা। চা দিয়ে আরাফাতের দিকে তাকিয়ে হালকা গলায় বলে,
—”ঘুম ভালো হয়েছিল?”
আরাফাত কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
—”তোমার গন্ধ এখনও লেগে আছে বালিশে… বুঝে নাও।”
সবার সামনে সাহিদার গাল লাল হয়ে ওঠে।
—
বিকেলে মাহিয়া বলে,
—”ভাইয়া, চলো কিছু গিফট কিনে আনি। সাহিদার জন্য, আর আমার জন্যও।”
আরাফাত হেসে বলে,
—”তুই তো নিজেরটা বলেই দিছিস। সাহিদারটার দায়িত্ব আমার।”
তারা বেরিয়ে পড়ে বাজারে। সঙ্গে যায় তিশাও।
সোনালি রোদে ভরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহর—একটা খোলা জানালার মতো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে গল্পের সম্ভাবনা। আরাফাত সাহিদার জন্য একটি হাতঘড়ি কিনে, যার পিছনে ছোট্ট করে লেখে:
“আমার সময় শুরু তোমায় দিয়ে।”
সন্ধ্যায় ফিরেই সাহিদাকে হাতে তুলে দেয় উপহারটা।
সাহিদা ধীরে ধীরে বাক্স খুলে দেখে—ঘড়ি। মুখে কিছু বলে না, শুধু আলতো করে আরাফাতের হাতে নিজের হাত রাখে।
চোখে জল… ঠোঁটে হাসি।
আরাফাত ফিসফিস করে বলে,
—”এবার আর হারানোর মতো কিছু না। এবার থেকে তুমি শুধু আমার—চিরকাল।”
—
রাত গভীর হয়।
তিশা ও মাহিয়া পাশের রুমে গল্প করছে। চাচা-চাচি নিচে টিভি দেখছেন।
আর সাহিদা আবারও নিঃশব্দে আসে আরাফাতের ঘরে।
—”আজ ঘুমাতে চাই না, জেগে থাকি?”
আরাফাত বলে,
—”তুমি পাশে থাকলে ঘুম আর জাগরণ এক হয়ে যায়।”
সাহিদা কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ থাকে।
একটু পর বলে,
—”আমার ভয় করে…”
—”কিসের?”
—”এ ভালোবাসা বেশি হয়ে যাচ্ছে… যদি আবার হারাই?”
আরাফাত ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,
—”আমি এবার থাকবো। জানালার পাশে নয়, পাশে পাশে।”
ওরা চুপ করে থাকে।
চাঁদের আলো জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে।
সাহিদা চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে বলে,
—”আরাফাত…”
—”হ্যাঁ?”
—”তোমাকে ভালোবাসি। চুপচাপ, গভীরভাবে, পাগলের মতো…”
আরাফাত ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁ
ট ছুঁইয়ে দেয়।
একটা লিপ কিস…
একটা প্রতিশ্রুতি—ভবিষ্যতের জন্য।
—
চলবে…