বিদ্যা অর্জনের পবিত্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অগণিত শিশুরা প্রতিদিন সকালবেলা স্কুলের পথে রওনা হয়। চোখে থাকে স্বপ্ন, মনে থাকে প্রশ্ন—ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলা এক নির্ভেজাল উচ্ছ্বাস। এমনই এক সকাল, যেখানে শত শত শিশু গিয়েছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। তারা জানত না, সেই সকালই তাদের জীবনের শেষ সকাল।
হঠাৎই প্রশিক্ষণরত একটি যুদ্ধবিমান দিকভ্রান্ত হয়ে আছড়ে পড়ে স্কুল ভবনের উপর। মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। বিস্ফোরণ, ধোঁয়া, কান্না, আর চিৎকারে ভরে ওঠে চারপাশ। এক মুহূর্তেই নিভে যায় কত শিশু প্রাণ-যাদের অপরাধ কেবল একটিই: তারা বিদ্যার পথে ছিল।
আমি স্তম্ভিত। বাকরুদ্ধ।
এখন আমরা দেখব-তদন্ত কমিটি গঠন হবে, ফাইল ঘুরবে দপ্তরে দপ্তরে, মিডিয়ায় কিছু যৌক্তিক/অযৌক্তিক প্রশ্ন আসবে, অভিযোগ উঠবে, কিছু চোখের জল ঝরবে। তারপর….?
তারপর…এক নতুন বড় খবর এসে আগের শোককে ঢেকে দেবে। কিছুদিন পর হয়তো এই ঘটনার নামটাও অনেকে ভুলে যাবে।
আমরা এমনই এক জাতি-যাদের চেতনা জাগে কেবল তখন, যখন শোক দরজায় কড়া নাড়ে। যখন শিশুর লাশ মাটিতে পড়ে থাকে, তখন আমরা প্রশ্ন করি। অথচ সেই প্রশ্নগুলো আগেই করলেও এই বিপর্যয় এড়ানো যেত।বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টরে যেন অনিয়ম আর দায়হীনতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তার গাফিলতি, তদারকির অভাব, এবং দায় এড়ানোর সংস্কৃতি-সব মিলে এ যেন নিয়তির নির্মম পরিহাস। এই ঘটনার দায় শুধু সংশ্লিষ্টদের নয়, আমাদের সবার।
কারণ আমরা চুপ থেকেছি। কারণ আমরা ‘পরের ঘটনা’ ভেবে এড়িয়ে গেছি।
এই মৃত্যু কেবল শিশুদের নয়-এটি আমাদের বিবেকেরও মৃত্যু।
যতদিন না আমরা প্রতিটি প্রাণের প্রতি দায়িত্বশীল হই, যতদিন না রাষ্ট্র ও নাগরিক একসাথে জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলে-ততদিন এমন মৃত্যু চলতেই থাকবে। আর আমরা শুধু চোখ মুছবো… পরের ঘটনার আগ পর্যন্ত।
শেষ কথা
প্রতিটি শিশুর মৃত্যু আমাদের নীরবতার বিরুদ্ধে এক চরম অভিযোগ। প্রশ্ন হলো-আমরা কি এবার সত্যিই জেগে উঠব? নাকি আবারও অপেক্ষা করব, আরেকটি বিস্ময়ের মতো মৃত্যুবার্তার জন্য?
~@বিপুল…..