ছোট গল্প:চিকিরাম ড্রাইভার
এক গাঁয়ে বাস করত এক অটোরিকশাওয়ালা, তার নাম কচিরাম। কিন্তু তাকে কেউ ডাকত না কচিরাম বলে। সবাই বলত চিকিরাম ড্রাইভার। তার অটোটা ছিল পুরোনো, ভাঙাচোরা। যখনই রাস্তায় চলত, একটা অদ্ভুত আওয়াজ করত – ডগ ডগ ডগ! আর গাড়ির যন্ত্রপাতিগুলো, সেগুলোও কম যেত না, রোদ পড়লেই চিকচিক করত, যেন নতুন। এই “ডগ ডগ” আর “চিক চিক” নিয়েই ছিল কচিরামের দুঃখের শেষ নেই।
কেউ বলত, “ঐ দেখ, চিকিরামের চিকচিকি অটো যাচ্ছে!” আবার কেউ হাসতে হাসতে বলত, “ডগডগা অটো নিয়ে চলল ডগডগা ড্রাইভার!” কচিরাম এসব শুনে মনে মনে কঁকিয়ে উঠত। তার স্বপ্ন ছিল একটা ঝকঝকে নতুন অটো কিনবে, যেখানে কোনো ডগডগ আওয়াজ হবে না, আর যন্ত্রপাতিগুলোও অমন বেহায়া হয়ে চিকচিক করবে না।
একদিন এক যাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিল কচিরাম। রাস্তা ছিল খুবই খারাপ, আর তার অটোটা আরও জোরে ডগডগ করছিল। যাত্রী বিরক্ত হয়ে বলল, “ভাই, আপনার অটোটা বুঝি ভাঙারির দোকান থেকে তুলে এনেছেন? এত আওয়াজ!” কচিরাম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কী করব দাদা, গরিব মানুষ।”
কিন্তু কচিরামের অটোর একটা অন্যরকম গুণ ছিল। যত খারাপ রাস্তাই হোক, সে তার অটোকে ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছে দিত। একদিন এক লোকের পেটে গ্যাস আটকে যায় তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল মাঝরাতে। অন্য কোনো অটোচালক রাজি হয়নি, কারণ রাস্তা ছিল কাদায় ভরা আর অন্ধকার। কিন্তু কচিরাম তার ডগডগা অটো নিয়েই বেরিয়ে পড়ল। অটোটা তখন আরও জোরে ডগডগ করছিল, আর হেডলাইটের আলোতে ধুলোমাখা যন্ত্রাংশগুলোও চিকচিক করছিল। লোকটি ভয়ে কুঁকড়ে ছিলেন, কিন্তু কচিরাম তাকে ভরসা দিল, “চিন্তা করবেন না দিদি, আমার ডগডগা অটো ঠিক পৌঁছে দেবে।”
অবশেষে তারা হাসপাতালে পৌঁছল। ডাক্তাররা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ায় লোকটি পেট অপারেশন এর পর সুস্থ রইল। সেই লোকটা কচিরামের কাছে এসে বললেন, “আপনার এই ডগডগা অটোই আজ আমার জীবন বাঁচাল। আর আপনার যন্ত্রপাতিগুলো চিকচিক করছিল বলে আলোতে দেখতেও সুবিধা হয়েছে।”
সেদিন কচিরামের মনটা আনন্দে ভরে গেল। তার ডগডগ আর চিকচিক আর দুঃখের কারণ রইল না। বরং সেগুলোই হয়ে উঠল তার গর্বের প্রতীক। এরপর থেকে যখন কেউ তাকে “চিকিরাম ড্রাইভার” বা “ডগডগা” বলত, কচিরাম মুচকি হাসত। কারণ সে জানত, তার এই অটোর প্রতিটি ডগডগ শব্দ আর প্রতিটি চিকচিক তার শ্রম আর নিষ্ঠার গল্প বলে।
রচনায়: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺
আরবি:প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল মাদ্রাসা ধনবাড়ী টাঙ্গাইল জেলা।