গল্পের নাম: “কালো মেয়ের আলো”
(একটি বাস্তবধর্মী, অনুপ্রেরণামূলক গল্প)
✓প্রথম অধ্যায়: অন্ধকারে আলো
আবুল খায়ের—একজন সাধারণ গ্রামের যুবক। তিনি শিক্ষিত ছিলেন শিক্ষা অর্জনের সুবাদে তার জীবনে স্থিতি আসে একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জাগির থাকার সুযোগ। গৃহকর্তা ছিলেন উদার ও স্নেহময়, তিনি আবুল খায়েরকে শুধু জায়গির নয়, পুত্রতুল্য মনে করতেন। সেই ঘরেই আবুল খায়ের পেলেন স্নেহ, ভালোবাসা আর আশ্রয়।
আবুল খায়েরের যে বাড়িতে জাগির ছিলেন তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। কিন্তু তিনি একজন আলেমে হওয়ার কারণে আবুল খায়ের কে নিজের সন্তানের মত ভালবাসতেন। আবুল খায়েরের জায়গীর দাতা একদিন তাকে বিবাহ করালেন।
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে তার জীবনে স্ত্রী হিসেবে আসে একজন নারী—একটি কালো মেয়ে। গায়ের রং ছিল কুটকুটে কালো, দেখতে ছিল অপ্রচলিত, সমাজের চোখে অচেনা রূপ। কিন্তু হৃদয়ে ছিল স্বচ্ছ নদীর মতো কোমলতা। আবুল খায়েরের পৃষ্ঠপোষক তাকে বিয়ে করান এই মেয়েটিকে। যদিও আবুল খায়ের তার স্ত্রীর রূপে আকৃষ্ট ছিলেন না, তবু সেই বিবাহে এক আস্থাহীন সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
তবুও স্ত্রীটির প্রতি জায়গীর বলতেন,
“জাতের মেয়ে কালো ভালো, নদীর জল ঘোলাও ভালো।”
দ্বিতীয় অধ্যায়: আলোর জন্ম
দাম্পত্য জীবনে আলোর দ্যুতি আনল এক ফুটফুটে শিশু—আব্দুল্লাহ। সন্তানের জন্মের পরই আবুল খায়ের বিদেশে পাড়ি জমান মালিকের সহায়তায়, নতুন জীবনের খোঁজে। পেছনে ফেলে গেলেন স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে।
কালো সেই মা, যার রং ছিল সমাজের চোখে তুচ্ছ, তার বুকের দুধ আর অদম্য সাহসে বড় করে তুললেন আব্দুল্লাহকে। প্রথমে মাদ্রাসায় ভর্তি করালেন। ছেলে পড়াশোনায় মেধার সাক্ষর রাখতে লাগল। দাখিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে সে কলেজ তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। সেখানেও সে দেখাল প্রতিভা, অর্জন করল ডিগ্রি আর মানুষের হৃদয়।
পড়াশোনার শেষে আব্দুল্লাহ গ্রামে ফিরে চালু করল একটি এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। পাশাপাশি খুলল একটি দোকান। কর্মচারী রাখল, নিজেও নিয়মিত দেখাশোনা করত। সুযোগ পেলেই কন্টেন্ট তৈরি করত ইসলামি শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে। সমাজে নিজের জন্য এক পরিচিতি তৈরি করল—”মেধাবী, বিশ্বাসী ও সৎ যুবক” হিসেবে।
তৃতীয় অধ্যায়: ফিরে দেখা
এই সময়ে আবুল খায়ের ফিরে এলেন দেশে। তার অন্য ছেলে, যে তখন ছোট, তাকেও মাদ্রাসায় ভর্তি করালেন। ছেলে আবারও আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাশ করে সুযোগ পেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার।
আবুল খায়ের আশ্চর্য হয়ে দেখলেন—যে কালো স্ত্রীকে তিনি ভালোবাসতে পারেননি, তাকেই আল্লাহ দিয়েছেন এমন সন্তান, যারা সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তখন তিনি উপলব্ধি করলেন,
“রূপে নয়, গুণেই মানুষ বড় হয়।”
চতুর্থ অধ্যায়: আলো ছড়ানোর কারখানা
আবুল খায়ের ভাবলেন, এই সন্তানদের ভবিষ্যৎ ও সমাজের কল্যাণের জন্য তিনি কিছু করবেন। সিদ্ধান্ত নিলেন একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি স্থাপন করার। তবে সেটি হবে সম্পূর্ণ ইসলামি ভাবধারায় পরিচালিত।
✓মেয়েরা কাজ করবে একদিকের কক্ষে,
✓ছেলেরা কাজ করবে আলাদা স্থানে।
✓সালাতের সময় কাজ বন্ধ থাকবে,
প্রতিদিন ইসলামি আলোচনা ও পরামর্শ সেশন থাকবে।
এই উদ্যোগে গ্রামে তৈরি হলো কর্মসংস্থানের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত। আলেম সমাজে আবুল খায়ের হলেন পরিচিত একজন দানশীল, ধার্মিক এবং সফল মানুষ হিসেবে।
🪶উপদেশ ✓
কালো সেই মেয়েটি—যার রূপ ছিল না সমাজের চোখে, যার মর্যাদা ছিল না শ্বশুরকুলে, তিনিই জন্ম দিয়েছিলেন এমন সন্তান, যাদের নৈতিকতা, শিক্ষা ও অবদান আলোকিত করল গোটা সমাজ।
আবুল খায়ের শেষ জীবনে চোখে জল এনে বললেন—
“সৌন্দর্য কখনো গায়ের রঙে নয়, সৌন্দর্য হৃদয়ে।”
তিনি বলেন:
“যে স্ত্রীকে আমি অবহেলা করেছি, আজ তাঁর সন্তানদের মাধ্যমে আমি সমাজে সম্মানিত। আল্লাহ মানুষের রূপে নয়, তার আমলে বিচার করেন।”
✓শেষ উপদেশ:
“রূপ নিয়ে নয়, গুণ নিয়ে গর্ব করো।
ত্যাগী মায়েদের ভালোবাসা কখনো বৃথা যায় না।
সন্তানকে দাও দ্বীন ও দুনিয়ার শিক্ষা,
তবেই তোমার জীবন হবে সফল ও পূর্ণ।”
📖 সাক্ষ্য:
এটি কেবল একটি গল্প নয়—
এটি মা, শিক্ষা ও ঈমানদারির গাঁথা।
এক কালো নারীর চোখের জলে ভেজা সত্য,
যেখানে আলো জন্ম নিয়েছে অন্ধকারকে ছাপিয়ে।
✒️রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺
🪶প্রভাষক:আরবি বলদিআটা ফাজিল মাদ্রাসা ধনবাড়ী,টাঙ্গাইল জেলা।
তারিখ:১৮/০৬/২০২৫