
📖 উপন্যাস: আল্লাহর ভয়
ধরন: ইসলামিক নৈতিক উপন্যাস
রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺
অধ্যায় ১: গোধূলির ছায়া
আকাশে মেঘ জমেছে।
পাহাড়ি রাস্তা ধরে হাঁটছে তিনজন যুবক—সালিম, হাম্মাদ, আর বাশির। বন্ধুত্বে গাঁথা, ঈমানে দৃঢ়।
তারা শহর থেকে দূরে, পাহাড়ি অরণ্যে এসেছে আল্লাহর সৃষ্টির তাফাক্কুর করতে, নিজেরা কিছু সময় আলাদা কাটাতে—পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে।
দিগন্তে সূর্যটা যখন পাহাড়ের কোলে হারিয়ে গেল, তখন হঠাৎ ঝড়ের আভাস এলো।
ঝড় বাড়তে বাড়তে ভয়ংকর রূপ নিল। বাতাসে গাছের ডালপালা ভেঙে পড়তে লাগল, মেঘে গর্জন, বজ্রপাত।
তিন বন্ধু ছুটে গেল পাহাড়ের গহীনে একটা পুরোনো গুহার দিকে, যেটা একবার বাশির তার চাচার সঙ্গে এসেছিল দেখে।
তারা ভেতরে ঢুকল, আগুন জ্বালালো, শুকনো কাপড় গায়ে চাপাল—আর ঠিক তখনই!
একটি বিশালাকার পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিল।
ভেতরটা নিস্তব্ধ, অন্ধকার, ঠান্ডা।
সালিম ফিসফিস করে বলল,
“দেখো বন্ধুরা, এ গুহা তো এখন মৃত্যু কক্ষ! আমাদের কোনো দিকেই যাওয়ার পথ নেই।”
হাম্মাদ বলল, “আল্লাহ ছাড়া আমাদের মুক্তি কেউ দিতে পারবে না। আসো, আমরা তাঁর কাছে দো‘আ করি—আমাদের জীবনের এমন কিছু আমল যদি থাকে, যা আমরা একান্ত তাঁর সন্তুষ্টির জন্য করেছিলাম—তাহলে তাঁর দরবারে সেই আমলের উসিলায় মুক্তি চাই।”
তিনজনই রাজি হলো।
অধ্যায় ২: প্রেম, পরীক্ষা ও পরিশুদ্ধি
বাশির সামান্য নীরব থাকল, চোখ দুটো বন্ধ করল।
তার চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই মুখ, সেই দিন, সেই ঘোর অন্ধকার সময়।
সে বলল,
“হে আল্লাহ! আমি বলছি আমার জীবনের সেই অধ্যায়ের কথা, যা আমি কাউকে বলিনি কখনো... আজ শুধু তোমার সন্তুষ্টির আশায় আমি প্রকাশ করছি তা।
আমার এক চাচাতো বোন ছিল—নাম তার লায়লা। সে ছিল আমার হৃদয়ের সব চেয়ে কাছের। চোখে তাকাতেই মনে হতো, যেন কোনো ফুল বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় ঝরে পড়েছে। আমি তাকে হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছিলাম।
কিন্তু সে কখনোই আমার দিকে তাকায়নি, কোনোদিন আমি তাকে কাছে পাইনি।
তবুও আমি অপেক্ষা করেছি—নীরবে, ছায়ার মতো।
একদিন সে এলো, চোখে কান্না, কণ্ঠে কাঁপন।
সে বলল, ‘ভাই, আমি খুব কষ্টে আছি। কিছু অর্থ প্রয়োজন।’
শয়তান আমার হৃদয়ের কুল ঘেঁষে কুমন্ত্রণা দিল।
আমি বললাম—
‘লায়লা, আমি তোমাকে সাহায্য করব। তবে একটা শর্ত আছে—তুমি আমাকে একান্ত সময় দেবে, আমার সাথে এক রাত। তখন আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।’
সে থমকে গেল। কাঁদতে কাঁদতে মাথা নিচু করে বলল,
‘ঠিক আছে। আমাকে সাহায্য করতে পারো—আমি প্রস্তুত।’
হে আল্লাহ! আমি রাতদিন খেটে একশ’ স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করলাম।
সেই রাতে আমি গিয়েছিলাম তার কাছে।
বাতাস নিস্তব্ধ। ঘরের বাতি জ্বলছে। সে নীরবে বসে আছে।
আমি তার পাশে বসে, ধীরে ধীরে তার পায়ের কাছে গেলাম। হাত বাড়িয়ে যখন আমি তাকে ছুঁতে যাচ্ছিলাম—সে হঠাৎ কেঁদে উঠল!
‘আল্লাহকে ভয় কর!’—সে বলল।
‘তুমি অন্যায়ভাবে আমার সতীত্ব নষ্ট করতে পারো না! এটা আল্লাহর দেওয়া আমানত।’
হে আল্লাহ! যেন সেই মুহূর্তে আমার ভেতরে আগুন ধরে গেল।
আমি তার সামনে থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
সেই স্বর্ণমুদ্রাগুলো তার হাতে রেখে বললাম, ‘এটা তোমার হক। আমাকে ক্ষমা করো।’
হে রব্ব! যদি আমি কেবল তোমার ভয়েই সেই কাজ থেকে বিরত হয়েছিলাম—তাহলে আমাদের মুক্তি দাও!”
অধ্যায় ৩: নীরবতার শব্দ
গুহার ভেতর থমথমে নীরবতা।
হঠাৎ করেই যেন জমিন কেঁপে উঠল।
তিনজনই চমকে তাকাল—পাথরটা একটু নড়ে গেছে!
এক ফালি আলো গুহার দেয়ালে পড়ল। বাইরের বাতাসের ঘ্রাণ অনুভব করল সালিম।
আল্লাহ্র রহমতের আশা আরো গভীর হলো তাদের মনে।
এখন সালিম দাঁড়ালো, তার সময়।
অধ্যায় ৪: গুহার মুখ খুলে গেল
সালিম ও হাম্মাদও তাদের ইখলাসপূর্ণ আমল বর্ণনা করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করল।
একজন বৃদ্ধ পিতামাতার প্রতি ভক্তি ও অন্যজনের শ্রমিকের হক ফিরিয়ে দেওয়ার কাহিনী শুনে, আকাশ যেন কেঁদে উঠল।
গুহার বিশাল পাথর একদম সরে গেল—তারা মুক্ত হলো।
তিন বন্ধু একে একে গুহার বাইরে এলো।
আকাশে তখন সূর্য উঠছে।
তারা মাটিতে সিজদাহ করল—কেননা তারা জানে, এ মুক্তি কারো দয়ায় নয়, কেবল এক রবেরই ইচ্ছায়।
✓ শেষ অধ্যায়: ঈমানের দীপ্তি
এই উপন্যাস আমাদের শেখায়—
আল্লাহর ভয় পাপের আগুন নিভিয়ে দেয়।
গোপন ইখলাসপূর্ণ আমল কখনো হারায় না।
হৃদয়ে যদি আল্লাহ থাকেন, তাহলে শয়তানের পথ আর আকর্ষণীয় থাকে না।
প্রকাশ্যে নয়, গোপনে আল্লাহকে খুশি করার চেষ্টা করো—কারণ সেই আমলই কিয়ামতের দিন আলো হয়ে উঠবে।
🔖 উৎস:
সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৯৭৪
সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৭৪৩
রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺
আরবি প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল মাদ্রাসা 🌹
ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল জেলা।
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।