• মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কবিতা: সময়মতো বিবাহ  রচনাঃমাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১/১১/২৩ 🖋️ গল্প: “আলেয়ার আফসোস আর সলিম উল্লাহর বোধোদয়”। রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 মজার গল্প : বাঁশ খানের ন্যায়ের বাঁশ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম ছোট গল্প: ক্ষুদ্র প্রাণীর শক্তি রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  গল্প: “ছাগলের বাচ্চার হক” রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  💐গল্প: ভালোবাসার ঘোষণা, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 🍌বাংলাদেশের মাজার সংস্কৃতি ও গাজার বাজার: একটি বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২/০৪/২০২৩ শিরোনাম:স্বামীর পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও দাবি দাওয়া আদায় প্রসঙ্গে।, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম গল্প: মুরগি ও শিয়ালের চালাকি, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম। 🖋️স্বামীকে অপমান ও তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করার পরিণাম: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:১/১১/২০২৫

একটি গ্রামীণ জীবনের গল্প ,(উপন্যাস) সম্পূর্ণ একত্রে। রচনায় মাওলানা মোঃ:ফরিদুল ইসলাম 🌺

Reporter Name / ১৩৮ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

✓একটি গ্রামীণ জীবনের গল্প
অধ্যায় ১: রুস্তম ফকিরের উত্তরাধিকার
গ্রামের শেষ প্রান্তে, বাঁশঝাড় আর শিয়াল-কুকুরের ডাক পেরিয়ে একটা কুঁড়েঘর। সেখানে বাস করতেন রুস্তম উদ্দিন শেখ। বংশে শেখ পরিবারের হলেও দরিদ্রতার কারণে সবাই তাকে “রুস্তম ফকির” বলে ডাকত। একসময় ধর্মভীরু, দারিদ্র্যপীড়িত হলেও গর্বিত মানুষ ছিলেন তিনি। জীবনের ধারাপাত বুঝে উঠার আগেই তিনি করেছিলেন একাধিক বিয়ে। প্রতিটি ঘরেই ক’জন সন্তান—কিন্তু কোথাও শান্তি নেই, কোথাও স্থায়িত্ব নেই।
সেই ঘরেরই এক সন্তান ছিল সমীর উদ্দিন।

অধ্যায় ২: আশাবাদী সমীর
সমীর উদ্দিন দরিদ্র ছিল, কিন্তু পরিশ্রমী। পিতার মতো নয়, সে চেয়েছিল স্থির এক জীবন। পতার নিজের কোন জমিজমা ছিল না। নিজের হাতে পরের বাড়িতে কৃষি কাজ করে করে সে গড়েছিল জীবন। একদিন, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, পাশের গ্রামের রেখাও সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে।
সন্তান আসে—এরশাদ উদ্দিন। ফুটফুটে ছেলে। তখনই হয়তো সমীর ভাবেনি, এই ছোট্ট প্রাণটিই একদিন হবে তার সবচেয়ে বড় অনুশোচনার কারণ।

✓অধ্যায় ৩: ভাঙনের শব্দ
দাম্পত্য জীবনের প্রথম কয়েকটি বছর কেটে যায় সাদামাটা সুখের মাঝে। কিন্তু দরিদ্র জীবনে যেখানে প্রতিদিন লড়াই, সেখানে ভালোবাসাও যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অতি সামান্য বিষয়ে রেখার সঙ্গে কলহ শুরু হয়।
সাংসারিক ছোট ছোট বিষয় নিয়ে চলে ঝগড়াঝাটি । তরকারিতে নুন কম পড়লে কিংবা কাপড় না শুকালে—সব কিছুতেই তর্ক। তর্ক থেকে ধৈর্যচ্যুতি, আর একদিন রাগের মাথায় সমির উদ্দিন রেখাকে তালাক দেন।
রেখা সন্তান রেখে চলে যায় বাবার বাড়ি।
সমীর উদ্দিন বুঝতে পারেনি তখন, যে তালাকের মাধ্যমে সে শুধু স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেনি, ছিঁড়ে দিয়েছে তার সন্তানের হৃদয়।

✓অধ্যায় ৪: শিকড়হীন এরশাদ
এরশাদের দেখভালের দায়িত্ব নেয় সমীরের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী। কিন্তু মা তো আর অন্য কেউ হতে পারে না! মায়ের বুকের দুধ না পেলে যেমন শিশু দুর্বল হয়, তেমনি মমতার অভাব শিশুকে করে হৃদয়হীন।
এরশাদ প্রথমে স্কুলে যেত না, পরে ছেলেবন্ধুদের পাল্লায় পড়ে শুরু করে সিগারেট টানা, তারপর বখাটে জীবন।
পড়ালেখা না করতে পেরে এরশাদ অবশেষে পাড়ি জমান ঢাকা ঢাকাতে গিয়ে টোকাইয়ের কাজ অবশেষে সিএনজি চালানো শুরু করেন।
সমীর উদ্দিন দূর থেকে দেখতে থাকেন ছেলের পতন। কিন্তু কিছু করার শক্তি তার ছিল না। সংসারে তখন নতুন বউ, নতুন সন্তান। পুরনো দুঃখগুলো যেন চাপা পড়ে যায় নতুন ক্লান্তির নিচে।

✓অধ্যায় ৫: দ্বিতীয় সংসার, দ্বিতীয় দায়
দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা ছিল শান্ত স্বভাবের, কিন্তু তেমন শিক্ষিতা নয়। সংসারে অভাব, কাজের চাপ, আর চিৎকার-চেঁচামেচি যেন তার প্রতিদিনের সঙ্গী। তাদের ঘরে দুইটি সন্তান জন্ম নিলেও, তারাও পেল না আদর্শ পারিবারিক জীবন।
বড় সন্তানটি গার্মেন্টসে কাজ নেয় ছোট বয়সেই। মেয়েটি সেলাই শেখে। ছোট ছেলে আশিক স্কুলে ভর্তি হয়, তবে অনেক কষ্টে।
সমীর উদ্দিন তখনও দিনমজুর। মজুরি কমে গেছে, বয়স বেড়ে গেছে। চোখে মোটা চশমা, মুখে অর্ধেক দাঁত, আর হৃদয়ে এক মহাসমুদ্র পস্তানো।

✓অধ্যায় ৬: আলোর রেখা
বছরের পর বছর কেটে যায়। এরশাদ ঘর ছাড়ে। সবাই ভাবে—সে হয়তো অপরাধী হয়ে শহরে গা-ঢাকা দিয়েছে।
কিন্তু না, শহরের গলির ভেতরে সে সিএনজি চালাতে শিখেছে। প্রথমে অন্যের গাড়িতে, পরে কিছু টাকা জমিয়ে নিজের একটা সিএনজি কিনে নেয়। লেখাপড়া না থাকলেও জীবন তাকে শিখিয়েছে ধৈর্য, নিয়ন্ত্রণ আর সৎ পথের মূল্য।
এরশাদ এখন চুপচাপ, কিন্তু ভেতরে অনেক কিছু বুঝে। মাঝে মাঝে গ্রামে আসে। ছোট ভাইকে স্কুলে যাবার টাকা দেয়, বোনকে সেলাই মেশিন কিনে দেয়।

একদিন সে বাবার কুঁড়েঘরে ফিরে বলে—
“বাবা, দোষ তোমার একার ছিল না। আমরা সবাই ভুল করেছিলাম। কিন্তু এখন আমি চাই, আমার ছোট ভাইটা যেন আমার মতো না হয়।”
সমীর উদ্দিন চোখে পানি আনেন না, কিন্তু মাথা নিচু করে শুধু বলেন,
“আমি তোমাদের ভালোবাসতে পারিনি সময়মতো, এটাই আমার অপরাধ।”

✓অধ্যায় ৭: ফিরে দেখা
সন্ধ্যায় সবাই বসে থাকে উঠোনে। বাতাসে ধানের গন্ধ, চুলায় হাড়িতে ফুটছে ডাল। আশিক খাতায় অঙ্কের হিসাব করছে, আর এরশাদ পাশ থেকে শুধায়,
“দেখি তো, কয় যোগ কয় হয়?”
বোন হাসে, মা হালকা গলায় গান ধরে। আর বৃদ্ধ সমীর উদ্দিন দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
“হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাশীল। তুমি পরিবার ফেরত দিয়েছ। আমি ভুল করেছি, তবু তুমি রহম করেছ।”

✓উপসংহার:
পরিবার কখনোই শুধু নারী বা পুরুষের বিষয় নয়—এটা সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের মূল ভিত্তি।
তালাক যদি হয় হঠকারিতা, তবে তার প্রভাব পড়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মে।
তবুও যদি কেউ ফিরে আসে সঠিক পথে, তবে সমাজের দায় হলো তাকে আশ্রয় দেওয়া, নয়তো সেই সমাজই বর্বরতায় ডুবে যাবে।
কারণ সন্তানদের জন্য, একটি ভাঙা সংসারেও তৈরি হতে পারে একটি নতুন ভোর।

এই গল্পটি আমাদের গ্রামের গল্প সত্যি ঘটনা অবলম্বনে রচিত।

শেষ পর্যন্ত।

রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌼

আরবি প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল মাদ্রাসা 🌹

ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন