• শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন

ছোট গল্প:আলোর পথে প্রতিবাদ, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২৫/০৭/২০২৫

Reporter Name / ১০৮ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫

ছোট গল্প:আলোর পথে প্রতিবাদ

🏇গ্রামের নাম: জশেরপাড়া
বাংলার এক ছোট্ট গ্রাম, যেখানে ঘর-বাড়ি, মাঠ-ঘাস, পুকুর ও ছোট ছোট দোকানের ভিড়ে ভরা এক সাধারণ জনপদ। নাম জশেরপাড়া। এই গ্রামের মানুষরাই গ্রামের প্রকৃত রূপ ও প্রাণ। তবে, বহু বছর ধরে এই গ্রামে এক ভুল ধারণা জমে উঠেছিল, যা গ্রামের অনেকের মন-মানসিকতায় অন্ধকার তৈরি করেছিল। বিশেষ করে গ্রামটিতে ক্ষমতাশালী এক ব্যক্তি, মজনু খুড়া, এই ভুল ধারণার শিকড় গভীর করে গিয়েছিলেন।
মজনু খুড়া ছিলেন গ্রামের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর কথা ছিল এক আদেশের মতো গ্রামে শোনা যেত। তিনি নিজেকে সবার উপরে ভাবতেন এবং গ্রামের মানুষ তাঁর সম্মান করতেও বাধ্য ছিল। কিন্তু মজনু খুড়ার একটাই বড় সমস্যা ছিল—মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতি তার ঘৃণা ও অবজ্ঞা।
তিনি বলতেন, “এই মাদ্রাসার ছাত্ররা সমাজের উন্নতিতে কিছু করতে পারে না। তাদের জ্ঞান পুরানো, তারা আধুনিক জীবনের সাথে তাল মিলাতে পারে না। আর গরীব হওয়া মানেই অক্ষমতা।”
এই কথা গ্রামের অনেক মানুষের মনেও গেথে গিয়েছিল। কিন্তু গ্রামের দুই তরুণ করিম উদ্দিন ও নূরুল ইসলাম ঠিক উল্টো পথে হাঁটছিলেন।

🪶প্রথম পরিচয়
করিম উদ্দিন ও নূরুল ইসলাম, দুজনেই জশেরপাড়ারই সন্তান। দুজনেই গরিব পরিবারের কষ্টের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছেন। পরিবারে কেউ শিক্ষিত নয়, কিন্তু তাদের দৃঢ় সংকল্প, অধ্যবসায় ও আল্লাহর রহমতে তারা আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছেন।
করিম উদ্দিন ছিলেন ভাষার জাদুকর। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় তার দক্ষতা ছিল অপরিসীম। আর নূরুল ইসলাম ছিলেন আমল ও আখলাকের দৃষ্টান্ত। দুজনেই জানতেন, শুধু জ্ঞান অর্জন করাই যথেষ্ট নয়, সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সমাজের জন্য কিছু করা দরকার।
গ্রামের অনেকেই তাদের অবজ্ঞা করত। মজনু খুড়া বলত, “এই ছেলেরা তো আর কিছু করতে পারে না, গরীব হওয়া মানেই সমাজে নিচু হওয়া।”
করিম উদ্দিন ও নূরুল ইসলাম মনে করতেন, “গরীব হওয়া মানেই অন্ধকার নয়, জ্ঞানের আলোয় পথ মেলে।”

🏇সংগ্রামের দিনগুলো
মাদ্রাসায় পড়ার সময় করিম ও নূরুল দেখেছিলেন, কত গরিব ছাত্রের মনে আছে শিক্ষা অর্জনের তীব্র বাসনা, কিন্তু দারিদ্র্য আর সমাজের অবজ্ঞা তাদের পথকে বাঁধা দিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ছিল এসব ছাত্রদের জন্য পথ সুগম করা।
করিম উদ্দিন বলতেন, “আমাদের কাজ শুধুমাত্র পড়াশোনা নয়, আমাদের কাজ সমাজের জন্য আলোর দিকটি দেখানো।”
নূরুল ইসলাম যোগ করতেন, “আমাদের আমল ও আখলাকই আমাদের পরিচয় হবে, অর্থ নয়।”
তারা গ্রামের মানুষের কাছে বারবার পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন— যে গরীব হওয়া সমাজে নিচু হওয়ার মানে নয়, বরং সৎ মন ও জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ মর্যাদা অর্জন করতে পারে।

🏇মজনু খুড়ার অপপ্রচার
মজনু খুড়া যখন দেখলেন করিম ও নূরুল তাদের সাধ্যমতো উন্নতি করছে, তখন তার হিংসা বেড়ে গেল। তিনি গ্রামে অপপ্রচার শুরু করলেন:
“এই মাদ্রাসার ছাত্ররা শুধু ধর্মীয় জ্ঞান পায়, আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জ নিতে পারে না। তারা দরিদ্র, তাদের কোনো মর্যাদা নেই।”
কিছু গ্রামবাসী মজনুর কথায় প্রভাবিত হলেন, সন্দেহ শুরু হল করিম ও নূরুলের যোগ্যতা ও চরিত্র নিয়ে। এই অপপ্রচার তাদের মনোবল ভেঙে দিতে চাইল।

🦜প্রতিবাদের শুরু
একদিন করিম উদ্দিন ও নূরুল ইসলাম গ্রামের পুকুর পাড়ে বসে গভীর চিন্তায় ছিলেন।
করিম বললেন, “আমাদের কাজ শুধু পড়াশোনা নয়, আমাদের কাজ হচ্ছে সমাজের ভুল ধারণা বদলানো।”
নূরুল উত্তর দিলেন, “আমাদের আমল ও চরিত্র দিয়ে প্রমাণ করব, গরীব হওয়া মানে কম হওয়া নয়।”
তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, গ্রামে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে ছোট ছোট শিশুদের বিনামূল্যে পড়াবেন, যাতে গ্রামের গরিব শিশুরাও শিক্ষার আলো পায়।

গ্রামের আলোর দীপ জ্বলে উঠল

করিম ও নূরুল গ্রামের স্কুলে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ শুরু করলেন। বিনামূল্যে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি শিক্ষা দিতে লাগলেন। তারা গরিব ও অনাথ শিশুদের জন্য ছোট একটি পাঠাগারও তৈরি করলেন।
তারাই যখন কাজ করছিলেন, গ্রামের অনেক যুবক তাদের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করল। তাদের নিষ্ঠা ও সততার প্রশংসা করতে লাগল।
ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শুরু করল। যারা আগে মজনু খুড়ার অপপ্রচারে বিভ্রান্ত ছিল, তারা এখন নিজেদের ভুল বুঝতে পারল।

🏇মজনু খুড়ার কৌশল ব্যর্থ হলো

মজনু খুড়া প্রচেষ্টা চালালেন তাদের কাজ বন্ধ করার। একদিন বললেন, “এই ছেলেরা গরিব, তাদের কোনো উচ্চশিক্ষা নেই। তারা সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”
করিম উদ্দিন ধৈর্য নিয়ে বললেন, “আমাদের গরীব হওয়া মানে নয় আমরা অসাধু। জ্ঞান ও আমল দিয়ে আমরা সমাজের জন্য আলোর পথ দেখাব।”
গ্রামের অনেক তরুণ করিম ও নূরুলের পাশে দাঁড়াল।

বড় মিছিল ও জয়

একদিন বড় মিছিল হয় জশেরপাড়ায়। মিছিলে করিম উদ্দিন বললেন:
“আমরা গরীব হতে পারি, কিন্তু আমাদের মন, আমাদের জ্ঞান, আমাদের আমল দারুণ ও শক্তিশালী। ভুল ধারণা বদলাতে আমাদের কাজ করতে হবে।”
নূরুল ইসলাম যোগ করলেন, “আমরা প্রমাণ করব আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররাও আধুনিক শিক্ষায় পারদর্শী, তারা সমাজের শ্রেষ্ঠ নাগরিক হতে পারে।”
গ্রামের মানুষ তাদের বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হল। মজনু খুড়ার অপপ্রচার আর কোনো প্রভাব ফেলতে পারল না। তারা সম্মান পেতে শুরু করল।

উপসংহার
করিম উদ্দিন ও নূরুল ইসলাম প্রমাণ করলেন, গরীব হওয়া শিক্ষার বাধা নয়। অধ্যবসায়, জ্ঞান ও আমল দিয়েই একজন মানুষ মর্যাদা অর্জন করতে পারে।
মজনু খুড়ার মতো অহংকারী মানুষ সমাজে অস্বীকার পেয়েও শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়।
জশেরপাড়ার সেই দুই মেধাবী ছেলে আজ জশেরপাড়ার আলোর বাতিঘর।

হাদিসের বানী ও উপদেশ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
> “إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى”
“কর্মসমূহ নির্ভর করে নিয়্যাতের উপর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তার নিয়্যাতের ফল।”
— (সহীহ বুখারী)
অর্থাৎ, আপনার কাজ যত বড় বা ছোটই হোক না কেন, তার সাফল্য নির্ভর করে আপনার হৃদয়ের উদ্দেশ্যের ওপর। আপনি যদি সৎ ও পরিশ্রমী হোন, আল্লাহ অবশ্যই আপনার কাজ সফল করবেন।
উপদেশ:
আমরা যেন কখনো নিজেদের অবস্থান, অর্থনৈতিক ক্ষমতা বা সমাজের চোখে মূল্যায়ন দিয়ে নিজেকে ছোট করে না দেখি। জ্ঞান অর্জন ও কর্মের মাধ্যমে আমরা আলোর পথে চলতে পারি। যে পথ আলোর পথে নিয়ে যায়, সেই পথেই সফলতা ও সম্মান নিহিত।

✍️ রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
আরবি প্রভাষক, বলদীআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল।
ইমেইল: islamiclecturer7@gmail.com


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন