• শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
🖋️ সনেট: চুলকানির বাম আর নারীনাম🙆 মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌼 প্রভাষক: আরবি বলদিআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা। শিরোনাম: মানসিক শান্তি*  *রচনাঃ মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:২৩/১০/২০২৫ Master’s of Book – মাস্টার্স অব বুকস” আসছে আগামী ১৫ নভেম্বর। বাংলার কথা। শিরোনাম;বেসরকারি শিক্ষকের কান্না রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১৮/১০/২০২৫ 💐শিরোনাম: কৈডোলার স্মৃতিবিজড়িত সকাল ✍️লেখা: আপন ইতিহাস নির্ভর ছোট গল্প 🖋️রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:১৮/১০/২০২৫ কবিতাঃ- মান ইজ্জত সারা ✍️- রফিকুজ্জামান রফিক। Poem: The Watermark of the Heart. ✍️ Poet: Rownoka Afruz Sarkar গল্প: মায়ের হাতের ভাত, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:১৭/১০/২০২৫ কবিতাঃ প্রেম লেখিকাঃ জান্নাতুন_ফেরদৌস । দৈনিক বাংলার কথা। শিরোনাম:“শিক্ষক জাগরণের গান” রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১৫/১০/২০২৫

মহীয়সী মা আমিনা।✍️ মোঃ নজরুল ইসলাম (বিপুল)

Reporter Name / ২৮ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ইসলামের মহান পয়গম্বর, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জননী হযরত আমিনা বিনতে ওয়াহাব ছিলেন আরবের এক সম্ভ্রান্ত ও পুণ্যবতী নারী। তাঁর জীবনী সংক্ষিপ্ত হলেও তা ছিল গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং মহিমান্বিত, যাঁর গর্ভে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই ছিল এক নীরব আত্মত্যাগ ও ধৈর্যের মহাকাব্য।

বংশ পরিচয় ও প্রাথমিক জীবন: আভিজাত্য ও পবিত্রতা

হযরত আমিনার পুরো নাম ছিল আমিনা বিনতে ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ ইবনে যুহরা ইবনে কিলাব। তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের বনু যুহরা গোত্রের কন্যা। এই গোত্রটি তাদের আভিজাত্য, মর্যাদা এবং উচ্চ নৈতিকতার জন্য মক্কায় সুপরিচিত ছিল। তাঁর পিতা ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ ছিলেন বনু যুহরা গোত্রের সর্দার এবং অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। পিতার এই উচ্চ পদমর্যাদা এবং গোত্রের আভিজাত্য আমিনার পারিবারিক পটভূমিকে আরও সমৃদ্ধ করেছিল। হযরত আমিনা বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত সৎ, পুণ্যবতী, সচ্চরিত্রা এবং বিনয়ী নারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর নিষ্পাপ চরিত্র ও শালীনতা তাঁকে সকলের কাছে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছিল। তাঁর জীবনযাপন ছিল অত্যন্ত সাদাসিধে ও নির্ভার, যা তৎকালীন আরবের প্রথাগত আড়ম্বরপূর্ণ জীবন থেকে বেশ ভিন্ন ছিল। সম্ভবত, এই গুণাবলীই তাঁকে আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করেছিল।

আবদুল্লাহর সাথে শুভ বিবাহ: দুই আলোর মিলন

মক্কার শ্রেষ্ঠ বংশ কুরাইশের অন্যতম শাখা বনু হাশিমের সর্দার আবদুল মুত্তালিবের পুত্র আবদুল্লাহর সাথে হযরত আমিনার বিবাহ হয়। আবদুল্লাহ ছিলেন তাঁর পিতার সবচেয়ে প্রিয় এবং সুদর্শন পুত্র। তাঁর সৌন্দর্য, চরিত্র মাধুর্য এবং বিনয়ের কারণে তিনি ‘যবিহ’ (আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত) নামে পরিচিত ছিলেন, কারণ একবার আবদুল মুত্তালিব মানত করেছিলেন যে তাঁর দশ পুত্র হলে একজনকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করবেন এবং লটারিতে আবদুল্লাহর নাম আসে। যদিও পরে তাকে কোরবানি করা হয়নি, এই ঘটনা আবদুল্লাহর বিশেষ মর্যাদা নির্দেশ করে।

তাদের বিবাহ ছিল মক্কার এক আনন্দঘন ও স্মরণীয় ঘটনা। এই বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে দুটি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাপূর্ণ পরিবার একত্রিত হয়েছিল। এই মিলনকে কেবল দুটি পরিবারের সম্পর্ক হিসেবে দেখলে ভুল হবে; এটি ছিল আল্লাহরই এক পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে মানবজাতির জন্য এক মহান আবির্ভাবের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। বিয়ের পর আবদুল্লাহ তিন দিন হযরত আমিনার গৃহে অবস্থান করেন। এই স্বল্পকালীন দাম্পত্য জীবনে তাঁদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা ও বোঝাপড়া তৈরি হয়েছিল।

গর্ভধারণ ও স্বামীর অকাল ইন্তেকাল: এক নীরব শোকের অধ্যায়

বিবাহের মাত্র কিছুদিন পরই আবদুল্লাহকে ব্যবসার কাজে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হতে হয়। এই সময়ই হযরত আমিনা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে গর্ভে ধারণ করেন। এটি ছিল মানবজাতির জন্য এক নতুন ভোরের সূচনা, ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন। তবে তাঁর এই আনন্দময় মুহূর্তে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। আবদুল্লাহ সিরিয়া থেকে ফেরার পথে মদিনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই ইন্তেকাল করেন।

স্বামীর এই অকাল মৃত্যু আমিনার জীবনে এক গভীর শোকের ছায়া ফেলেছিল। গর্ভে সন্তান নিয়েই তিনি বিধবা হয়েছিলেন, যা ছিল তাঁর জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক এক পরীক্ষা। আবদুল্লাহর মৃত্যুর খবর যখন মক্কার বনু হাশিম গোত্রে পৌঁছায়, তখন আবদুল মুত্তালিব ও আমিনা উভয়েই শোকাহত হন। আমিনার জন্য এই শোক ছিল দ্বিগুণ – একদিকে স্বামীর বিচ্ছেদ, অন্যদিকে অনাগত সন্তানের পিতৃহারা হওয়ার বেদনা। এই সময়ে তিনি যে মানসিক শক্তি ও ধৈর্য ধারণ করেছিলেন, তা তাঁর দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বেরই প্রমাণ। সমাজের চোখে বিধবা হওয়া এবং একাকী সন্তানের জন্মদানের চ্যালেঞ্জ তিনি অত্যন্ত সাহসের সাথে মোকাবিলা করেছিলেন। এই শোকের মাঝেও তিনি বিশ্বাস করতেন যে আল্লাহ তাঁর এই দুঃখের বিনিময়ে তাঁকে এক বিশেষ নিয়ামত দান করবেন।

প্রিয় পুত্র মুহাম্মদ (সাঃ) জন্ম: আলোর আগমন

স্বামী হারানোর ব্যথা বুকে নিয়েই হযরত আমিনা অপেক্ষা করছিলেন তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য। হস্তি বাহিনীর ঘটনার ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর, রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে, সোমবার সুবহে সাদেকের সময় মক্কার পবিত্র ভূমিতে জন্ম হয় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। এই শিশুটিই পরবর্তীকালে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত ও হেদায়েতের আলোকবর্তিকা হয়েছিলেন।

তাঁর জন্মের সময় বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল বলে ইতিহাসে বর্ণিত আছে। যেমন:

* এক উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণ: আমিনার ঘর আলোকিত হয়ে গিয়েছিল। এই আলো সিরিয়ার প্রাসাদ পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল বলে জনশ্রুতি আছে।

* পারস্যের অগ্নি উপাসকদের আগুন নিভে যাওয়া: সহস্র বছর ধরে প্রজ্বলিত পারস্যের অগ্নি উপাসকদের পবিত্র আগুন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিভে গিয়েছিল।

* সা’বা হ্রদের শুকিয়ে যাওয়া: যা পারস্যে উপাসনার জন্য ব্যবহৃত হতো।

* রোমান ও পারস্য সম্রাটের সিংহাসন কম্পন: যা তাদের সাম্রাজ্যের পতনের ইঙ্গিত বহন করছিল।

* বিভিন্ন প্রতিমার পতন: কাবা শরীফের আশেপাশে স্থাপিত সকল প্রতিমা মুখ থুবড়ে পড়েছিল।

এই ঘটনাগুলো নির্দেশ করে যে, এই শিশুর আগমন ছিল সাধারণ কোনো ঘটনা নয়; বরং তা ছিল বিশ্ব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী মুহূর্ত। আমিনা বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর পুত্র এক অসাধারণ শিশু, যাঁর জন্য তিনি বহু দুঃখ ও শোক সহ্য করেছেন।

দুধ পান ও লালন-পালন: মায়ের বিচ্ছেদ, সন্তানের সুরক্ষা

আরবীয় প্রথা অনুযায়ী, মক্কার সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিশুরা মরুভূমির সুস্থ পরিবেশে লালিত-পালিত হওয়ার জন্য দুধমায়েদের কাছে পাঠানো হতো। এর কারণ ছিল মরুভূমির বিশুদ্ধ বাতাস শিশুদের স্বাস্থ্য ও ভাষাকে আরও উন্নত করবে বলে বিশ্বাস করা হতো। এই প্রথা অনুসরণ করে, হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বনু সাদ গোত্রের হালিমা সাদিয়ার কাছে দুধ পানের জন্য অর্পণ করা হয়। এই বিচ্ছেদ আমিনার জন্য নিঃসন্দেহে কষ্টকর ছিল, কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি এই ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।

হালিমা সাদিয়ার কাছে নবীজি (সা.) পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত অবস্থান করেন। এই সময়ে হালিমা ও তাঁর পরিবারের জীবনেও বহু বরকত ও অলৌকিকতা দেখা গিয়েছিল। পাঁচ বছর পর নবীজি (সা.) মায়ের কাছে ফিরে আসেন। এই সময়টুকু আমিনা তাঁর পুত্রকে কাছে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর পুত্রের মধ্যে গভীর প্রজ্ঞা, বিনয় এবং অনন্য গুণাবলী লক্ষ্য করেন।

ইন্তেকাল: আরেক শোকের আঘাত

পুত্রকে ফিরে পাওয়ার পর হযরত আমিনা তাঁকে নিয়ে স্বামীর কবর জিয়ারত এবং মদিনায় তাঁর আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এটি ছিল আমিনার শেষ মদিনা সফর। মদিনায় এক মাস অবস্থানের পর মক্কার পথে ফেরার সময়, আল-আবওয়া নামক স্থানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তখন হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর।

মায়ের ইন্তেকাল ছিল শিশুপুত্র মুহাম্মদের জন্য এক বিশাল শোক। তিনি তাঁর জীবনের অল্প বয়সেই পিতা ও মাতা উভয়কে হারালেন, যা তাঁর জীবনে এক গভীর ছাপ ফেলেছিল। বলা হয়, নবীজি (সা.) পরবর্তী জীবনে যখনই আল-আবওয়ার পাশ দিয়ে যেতেন, তিনি তাঁর মায়ের কবরের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দোয়া করতেন। আমিনার কবর আজও আল-আবওয়াতেই বিদ্যমান।

স্মরণীয় অধ্যায় যা প্রায়শই আলোচনার বাইরে থাকে

হযরত আমিনার জীবনের যে দিকটি প্রায়শই আলোচনার বাইরে থাকে, তা হলো তাঁর একাকীত্ব এবং মানসিক শক্তি। তিনি ছিলেন একাকী, বিধবা মা, যিনি সমাজে প্রচলিত সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তাঁর জীবনের এই দিকটি নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি তাঁর সীমিত সম্পদ এবং সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই তাঁর সন্তানের দেখভাল করেছেন, যদিও শেষ পর্যন্ত তা তাঁর জন্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

তাঁর জীবন এক গভীর শিক্ষাও দেয় যে, আল্লাহর পরিকল্পনা মানবীয় বিচারবুদ্ধির উর্ধ্বে। এক বিধবা মায়ের গর্ভে যে শিশু জন্ম নিয়েছিলেন, তিনি পরবর্তীতে পৃথিবীর ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। আমিনার জীবনের এই নীরব আত্মত্যাগ, ধৈর্য এবং বিশ্বাস তাকে ইসলামের ইতিহাসে এক মহীয়সী নারী হিসেবে অমর করে রেখেছে। তাঁর পবিত্রতা ও আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক চিরন্তন অনুপ্রেরণার উৎস।

~@বিপুল……


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন