গল্পের শিরোনাম: রফিক সাহেবের জ্বালাতন
তারিখ:২৫/০৬/২০২৫
গ্রামের নাম মধুবন। সবুজে ঘেরা, মাটির গন্ধে ভরা এক শান্ত গ্রাম। এখানে সবাই সবাইকে চেনে, একে অপরের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসে। কিন্তু এই শান্ত পরিবেশে ছিল এক ব্যতিক্রম – রফিক সাহেব। নাম তার রফিক উদ্দিন হলেও লোকে ডাকত জটকা সাহেব বলে, কারণ কথায় কথায় তিনি এমন ‘ঝটকা’ দেন যে মানুষ হকচকিয়ে যায়।
জটকা সাহেবের চরিত্রটা অদ্ভুত। মিথ্যা বলা যেন তাঁর নেশা, আর মানুষের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করা তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। সে গ্রামের লোকদের নিয়ে এমন মিথ্যে বানিয়ে দেয় যে মানুষকে লজ্জায় পড়ে যেতে হয়।
একদিন সকালে গ্রামের এক ডিম ক্রেতা এসেছে বাজারে। সে খবর পায়, কারো বাড়িতে  মুরগির ডিম আছে কিনা খুঁজছে। তখনই জটকা সাহেবের মাথায় এক নতুন কৌশল খেলে যায়।
সে ডিমওলাকে ডেকে বলল,
— “ওই মিয়া মজনু মিয়ার বাড়িতে যাও। বলবা, ‘আপনার কালা মুরগির ডিম আছে কি?’
রফিক সাহেব জানতেন মজনু মিয়ার স্ত্রী কালো মুরগির ডিম কথাটা ঠিকমতো সহ্য পারেনা রেগে যায়।
ডিমওলা  ক্রেতা কিছু না বুঝে সরল মনে গিয়ে মজনু মিয়ার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক দিল,
— “বউ মা! কালা মুরগির ডিম আছে কি?”
ঘরের ভেতর থেকে মজনুর বউ সখিনা বেগম রেগে আগুন!
— “হতি পোলা, তুই আমারে অপমান করতাই এসছোস? কে কইল, কে কইল! আমাগো বাড়ি কালা মুরগির ডিম আছে! চল আইজ তোকে এমন ডিম দেখামু, চেহারায় ছাপ পরি থাকবো!”
লোকটা হতভম্ব! সে তো শুধু ডিম কিনতে চেয়েছিল! সারা পাড়া জুড়ে হাসাহাসি শুরু হয়ে গেল। কেউ বুঝে গেল এই কাজ জটকা সাহেবের।
আরেকদিন বিকেলে, এক দরিদ্র কৃষক তার খেতের জন্য রোয়া (চারা গাছ) কিনতে আসলো। কিন্তু গ্রামের ভাষায় সে বলল,
— “জ্বালা কিনতে চাই।”
জটকা সাহেব সামনে দাঁড়িয়েই বলল,
— “আসেন ভাইসাব, আমার বাড়ি চলেন। অনেক জ্বালা আছে। বউয়ের জ্বালা, বাচ্চার জ্বালা, নিজে জ্বালা খাই… কোনটা নিবেন বলেন?”
লোকটা কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে রইল। এরপর যখন বুঝল সে উপহাসের পাত্র, তখন রেগে গিয়ে বলল,
— “আচ্ছা সাহেব, আপনি মনে হয় মানুষের জ্বালা বাড়াতেই জন্ম নিছে! আল্লাহ আপনাকে ভালো করুক!”
এইভাবেই একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে লাগল। কেউ তার জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ায় পড়ছে, কেউ সমাজের চোখে লজ্জায় পড়ছে। কিন্তু তবুও জটকা সাহেব থেমে নেই।
একদিন বড় এক শিক্ষা পেলো জটকা সাহেব।
গ্রামে নতুন একজন ইমাম সাহেব আসলেন। পরহেজগার, সুন্দর ব্যবহার। ইমাম সাহেব গ্রামের সবাইকে নিয়ে এক বৈঠকে বললেন,
— “আমরা সবাই মানুষ। আমরা ভুল করতেই পারি। কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছা করে মানুষকে অপমান করে, তাদের মাঝে কলহ লাগিয়ে আনন্দ পায়, সে আল্লাহর কাছে বড় অপরাধী।”
এই কথাগুলো শুনে গ্রামের মানুষজন একসাথে জটকা সাহেবের বিরুদ্ধে কথা বলল। সবাই বলল,
— “আপনি যদি আর মিথ্যা বলেন, কারও সঙ্গে ঠাট্টা করেন, তাহলে আমরা একসাথে প্রতিবাদ করব। আপনার মুখোশ এবার খুলে গেছে।”
সেদিনের পর থেকে জটকা সাহেব চুপচাপ হয়ে গেল। কেউ বলে, তিনি রাতে কান্না করেছেন। কেউ বলে, ইমাম সাহেবের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
যাই হোক, জটকা সাহেবের সেই ‘জ্বালাতন’ বন্ধ হলো। গ্রামের মানুষ একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
শিক্ষা:
যারা মিথ্যা কথা বলে, ঠাট্টা-মশকরা করে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তারা সমাজের জন্য বিষ। কিন্তু যদি সবাই একসাথে মিলে প্রতিবাদ করে, তাহলে একদিন তারাও সোজা হয়ে যায়।
রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺
আরবি প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা। ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল জেলা।