• মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কবিতা: সময়মতো বিবাহ  রচনাঃমাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১/১১/২৩ 🖋️ গল্প: “আলেয়ার আফসোস আর সলিম উল্লাহর বোধোদয়”। রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 মজার গল্প : বাঁশ খানের ন্যায়ের বাঁশ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম ছোট গল্প: ক্ষুদ্র প্রাণীর শক্তি রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  গল্প: “ছাগলের বাচ্চার হক” রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  💐গল্প: ভালোবাসার ঘোষণা, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 🍌বাংলাদেশের মাজার সংস্কৃতি ও গাজার বাজার: একটি বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২/০৪/২০২৩ শিরোনাম:স্বামীর পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও দাবি দাওয়া আদায় প্রসঙ্গে।, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম গল্প: মুরগি ও শিয়ালের চালাকি, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম। 🖋️স্বামীকে অপমান ও তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করার পরিণাম: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:১/১১/২০২৫

গল্প: “সলিমুদ্দিনের নীরব কান্না”। রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 প্রভাষক আরবি বলদিআটা ফাজিল মাদ্রাসা ধনবাড়ী টাঙ্গাইল।

Reporter Name / ২২২ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

🦜 গল্প: “সলিমুদ্দিনের নীরব কান্না”
সকালের হালকা কুয়াশা ভেদ করে গ্রামের মসজিদের মিনার থেকে ভেসে এলো আজানের ধ্বনি।
“আল্লাহু আকবার… আল্লাহু আকবার…”

সলিমুদ্দিন ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠলেন। বয়স হয়েছে, হাঁটতে কষ্ট হয়, কিন্তু নামাজ ফেলে রাখেন না কখনো। মুখে শুকনো হাসি, অন্তরে গহীন এক চাপা কষ্ট। পাশে ঘুমিয়ে থাকা স্ত্রী ফাতিমা একবার তাকালেন। বললেন না কিছুই—সবই তো বোঝেন, অল্প কথার গভীরে লুকিয়ে আছে এক সংসারের বাস্তবতা।

বাড়ি এখন খুবই ভরা—তিন মেয়ে জামাইসহ এসেছে। সঙ্গে নাতি-নাতনি, হাসি-কান্না, খাওয়া-দাওয়া, একরাশ হইহুল্লোড়। কিন্তু সলিমুদ্দিনের ঘর এখনো সেই আগেরই মতো—ছোট, টিনের ছাউনি, ফাঁকা গোলা আর বাজারের বাকি খাতায় ভারী হয়ে ওঠা হিসাব। তবু কারো মুখে কিছু বলেন না। মনে করেন, মেয়েরা তো আমারই অংশ, ওদের বোঝাই তো আমার দায়িত্ব।

কিন্তু চেহারার ক্লান্তি আর চুপ করে থাকার ভাষা কি অজানা থাকে সব সময়?

🕌 ইমাম সাহেবের চোখে পড়ে গেল…
মসজিদের ইমাম হাফেজ  আমিনুল ইসলাম সাহেব, যিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল আর সমাজের চোখ-কান।
ফজরের নামাজ শেষে মসজিদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তিনি সলিমুদ্দিনের ক্লান্ত মুখটা ভালো করেই লক্ষ্য করলেন। কিছু বলতে চাইলেন, কিন্তু বললেন না। বুঝলেন, এখানে সরাসরি কিছু বললে হয়তো লজ্জা দিবে—আর সেটি হতো গোনাহ।
🍃 হিকমতপূর্ণ কাজ
কয়েকদিন পর এক সকালে ইমাম সাহেব দেখা পেলেন সলিমুদ্দিনের বড় জামাই আবিদের, মসজিদের উঠোনে।
চা খাওয়ার আমন্ত্রণে বসিয়ে বললেন:

— “আবিদ ভাই, আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন। আপনার শ্বশুর সলিমুদ্দিন ভাই কত ভালো মানুষ, সমাজে সম্মানিত। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দিন। তবে একটা কথা ছিল… আপনি মাইন্ড করবেন না আশা করি?”

আবিদ একটু অবাক, কিন্তু ভদ্রভাবে বলল:
— “না, না হুজুর, বলেন। আপনি আমাদের মুরুব্বি।”

ইমাম সাহেব একটু থেমে বললেন:

— “রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন তার অতিথিকে সম্মান করে, পারিতোষিকসহ।’
পারিতোষিক কী জানেন? একদিন একরাত। আর মেহমানদারির মেয়াদ তিন দিন। এরপর যদি কেউ থাকে, সেটা সদকার মর্যাদায় গণ্য।
আর এক হাদীসে আছে—‘কোনো ভাই যেন এমন অবস্থায় তার কারো ঘরে না থাকে, যাতে গৃহস্বামী গোনাহগার হয়ে যায়।’”
আবিদ চুপ করে শুনছিল।
ইমাম সাহেব আবার বললেন:
“মনে করেন, একজন অসহায় গৃহস্বামী মুখে কিছু না বলে চুপচাপ থাকল, অথচ তার ঘরে অতিথির ভিড়, খরচ বেড়ে গেল, বাজারে দেনা বাড়ল—তখন তো সে কষ্ট পাচ্ছে। অথচ সে মুখ ফুটে কিছু বলছে না। বুঝে না বললে কি আমরা দায়মুক্ত থাকি, ভাই?”

আবিদের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। হঠাৎ যেন মুখে কথা জড়িয়ে গেল।
✓ অন্তরের জাগরণ
ঐ সন্ধ্যায় আবিদ ফিরে এসে বাকি দুই জামাইকে নিয়ে বসল। নিচু গলায় বলল:
— “আমরা অনেক বড় ভুল করেছি ভাই। শ্বশুর আব্বা কিছু বলেননি, কিন্তু কষ্টে আছেন। আমরা হাদীস জানতাম না। কিন্তু আজ হুজুর বুঝিয়ে বললেন। আমাদের থাকা এখন অন্যায়ের পর্যায়ে পড়ছে।”
একজন বলল:
— “আমরা ভেবেছিলাম, তারা তো মা-বাবা, কিছু বলবে না। কিন্তু আমরা তো বোঝা হয়ে গেছি। এবার আমাদের চলে যাওয়া উচিত।”
পরদিন সকালের আলো ফোটার আগেই তারা সবাই বিদায়ের প্রস্তুতি নিল।
🥀 বিদায়ের মুহূর্ত
সলিমুদ্দিন অবাক হয়ে বললেন,
— “এমন হঠাৎ চলে যাচ্ছ কেন রে?”
আবিদ মাথা নিচু করে বলল:
— “বাবা, আপনি কিছু না বললেও আমরা সব বুঝে গেছি। আপনি আমাদের মুখের হাসির জন্য নিজে কষ্ট করেছেন। হুজুর আমাদের চোখ খুলে দিয়েছেন। এবার আমরাও দায়িত্ব নিতে শিখব। পরে আসব ইনশাআল্লাহ, তবে হাদীস অনুযায়ী, আপনাদের কষ্ট না দিয়ে।”

সলিমুদ্দিনের চোখ ভিজে উঠল। ফাতিমা চুপচাপ কেঁদে ফেললেন।
🌸 উপসংহার
ওরা চলে গেলেও ঘরজুড়ে যেন প্রশান্তির বাতাস বইল। দায়িত্বশীলতা, বোঝাপড়া, ইসলামী শিক্ষার আলো — সব একসাথে মিলেই পরিবারে শান্তি এনে দিল।
গ্রামের ইমাম সাহেবও সেদিন খুশি মনে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন:
> “যদি আমরা হাদীস বুঝে চলি, তবে ঘর আমাদের জান্নাত হয়ে যাবে। আর যদি না বুঝি, তবে ভালোবাসাও বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।”
✓শিক্ষা:
✓মুখে কিছু না বললেও কখনো কখনো চোখ সব বলে দেয়।
✓সত্যিকারের সম্পর্ক বোঝায় গঠিত হয়, দায়িত্বে নয় শুধু ভালোবাসায় নয়।
✓ইসলাম আমাদের সব সম্পর্ককে ভারসাম্য ও সুবিচারের মানদণ্ডে গড়ে তোলে।

🖋️রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
🪶আরবি প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল মাদ্রাসা।
ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল জেলা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন