✉️চিঠির পাতায় লুকানো প্রবাস জীবনের গল্প💸
অনেকদিন আগের কথা। বাংলাদেশের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে সন্ধ্যার পর ডাকপিয়নের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকত কেউ না কেউ। সেই সময় মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ছিল না। বিদেশ গিয়ে রোজগারের আশায় বহু তরুণ ছুটে গিয়েছিল সৌদি আরব, মালয়েশিয়া কিংবা দুবাইয়ের মতো দেশগুলোতে। কেউ কাজ পেয়ে রোজগার করত, কেউ আবার কাজ না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে পথে ঘুরত।
তারা যখন বিদেশে থাকত, তখন দেশে থাকা মা, বাবা, স্ত্রী কিংবা সন্তানদের খোঁজ নেওয়ার একমাত্র ভরসা ছিল সেই ‘চিঠি’। প্রতিটি চিঠি যেন ছিল অশ্রুভেজা আবেগের এক দলিল।
বেলাল ছিল এমনই এক তরুণ, যে দালালের কথা শুনে মালয়েশিয়ায় যায়। ভিসা পাওয়ার কথা ছিল কাজের, কিন্তু গিয়ে দেখে কিছুই ঠিক নেই। দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছে, খোলা আকাশের নিচে রাত্রি কাটিয়েছে। কাজ জোটাতে পেরেছে অনেক পরে, কিন্তু মায়ের চিঠি পড়ে চোখে জল এসে যেত। মা লিখতেন— “বাবারে, তুই ভালো থাকিস, খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করিস।” আর জাহিদ লিখত— “মা, আমি ভালো আছি, শুধু তোদের খুব মনে পড়ে।”
এমন অনেকেই ছিল যারা চিঠিতে লিখত— “বউ, তোকে খুব মনে পড়ে, ছেলেকে আমার হয়ে আদর দিস।” এই চিঠিগুলো পড়ে দেশে থাকা প্রিয়জনেরা অঝোরে কাঁদত। চিঠির কালি মুছে যেত চোখের জলে।
সব প্রবাসীর জীবন একরকম হয় না। কেউ কেউ ভাগ্যবান ছিল— ভালো কাজ পেয়েছে, অর্থ পাঠাতে পেরেছে। আবার কেউ কেউ একবেলা খেয়ে, এক বেলা না খেয়ে জীবন চালিয়েছে। কিন্তু প্রিয়জনের খোঁজ নিত সেই একটুকরো চিঠিতে ভর করে।
আজ মোবাইল ফোন, ভিডিও কলের যুগে সেই কষ্ট আর অনুভূতির গভীরতা নেই। তবুও, পুরনো সেই চিঠির পাতায় লেখা কান্না, বেদনা আর ভালোবাসার গল্পগুলো আজো মানুষের হৃদয়ে অমলিন হয়ে আছে।
🗞️রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺
🖊️তারিখ:১৯/০৬/২০২৫
Gmail: islamiclecturer7@gmail.com