🖊️পিতৃভক্ত এক যুবকের গল্প
🪶 রচনায় :মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
🕐তারিখ:২৯/০৬/২০২৫
মধুপুর গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয় ইকবাল নামের এক মেধাবী যুবক। পরিবারে অভাব অনটন লেগেই ছিল, কিন্তু ছিল না স্বপ্নের ঘাটতি। বাবা ছিলেন একজন কৃষক। ভোরবেলা মাঠে যেতেন, আর সন্ধ্যায় ক্লান্ত দেহে ফিরতেন ঘরে। দুই ছেলেকে মানুষ করার জন্য তিনি যা করেছেন, তা একজন পিতার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
ইকবাল ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। হাইস্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত তার ফলাফল ছিল চমৎকার। তার এই সফলতার পেছনে ছিল বাবার ঘামে ভেজা পরিশ্রম। কখনো স্কুলের ফি দিতে না পারলে বাবা নিজের ধানের গাছ বিক্রি করতেন। কখনো নিজের নতুন কাপড় না কিনে ছেলেদের বই কিনে দিতেন।
কলেজে ভর্তি হবার পর ইকবালের জীবনে এক কঠিন সময় আসে। তার বাবা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসা, পথ্য আর সেবার জন্য একজন নির্ভরযোগ্য মানুষের দরকার হয়, আর ইকবাল তখনই সিদ্ধান্ত নেয়— বাবা আগে, পড়া-পড়া পরে।
সে তার পড়াশোনা কিছুটা পিছিয়ে দিয়ে চলে আসে গ্রামের বাড়িতে। সকাল থেকে রাত অবধি বাবার পাশে থেকে ওষুধ খাওয়ানো, সেবা-যত্ন, ডাক্তার দেখানো—সবই সে করে মনপ্রাণ দিয়ে। অনেকেই বলেছিল, "তুই তোর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছিস!" কিন্তু ইকবাল বিশ্বাস করত, "একজন পিতার যত্ন নেওয়ার মতো সৌভাগ্য পৃথিবীর খুব কম ছেলেই পায়।"
এক বছর ধরে বাবার সেবা করে অবশেষে সে আবার পড়াশোনায় ফিরে যায়। সময় অনেকটাই চলে গেছে, তাই তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। তবুও সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স শেষ করে, আর দীর্ঘ সময় নিয়ে মাস্টার্সও শেষ করে ফেলে।
এরপর চাকরি জীবনে প্রবেশ করেও তার পিতা-মাতার সেবা থেকে একটুও পিছিয়ে যায়নি। বিসিএস-এর প্রস্তুতির সময়ও সে প্রায়শই বাড়িতে গিয়ে বাবার দেখাশোনা করত। শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন পরীক্ষা পাস করে সে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করে।
আজও ইকবালের জীবন সাদামাটা—না আছে বড় চাকরি, না আছে বিলাসিতা। কিন্তু তার চোখে আছে শান্তি, মুখে আছে প্রশান্তির হাসি। কারণ, সে জানে, পৃথিবীর সব স্বপ্ন পূর্ণ না হলেও একজন পিতার চোখের জল মুছে দেওয়ার মতো সফলতা আর কিছুতেই নেই।
শিক্ষণীয় বার্তা:
এই গল্প আমাদের শেখায়, বড় ডিগ্রি, বড় চাকরি বা বড় স্বপ্নের চেয়েও মূল্যবান একজন বাবা-মায়ের খেদমত করা। ইকবালের মতো সন্তানেরা সমাজে এক একটি আলোকবর্তিকা, যাদের নীরব ত্যাগ একদিন আমাদের সমাজকে পরিবর্তন করবে।
✓আরবি প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল মাদ্রাসা ধনবাড়ী টাঙ্গাইল জেলা।
Gmail:islamiclecturer7@gmail.com
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।