পর্ব – ১২
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
সকালটা স্বপ্নময় এক অনুভবে ভরা।
সাহিদার কাঁধে মাথা রেখে ঘুম থেকে জেগেছিল আরাফাত।
তাদের সম্পর্কটা এখন নিঃশব্দ এক প্রেম নয়, প্রকাশ্য ভালোবাসা।
আর তাই…
আজ আরাফাত সিদ্ধান্ত নিল—তার ভালোবাসার কথা এবার বলা দরকার নিজের আম্মু-আব্বুকে।
—
বিকেল, ছাদের এক কোণে বসে ফোনে কথা বলছে আরাফাত।
ওপাশে আরাফাতের মা—
—”হ্যাঁ মা, একটা কথা বলার ছিল…”
—”বল বাপ, কেমন আছিস?”
—”ভালো… কিন্তু একটু ভয়ের মধ্যে আছি।”
—”ভয়ের কী আছে রে?”
—”মা… আমি একজনকে ভালোবাসি। ওর নাম সাহিদা। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই।”
পাশে বসে থাকা সাহিদা কানে হেডফোনে কথা শুনছে। আর তার হাত ধরে রেখেছে আরাফাত।
—”তুই নিশ্চিত?”
—”হ্যাঁ মা, অনেকটা সময় একসাথে ছিলাম। আমি ওকে ছাড়া কল্পনাও করতে পারি না।”
একটু চুপ করে থাকে ওর মা।
তারপর বলে,
—”তাহলে ওকে একটু ফোনে দে, আমি কথা বলি।”
আরাফাত ফোনটা সাহিদার দিকে এগিয়ে দেয়।
—”আসসালামু আলাইকুম মা…”
—”ওয়ালাইকুমুস সালাম মা। তুমি কি আমার ছেলেকে সত্যিই ভালোবাসো?”
—”ভালোবাসা বললেও কম হবে মা। আমি ওকে ছায়া মনে করি।”
আরাফাতের মা হাসেন, কণ্ঠে প্রশ্রয়—
—”তাহলে এক কাজ করো, তুমি তোমার আম্মু-আব্বুকে সব খুলে বলো। আমি তোমাদের বিবাহের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।”
সাহিদা ভয়ে ভয়ে ওর আম্মুকে ফোন দেই আর
আস্তে আস্তে সব খুলে বলে দেয়।
—”মা, আমি একজনকে ভালোবাসি। ওর নাম আরাফাত।”
—”কে সে? কোথা থাকে?”
—”ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন, কিন্তু কাজ করে ফেনীতে। লেখালেখিও করে। খুব ভালো মানুষ মা…”
সাহিদার মা থমকে যায়।
—”এত দূরে মেয়ে দিয়ে দেবো না আমি। আর ছেলের কাজ কী?”
—”ছোট একটা কোম্পানিতে কাজ করে, পাশাপাশি লেখে। খুব দায়িত্ববান। মা… আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।”
মেয়ের চোখে জল দেখে মায়ের মন গলে যায়।
—”ঠিক আছে। তাহলে আমরা ওর বাড়ি গিয়ে একবার দেখে আসি।”
—
কয়েক দিন পর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
আরাফাতের বাড়িতে বসেছেন সাহিদার মা-বাবা।
চাচা-চাচি, আরাফাতের মা—সবাই আছে।
চায়ের কাপ হাতে সাহিদার মা জিজ্ঞেস করেন,
—”আপনার ছেলে এখন কী করে?”
আরাফাতের মা গর্ব করে বলেন,
—”ও ছোট একটা কোম্পানিতে কাজ করে ফেনীতে। পাশাপাশি খুব ভালো লিখে, ওর বইও প্রকাশিত হয়েছে।”
আরাফাত মাথা নিচু করে। সাহিদা চুপচাপ পাশে বসে।
শেষমেশ সাহিদার বাবা বলেন,
—”আমরা ওদের বিয়ে দিতে রাজি।”
মুখে যেন হাসির জোয়ার বয়ে যায়।
চাচা হেসে বলে,
—”তাহলে এবার আমরা গায়ে হলুদের প্রস্তুতি নিতে পারি!”
—
রাতে, সাহিদার মা বলে—
—”চলো মা, এখন বাড়ি ফিরে যাই। কাল ফেনী যেতে হবে।”
সাহিদা নিচু গলায় বলে,
—”আমি যাবো না মা। আমি মাহিয়ার সঙ্গে থেকে যাবো।”
মা একটু অবাক হলেও কিছু বলেন না।
কারণ মা বোঝে—মেয়েটা এবার ভালোবাসার ঘরে ঢুকেছে।
বিয়ের তারিখ ঠিক। বন্ধুবান্ধব জড়ো হচ্ছে চারদিকে।
আরাফাত যখন বাজার থেকে ফিরছে, তখন জাহিদ সামনে এসে বলে—
—”মামা, বিয়ে তো ঠিক হলো, কিন্তু আমাদের এ টিট (treat) কই?”
আরেক বন্ধু হাফিজ বলে,
—”তোর বিয়েতে না খাওয়ালে কাব্যিক ভাষায় গালি দিবো ভাই!”
আরাফাত হেসে বলে,
—”চলো, আজই গরুর মাংস আর পোলাও! খাওয়াবো, কিন্তু বিয়েতে কেউ যদি কবিতা পড়ে, বোনাস খাবার পাবে।”
সবাই হো হো করে হাসে।
—
সন্ধ্যায়, ছাদে সাহিদা আর আরাফাত।
—”সব ঠিকঠাক হয়ে গেল। বিশ্বাস করো, আমার এত আনন্দ কোনোদিন হয়নি…”
—”আমিও এমনটা কল্পনাও করিনি,” সাহিদা বলে, “তুমি আমার লেখা গল্পের চেয়ে বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছো বাস্তবে।”
আরাফাত ওর কপালে ঠোঁট রাখে।
আর বলে,
—”এখন থেকে শুরু হবে আমাদের
গল্প—বাস্তবের কাগজে লেখা, জানালার পাশে বসে নয়, পাশাপাশি বসে… চিরকাল।”
চলবে…