গল্পের নাম: কৃতিত্বের চূড়ায় ফরহাদ
জাফর শাহী গ্রামের প্রত্যন্ত কোণে জন্ম নেওয়া ফরহাদ হোসেন ছিল এক সাধাসিধে কৃষক পরিবারের ছেলে। বাবা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে হাল চাষ করে ফসল ফলাতেন। মা তার ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতেন—“আমার ফরহাদ একদিন অনেক বড় হবে, হোক না আমাদের কুঁড়ে ঘর, আমার দোয়ায় সে একদিন আলো ছড়াবে গোটা দেশে।”
ফরহাদ ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রম ছিল। গ্রামের ছোট্ট প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তার চোখে ছিল বড় স্বপ্নের দীপ্তি। অন্যরা খেলাধুলা নিয়ে মেতে উঠলেও ফরহাদের মন পড়ায় থাকত। সন্ধ্যাবেলা কেরোসিনের বাতির নিচে বই খুলে বসে থাকত সে, আর মা পাশে বসে দোয়া পড়তেন, “আল্লাহ, আমার ফরহাদকে মাটি ছুঁয়ে আকাশে উঠিয়ে দাও।”
দিন গড়াত, সময় এগোত। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখার পর ফরহাদ ভর্তি হন মাওলানা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস তাকে আলাদা করে তুলেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে চূড়ান্ত ভালো ফলাফলের মাধ্যমে সবার নজর কেড়ে নেন তিনি।
তবে এখানেই থেমে থাকেননি ফরহাদ। তিনি জানতেন, শিক্ষার ময়দান যত বড়ই হোক, তার অন্তিম লক্ষ্য দেশের সেবা। তাই শুরু করেন বিসিএসের প্রস্তুতি। কৃষি ব্যাংকের চাকরিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু হলেও, সেটি ছিল তাঁর পরবর্তী সাফল্যের সিঁড়ি।
অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৪৪ তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হলো। সারা দেশের হাজারো প্রার্থীকে পেছনে ফেলে প্রথম স্থান অধিকার করে প্রশাসন ক্যাডারে সুপ্রতিষ্ঠিত হলেন ফরহাদ হোসেন। জাফর শাহী গ্রামজুড়ে আনন্দের ঢেউ, পাড়া-মহল্লায় মিষ্টি বিতরণ হয়, মা’র চোখ ভিজে ওঠে আনন্দে।
একজন গরিব কৃষকের ছেলে যে নিজের মেধা, পরিশ্রম আর মা-বাবার দোয়ায় দেশের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে—ফরহাদ তার জীবনের মাধ্যমে সেটিই প্রমাণ করে দিয়েছেন।
শেষ কথাঃ
জাফর শাহী গ্রামের মাটিতে আজও অনেকে ফরহাদকে উদাহরণ দেন। মা বলেন, “আমার ছেলের কৃতিত্ব আমার নয়, ওর বাবার ঘাম আর আল্লাহর রহমতের ফসল।”
🪶রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
🌺আরবি প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা।
ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল জেলা।