• শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
🖋️ সনেট: চুলকানির বাম আর নারীনাম🙆 মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌼 প্রভাষক: আরবি বলদিআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা। শিরোনাম: মানসিক শান্তি*  *রচনাঃ মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:২৩/১০/২০২৫ Master’s of Book – মাস্টার্স অব বুকস” আসছে আগামী ১৫ নভেম্বর। বাংলার কথা। শিরোনাম;বেসরকারি শিক্ষকের কান্না রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১৮/১০/২০২৫ 💐শিরোনাম: কৈডোলার স্মৃতিবিজড়িত সকাল ✍️লেখা: আপন ইতিহাস নির্ভর ছোট গল্প 🖋️রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:১৮/১০/২০২৫ কবিতাঃ- মান ইজ্জত সারা ✍️- রফিকুজ্জামান রফিক। Poem: The Watermark of the Heart. ✍️ Poet: Rownoka Afruz Sarkar গল্প: মায়ের হাতের ভাত, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:১৭/১০/২০২৫ কবিতাঃ প্রেম লেখিকাঃ জান্নাতুন_ফেরদৌস । দৈনিক বাংলার কথা। শিরোনাম:“শিক্ষক জাগরণের গান” রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১৫/১০/২০২৫

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আলী ইবনে হুসাইন) ✍️ মোঃ নজরুল ইসলাম (বিপুল)

মোঃ নজরুল ইসলাম বিপুল / ১৪৬ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) যার পুরো নাম আলী ইবনে হুসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব, ছিলেন ইসলামের মহান নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত হোসাইন (রাযিআল্লাহু আনহু) এর পুত্র। তিনি ছিলেন নবী পরিবারের চতুর্থ ইমাম এবং কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার একমাত্র পুরুষ উত্তরসূরী যিনি বেঁচে ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই ইমাম হোসাইন (রাযিআল্লাহু আনহু) এর বংশধারা পৃথিবীতে টিকে থাকে।

১. জন্ম ও শৈশব:

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ৩৮ হিজরীর ৫ শাবান (কিছু মতে ১৫ জুমাদিউল আউয়াল ৩৬ হিজরী) মদিনা মুনাওয়ারায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন হযরত ইমাম হুসাইন (রাযিআল্লাহু আনহু) এবং মাতা ছিলেন পারস্যের শেষ সাসানীয় সম্রাট ইয়াজদেগার্দ তৃতীয়-এর কন্যা শাহর বানু। তাঁর জন্ম সংবাদে হযরত আলী (রা.) মহান আল্লাহর কাছে সিজদা করে শুকরিয়া আদায় করেন এবং এই নবজাতকের নাম রাখেন ‘আলী’। পরবর্তীতে ইবাদত-বন্দেগিতে তাঁর গভীর নিবেদনের কারণে তিনি ‘যায়নুল আবেদীন’ (ইবাদতকারীদের সৌন্দর্য) এবং ‘সাজ্জাদ’ (অধিক সিজদাকারী) উপাধিতে ভূষিত হন।

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) তাঁর শৈশবের প্রথম কয়েকটি বছর পিতামহ হযরত আলী (রা.) এর স্নেহক্রোড়ে এবং পরবর্তীকালে চাচা ইমাম হাসান (আ.) ও পিতা ইমাম হুসাইন (আ.) এর তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন। তাঁদের কাছ থেকেই তিনি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা লাভ করেন এবং নিজেকে আল্লাহর প্রতি নিবেদিত একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে গড়ে তোলেন। শৈশব থেকেই তিনি আহলে বাইত ও তাঁদের অনুসারীদের উপর বনু উমাইয়্যার অত্যাচার-নির্যাতন প্রত্যক্ষ করেন এবং ৫০ হিজরীতে চাচা ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাতের ব্যথাও তাঁকে বহন করতে হয়।

২. কারবালার ঘটনা ও ভূমিকা:

৬১ হিজরীর কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ছিল ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এর জীবনের এক কঠিনতম পরীক্ষা। এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর পিতা ইমাম হুসাইন (আ.), চাচা হযরত আব্বাস (আ.), ভাই হযরত আলী আকবর ও আলী আসগরসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন এবং ইমাম বংশের অনুসারীদের শাহাদাত প্রত্যক্ষ করেন। অসুস্থতার কারণে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি, আর এই অসুস্থতাই তাঁকে শাহাদাত থেকে রক্ষা করে। শাহাদাতের পূর্বে ইমাম হুসাইন (আ.) যখন নিজ তাঁবুতে পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে শেষ বিদায় নিতে আসেন, তখন হযরত যায়নুল আবেদীন (আ.) রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন। এই অবস্থাতেই ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁকে পরবর্তী ইমাম হিসাবে স্থলাভিষিক্ত করে যান।

কারবালার ঘটনার পর ইয়াযীদের বর্বর বাহিনীর হাতে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) লাঞ্ছনার শিকার ও বন্দি হন। নারীদের সাথে তাঁকেও বন্দি করে পায়ে ভারী শিকল পরিয়ে খালি পায়ে কারবালা থেকে কুফা ও দামেশক পর্যন্ত হেঁটে নিয়ে যাওয়া হয়। ইয়াযীদের রাজপ্রাসাদে হযরত যায়নাব (সা.আ.) ও হযরত যায়নুল আবেদীন (আ.) এর বলিষ্ঠ ভাষণ জনমতকে ইয়াযীদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে, যার ফলে ইয়াযীদ তাঁদেরকে সসম্মানে মদিনায় পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

৩. ইমামত ও কর্মজীবন:

মদিনায় ফিরেও ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) চরম নির্যাতনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করেন। তাঁর চলাফেরার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় এবং তাঁর সাথে কারো সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি দ্বীনের প্রচার ও প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর প্রধান কাজ ছিল:

* বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষার প্রচার: উমাইয়া শাসনামলে বিকৃত ইসলামী আকিদা ও প্রথার বিরুদ্ধে তিনি আহলে বাইতের বিশুদ্ধ হাদীস ও সুন্নাহ প্রচার করতেন। বনু উমাইয়্যা যেসব জাহেলী রীতির পুনঃপ্রচলন ঘটাতে চাচ্ছিল, সেগুলোকে তিনি প্রকাশ করে দেন।

* কারবালার ঘটনার স্মরণ: কারবালার ঘটনা ছিল ইয়াযীদ ও বনু উমাইয়্যার চরিত্র উন্মোচনকারী এবং অত্যাচারীদের মোকাবিলায় দাঁড়ানোর ভিত্তি। ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) কারবালার ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করতেন এবং ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের স্মরণে আজীবন ক্রন্দন করতেন, যা কারবালার স্মৃতিকে জীবন্ত রাখতে সাহায্য করে।

* নৈতিক ও আধ্যাত্মিক পুনর্গঠন: তিনি মানুষের মাঝে উন্নত নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে কাজ করেন। তাঁর জীবন ছিল ইবাদত, ধৈর্য ও ত্যাগের এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তিনি রাতের আঁধারে মদিনার অভাবী ও দরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে আটা ও রুটি পৌঁছে দিতেন, যা তাঁর পিতামহ হযরত আলী (রা.) এর দৃষ্টান্তের প্রতিধ্বনি।

* জ্ঞানচর্চা ও শিষ্যদের প্রশিক্ষণ: উমাইয়া শাসনের রাজনৈতিক গোলযোগের মধ্যেও তিনি জ্ঞানচর্চা ও শিষ্যদের প্রশিক্ষণে মনোযোগ দেন। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে অনেক বড় বড় আলেম ও মুহাদ্দিস তৈরি হয়েছিলেন, যাদের মাধ্যমে ইসলামের জ্ঞান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যদিও তাঁর সময়ে প্রকাশ্যে শিক্ষকতা করা কঠিন ছিল, তবুও তিনি দোয়ার মাধ্যমে এবং পরোক্ষভাবে তাঁর জ্ঞান বিতরণ করতেন।

৪. প্রধান গ্রন্থ ও বাণী:

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো ‘সহীফায়ে সাজ্জাদিয়া’। এটি এক অনবদ্য দোয়ার সংকলন, যা ‘যাবুরে আলে মুহাম্মাদ’ বা ‘মহানবী (সা.) এর বংশধরের যাবুর’ নামেও পরিচিত। এতে মোট ৫৪টি দোয়া রয়েছে, যা গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞান, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ন্যায়বিচার, মানবতাবোধ এবং উন্নত নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান করে। এই গ্রন্থটি ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের জন্য এক পরম আধ্যাত্মিক গুপ্তধনের ভান্ডার হিসেবে বিবেচিত।

তাঁর কিছু বিখ্যাত উক্তি ও উপদেশ:

* “ক্ষমা প্রদর্শন করো, সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।” (এটি একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেছেন, যখন কেউ তাঁকে গালি দিয়েছিল, তখন তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন এবং উপহার দেন।)

* “নামাজে আমি কার সামনে দাঁড়াই এবং কার সাথে কথা বলি, তোমরা কি জান?” (নামাজের প্রতি তাঁর গভীর একাগ্রতা বোঝাতে বলেছেন)।

৫. পরিবার ও বংশধর:

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এর ১৫ জন সন্তান ছিলেন, যার মধ্যে ১০ জন ছেলে এবং ৫ জন মেয়ে। তাঁর পুত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইমাম মুহাম্মদ আল-বাকির (আ.), যিনি পরবর্তীকালে ইসলামের পঞ্চম ইমাম হন। ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এর মাধ্যমেই হযরত হোসাইন (রাযিআল্লাহু আনহু) এর বংশধারা টিকে থাকে এবং তাঁর বংশধররা ‘সৈয়দ’ নামে পরিচিত হয়ে থাকেন।

৬. মৃত্যু:

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ৯৫ হিজরীর ২৫শে মুহররম (কিছু মতে ১২ই মুহররম) মদিনা মুনাওয়ারায় শাহাদাত লাভ করেন। ধারণা করা হয়, উমাইয়া শাসক প্রথম আল-ওয়ালিদের নির্দেশে তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে শহীদ করা হয়েছিল। মদিনা নগরীর জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে তাঁর পবিত্র রওজা মোবারক রয়েছে।

উপসংহার:

ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ছিলেন ধৈর্য, জ্ঞান, ইবাদত ও ত্যাগের এক মূর্ত প্রতীক। কারবালার মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরেও তিনি দৃঢ়তা ও ধৈর্যের সাথে ইসলামের পতাকা উড্ডীন রাখেন। তাঁর ‘সহীফায়ে সাজ্জাদিয়া’ আজও মুসলিম বিশ্বের জন্য আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার এক অমূল্য সম্পদ। তিনি শুধু আহলে বাইতের বংশধরই ছিলেন না, বরং তাঁর কর্মকাণ্ড ও শিক্ষার মাধ্যমে তিনি ইসলামী সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

তথ্যসূত্র (রেফারেন্স):

* উইকিপিডিয়া (বাংলা): “আলি ইবনে হুসাইন জয়নুল আবেদিন”

* The Fajr (Official Website): “ইমাম আলী ইবনুল হোসাইন যায়নুল আবেদীন (আ.)”

* ইমাম হুসাইন (আ.)-এর রক্তরঞ্জিত শাহাদাত : প্রেক্ষিত, উদ্দেশ্য ও প্রভাব (১ম অংশ) (erfan.ir)

* জুুগান্তর (Jugantor): “ইহলৌকিক ও পারলৌকিক গুপ্তধনের ভাণ্ডার – সহীফায়ে সাজ্জাদিয়া”

* PBS Book Shop: “সহীফায়ে সাজ্জাদিয়া : হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন”

* [সন্দেহজনক লিঙ্ক সরানো হয়েছে]: “হযরত ইমাম জয়নাল আবেদীন : আল ছহীফাহ্ আল সাজ্জাদীয়াহ্”

* dawateislami.net: “কারবালা ওয়ালাদের উদারতাপূর্ণ আচরণ” (ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এর ধৈর্য সংক্রান্ত ঘটনার উল্লেখ)

* Iran Mirror: “হযরত যায়নাব বিনতে আলী (আ.)” (ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) ও কারবালার ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে)

দ্রষ্টব্য: কিছু ঐতিহাসিক বিবরণ ও তথ্যে তারিখ বা ঘটনার বিশদে সামান্য ভিন্নতা থাকতে পারে। এখানে প্রদত্ত তথ্যগুলি সর্বাধিক প্রচলিত ও নির্ভরযোগ্য উৎসসমূহের ভিত্তিতে সংকলিত।

~@বিপুল….


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন