পর্ব – ১৫
একটি জানালা দুটি মন
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
সকালের রোদটা পাহাড় ছুঁয়ে নেমে এসেছে রিসোর্টের উঠানে।
তৃতীয় দিন, ট্যুরের শেষ সকাল।
কিন্তু কারো মনেই নেই ফেরার তাড়া।
সাহিদা আয়নায় চুল ঠিক করছে।
আরাফাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে ওর পেছনে। আয়নায় চোখাচোখি হয় দুজনের।
— “তুমি এমন করে দেখছো কেন?”
— “ভাবছি, আয়নাটা কি ঈর্ষান্বিত? তোমাকে আমি ছাড়া আর কেউ এভাবে দেখুক, ভালো লাগে না।”
সাহিদা হাসে।
হাসির মধ্যে লুকানো মায়া, আর কিছুটা ব্যথাও।
কারণ তারা জানে—এই পাহাড়, এই নিঃশব্দ রাত, এই বন্ধুরা—সবকিছু পেছনে ফেলে আজ ফিরে যেতে হবে।
—
ট্রিপের শেষ গন্তব্য: বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত
চারজনই সাদা পোশাকে।
পায়ে পানি, চোখে আকাশ, আর হৃদয়ে অদ্ভুত এক টান।
তিশা আর মাহিয়া সেলফি তুলছে।
আর একটু দূরে দাঁড়িয়ে সাহিদা, তার পাশে আরাফাত।
— “এই জায়গাটার মতোই তোমার ভিতরটা। শান্ত, অথচ গভীর।”
— “আর তুমি ঢেউয়ের মতো—আছড়ে পড়ে, আবার ফিরে আসো।”
হঠাৎ সাহিদা বলে,
— “আচ্ছা, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো, নাকি আমার স্মৃতিকে?”
আরাফাত তার ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,
— “তোমার প্রতিটা নিঃশ্বাস, প্রতিটা হাসি, প্রতিটা অশ্রু—সবকিছুকে ভালোবাসি। স্মৃতি নয়, বাস্তবকে।”
সাহিদা তখন তার কপালে ঠোঁট রাখে।
দাঁড়িয়ে থাকা সবাই মিলিয়ে এক মুহূর্তের নীরবতা।
এই সমুদ্র যেন সেই জানালারই নতুন রূপ—
যেখান থেকে এবার তাঁরা পাশাপাশি তাকায় ভবিষ্যতের দিকে।
—
ফেরার বাস
ফিরতি যাত্রা।
বাস ছুটছে, জানালার বাইরে রাত নেমে এসেছে।
সাহিদা আর আরাফাত পাশাপাশি বসা।
সাহিদা ওর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
আরাফাত এক হাতে ওর চুলে বিলি কাটছে, আর অন্য হাতে লেখে নিজের ডায়েরিতে—
> “তিনটা দিন… পাহাড়, সমুদ্র, বাতাস, আর তুই।
মনে হচ্ছে, জীবনটা যদি এই তিনদিনেই আটকে থাকতো!
তুমি আমার জানালার পাশে বসা সেই মেয়ে…
আর আমি? আমি তোমার জীবনের সেই লেখক,
যে এখন আর অপূর্ণতা চায় না।
শুধু তোমায় চায়… পূর্ণ করে, সারাজীবন।”
বাসের শব্দ ছাপিয়ে নিঃশব্দ প্রেম বয়ে যায়।
বাস থেমেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাউতলীতে ।
নেমে আসছে চারজন। সবাই ক্লান্ত, কিন্তু চোখে-মুখে প্রশান্তি।
জাহিদ এসে বলে—
— “মামা, দেখি তো হানিমুন শেষ হলো নাকি এখনো চলছে!”
আরাফাত হেসে বলে,
— “বাস থেমেছে। কিন্তু আমাদের প্রেমের গন্তব্য এখনো বহু দূর…”
আর পাশ থেকে সাহিদা বলে,
— “অথচ জানালাটা এখন বন্ধ… কারণ এবার আমরা পাশাপাশি বসে আছি।”
তারা হাঁটতে থাকে,
পাশাপাশি, হাতে-হাত ধরে।
একটি জানালার গল্প এবার হয়ে উঠেছে দুটি মন, এক দৃষ্টির পথচলা।
চলবে…