
✓গল্প: মোটা হার ও কুনোব্যাঙের কান্ডকারখানা
🖋️রচনায় -মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺
তারিখ:২২/০৬/২০২৫
একদা এক গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরু খাল। খালের ধারে ছিল একটা ছোট কচুর খেত—সবুজে ঘেরা, ঠান্ডা হাওয়ায় দুলতো পাতা। সেই কচুর খেতে বাস করত এক মোটা হার। না, মানুষ নয়! একটা চটপটে, দাপুটে খচ্চর! গ্রামের লোকেরা তাকে "মোটা হার" বলেই ডাকত, কারণ সে ছিল বড়ই মোটা আর চঞ্চল।
মোটা হারটার ছিল খের খাওয়ার ভয়ানক নেশা। যেই না কেউ খেত ঘরে খের রাখত, অমনি সে ছুটে গিয়ে তা খেয়ে ফেলত। একদিন এমন খের খেতে গিয়ে সে মাটির উপর পড়ে গিয়ে পায়ে ঘাতা পেল—একেবারে খুরের নিচে কেটে গেল চামড়া! ঘাত, ঘাতি হয়ে রক্ত পড়তে লাগল।
চাষারা তাই তার পায়ে দিল চুনা। কড়া দগদগে চুন! মোটা হার ব্যথায় ছটফট করতে করতে এক লাথি মারল—চুনার হাঁড়ি উড়ে গিয়ে পড়ল গাছের এক ফাঁপা খুরলে।
এদিকে সেই খুরলের কাছে বসে ছিল এক নিঃসঙ্গ কুনোব্যাঙ। গ্রীষ্মের খরতাপে সে গর্ত খুঁজছিল। খুরলের পাশে বসে সে দুই ঠ্যাং তুলে ধ্যান করছিল। হঠাৎ চুনা এসে পড়ল তার কাছে! আঁতকে উঠে ব্যাঙটা একটা লাফে পাশের পাখির বাসায় উঠে গেল।
এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই খুরলের ধারে এল এক চাষা—তার সাথে একটা মোটা গাই। গাইটা গর্ভবতী ছিল। মোটা হার যখন ডাক দিল, গাইটাও "হুম্বা" করে সাড়া দিল। কিছুক্ষণ পরেই গাই জন্ম দিল দুইটি সুন্দর বাছুর।
গ্রামের সবাই এসে বাছুর দুটি দেখে আহ্লাদে আটখানা! কেউ বলে, "ওরে, কি সুন্দর চোখ!" কেউ আবার আদর করে বলে, "এই যে ছোট্ট গাই, দুধ দিবি তো?"
তবে সমস্যা বাঁধল অন্যখানে।
বাছুরদুটি কৌতূহলী হয়ে খেলে খেলে চলে গেল খুরলের দিকে। চুনে ভেজা সেই খুরলের মাটিতে গিয়ে তারা "কেত কেত" করে খোঁচাতে লাগল। তাদের খোঁচায় সেই ঘাতা-ঘাতি চুনা আবার সক্রিয় হয়ে গেল। এক বাছুরের পা কেটে গেল! চাষা চিন্তায় পড়ে গেল—এই তো বিপদ।
গ্রামের এক বয়স্ক লোক পরামর্শ দিল, "দেখিস, যেই জমিনে চুনা পড়ে, ঘাতা পড়ে, সেই জমি গোয়াল বানানোর না! পাকা গোয়াল ঘর বানাতে হইব, নিরাপদ জায়গায়।"
তাই হলো! চাষা নতুন করে পাকা গোয়ালঘর বানাল। সেখানে রাখা হলো গাই ও তার বাছুরদুটি। আর খেয়াল রাখা হলো—যেন আশপাশে কোনো চুনা, ঘাতা বা খুরলের ঝামেলা না থাকে।
এদিকে সেই কুনোব্যাঙ—সে তো আবার খুরলের গর্তের পাশে ঘাপটি মেরে বসে আছে। আড়াল থেকে সব দেখে, মাঝে মাঝে কেঁদে উঠে, "ঘ্যান ঘ্যান!"—হয়তো ব্যথায়, হয়তো রাগে—সে জানে তার ঠ্যাংয়ের উপরও কিছুটা মোটা হারের চুনা লেগেছিল।
গল্পের শিক্ষণীয় দিক:
১. অসতর্কতা বিপদের কারণ হতে পারে: মোটা হার অযথা খের খেতে গিয়ে পায়ে ঘাতাতে ব্যথা পায়।
২. একজনের ভুলে অনেকের ক্ষতি হতে পারে: তার লাথিতে চুনা গিয়ে পড়ে খুরলের মুখে সে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
3. প্রকৃতি ও পশুপাখির উপর দয়া করা উচিত: কুনোব্যাঙ, পাখি, মোটাহার গরু—সবাই যে কোনো ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
4. সতর্কতা ও পরামর্শ মেনে চলা জরুরি: অভিজ্ঞদের কথা শুনে চাষা পরে নিরাপদ গোয়ালঘর বানায়।
শেষে বলা যায়:
ছোট্ট একটি ঘটনাও কতো বড় ঝামেলা তৈরি করতে পারে! তাই জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত, আর পশুপাখিকেও নিরাপদ রাখতে শেখা দরকার।
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।