পরকীয়া—একটি শব্দ, যার মধ্যে লুকিয়ে আছে সম্পর্কভঙ্গ, বিশ্বাসঘাতকতা ও মানবিক বিপর্যয়ের করুণ চিত্র। সমাজে এই ব্যাধি দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। একদিকে নষ্ট হচ্ছে পারিবারিক শান্তি, অন্যদিকে জন্ম নিচ্ছে অপরাধ, আত্মহত্যা, হত্যা, বিচ্ছেদ, এবং শিশুদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো পরকীয়ার ভয়াবহতা ও সমাজে এর প্রতিক্রিয়া।
পরকীয়ার প্রথম ও প্রধান ক্ষতি হয় স্বামী-স্ত্রীর বিশ্বাসে। একবার যখন একজন সঙ্গী অন্য কারও প্রতি আকৃষ্ট হয়, তখন সম্পর্কের মধ্যে বিষ ঢুকে যায়। কথা কমে যায়, ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায় এবং একসময় ভেঙে পড়ে সংসার নামক বন্ধনটি।
পিতামাতার ঝগড়া, ডিভোর্স এবং বিশ্বাসভঙ্গ সন্তানের উপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। তারা হয়ে পড়ে মানসিকভাবে দুর্বল, হতাশ এবং সমাজবিমুখ। অনেক সময় এদের কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, কেউ অপরাধী হয়ে ওঠে।
পরকীয়া সমাজে অবাধ্যতা, স্বেচ্ছাচারিতা এবং নৈতিকতা ধ্বংসের অন্যতম কারণ। এটা যেমন ব্যক্তিগত পাপ, তেমনি সামাজিক ব্যাধি। পরকীয়ার কারণে আত্মহত্যা, পারিবারিক কলহ এবং খুনের মতো ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই।
ইসলাম, খ্রিস্টান, হিন্দু—প্রায় সব ধর্মেই পরকীয়াকে কঠিন অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক হারাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন—
“আর ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না; নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা: ৩২)
পরকীয়া কেবল শারীরিক অপরাধ নয়, এটি আত্মার বিশ্বাসঘাতকতা।
বিভিন্ন দেশে পরকীয়ার জন্য রয়েছে আইনি ব্যবস্থা। অনেক রাষ্ট্রে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ডিভোর্সের ক্ষেত্রে আদালত পরকীয়াকে অন্যতম বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে, যার ফলস্বরূপ প্রপার্টি বিতরণ, সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণে জটিলতা সৃষ্টি হয়।
পরকীয়ার হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন—
আল্লাহভীতি ও নৈতিকতা চর্চা
পারস্পরিক বিশ্বাস ও খোলামেলা আলোচনা
অশ্লীলতা ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা
প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করা
সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া