• মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ অপরাহ্ন

গল্পের নাম: একটি কার্ডের ওজন✉️ 🪶রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম🦜 তারিখ:০৫/০৭/২০২৫

Reporter Name / ৯৬ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫

গল্পের নাম: একটি কার্ডের ওজন✉️🦜

সোনাপুর, এক শান্ত নিরিবিলি গ্রাম, যেখানে মুসলমান আর হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ যুগ যুগ ধরে পাশাপাশি বাস করে আসছে। গ্রামের এক কোণে বাস করতেন এক বৃদ্ধ হিন্দু, নাম তার হরিচরণ পাল। সারা জীবন তিনি মূর্তি পূজায় লিপ্ত থেকেছেন। কখনো গাছে, কখনো নদীতে, কখনোবা মাছের পূজায় – তিনি ছিলেন একজন প্রবল আস্তিক, তবে ঈশ্বর বলতে তার মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করত।
তবে তাঁর মনে একটা প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খেত – “আমি যাদের পূজা করি, তারা নিজেরাও তো চলে না, তারা কীভাবে আমার উপকার করবে?” এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর মধ্যে এক অজানা কৌতূহল তৈরি করে।
ঠিক তখনই এক বছর সোনাপুর গ্রামে তাবলীগ জামাতের একটি দল আসে। তারা মসজিদে অবস্থান করে গ্রামের বিভিন্ন ঘরে ঘরে গিয়ে নামাজ, কালিমা, ঈমান, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নামের দাওয়াত দিতে শুরু করে। অনেকেই উৎসাহিত হয়ে মসজিদে আসা শুরু করল। হরিচরণ পাল দূর থেকে এসব খেয়াল করতেন। প্রথমে অবহেলা করলেও পরে মনে মনে বলতেন, “যদি সত্যিই একটা পরকাল থাকে? যদি আমার এত পূজা শেষমেশ কিছুই না হয়?”
একদিন রাতে, চাঁদের আলোয় ঝিলমিল করছে চারপাশ, তিনি সাহস করে গোপনে মসজিদে গিয়ে ফরিদ উদ্দিন নামক এক ইমামের সাথে দেখা করেন। মসজিদের পেছনের বারান্দায় বসে বলেন,
“মোল্লাসাহেব, আমি হিন্দু। গাছ, মূর্তি, নদী সবকিছুর পূজা করেছি। কিন্তু শান্তি পাইনি। আপনারা যেটা বলেন, কালিমা, নামাজ, জান্নাত— এসব কি সত্য?”
ফরিদ উদ্দিন শান্ত কণ্ঠে বললেন,
“আপনি সত্য জানার জন্য এসেছেন, এটা আপনার জন্য অনেক বড় নিয়ামত। আমি আপনাকে কুরআনের একটি আয়াত বলি—
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
‘আমি জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।’ (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)”
তিনি এরপর বুঝিয়ে দিলেন, গাছ, মূর্তি, নদী— এসব সৃষ্টি। সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। তাঁর কোন শরিক নেই। তারপর তিনি হরিচরণ পালকে একদিন এক হাদীস পড়ালেন। সেই হাদিসটি ছিল—
> **“কিয়ামতের দিন আল্লাহ এক বান্দার ৯৯টি দফতর খুলবেন, প্রতিটি দফতর চোখ যতদূর দেখতে পায়, ততটা বিস্তৃত। সব ভুল, পাপ লিপিবদ্ধ থাকবে। তবুও আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার এক নেকি আছে।’
সে নেকি হবে একটি ছোট্ট কার্ডে লেখা—
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

সেই কার্ডটি রাখার পর সব পাপের দফতর উল্টো হালকা হয়ে যাবে, আর কালিমার কার্ডটি ভারী হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহর নামের বিপরীতে কিছুই ভারী নয়।” (তিরমিজি, ইবন মাজাহ)**
হরিচরণ পাল কেঁদে ফেললেন। বললেন,
“আমি যদি এখন এই কালিমা পড়ে নেই, তাহলে কি আমার এত পাপেরও ক্ষমা হবে?”

ইমাম বললেন,
“হ্যাঁ, যদি আপনি অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন যে আল্লাহই একমাত্র রব, এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর রাসূল, তবে আজ থেকে আপনার পূর্বের সব পাপ ধুয়ে যাবে। আপনি নবজাতকের মতো পবিত্র হবেন।”
সেই রাতেই হরিচরণ পাল অশ্রুসিক্ত চোখে উচ্চারণ করলেন:

> أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

পরদিন তিনি নোয়াখালী কোর্টে গিয়ে এফিডেভিট করে নাম রাখেন হারুন ইসলাম। গ্রামের অনেকেই প্রথমে তাচ্ছিল্য করেছিল, কিন্তু তার বদলে যাওয়া চরিত্র, নম্রতা, নিয়মিত নামাজ, পবিত্রতা দেখে মানুষ অবাক হয়ে যায়।
তিনি এখন প্রায়শই তরুণদের বলেন,
“তোমাদের যত পাপই থাকুক, যদি অন্তর থেকে এক আল্লাহকে বিশ্বাস করো, তাঁর পথে ফিরে আসো, তবে জান্নাত তোমার জন্য প্রস্তুত।”
এভাবেই সোনাপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এক ঈমানদারের গল্প— যে ৯৯টি দফতরের পাপের বিপরীতে পেয়েছিল একটি কার্ড— কালিমার কার্ড, যা তাকে মুক্তি এনে দিয়েছিল।
শেষ কথাঃ
একটি খাঁটি কালিমা, যদি হয় অন্তর থেকে বলা, তবে তা কিয়ামতের দিন পাহাড়সম পাপ থেকেও ভারী হবে। ফিরে আসুন রবের দিকে, আজই।

🖋️রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
🪶আরবি প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা ধনবাড়ী টাঙ্গাইল জেলা।
🕐 তারিখ:০৫/০৭/২০২৫


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন