🪶গল্পের শিরোনাম: “অনুতপ্ত হৃদয়”

(আধুনিক প্রেক্ষাপটে হাদীস ভিত্তিক একটি শিক্ষণীয় গল্প)🦜

বাবুল হোসেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র। ধর্মীয় শিক্ষা নিয়েও তার আগ্রহ ছিল বরাবরই, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গ, আধুনিক প্রযুক্তির প্রলোভন, এবং সময়ের চাপে মাঝে মাঝে সে নিজের সীমানা লঙ্ঘন করে ফেলত। এমনই একদিন, সে তার সহপাঠিনীর সাথে কিছুটা বাড়াবাড়ি করে ফেলে। সহবাস নয়, কিন্তু শরীর স্পর্শ এবং ঘনিষ্ঠতায় জড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর থেকেই বাবুলের অন্তরে শুরু হয় এক অদৃশ্য অস্থিরতা।

সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না—তার এই কাজটা সে কাকে বলে? যদি কেউ জেনে যায়? আল্লাহ কি তাঁকে ক্ষমা করবেন? অন্তর তার শান্তি হারিয়ে ফেলে।

অনুতাপের সন্ধানে…

সন্ধ্যায় হল রুমে ফিরে বাবুল কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিল না। সে ওযু করে নামাজ পড়ে, তারপর গুগলে সার্চ করে—“আমি এক মেয়েকে স্পর্শ করেছি, কী করব?” অনেক কিছু আসে, কিন্তু একটা হাদীসের সারাংশ পড়ে তার চোখ আটকে যায়।

> “তুমি নামায কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তভাগে এবং রাতের প্রথমাংশে। সৎকাজসমুহ অন্যায় কাজসমূহকে দূর করে দেয়।” (সূরা হুদ ১১৪)

এই আয়াতের সাথে একটি হাদীস সংযুক্ত ছিল—এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে অনুরূপ অপরাধ স্বীকার করেছিলেন এবং নবীজি (সা.) তাকে শাস্তি না দিয়ে এই আয়াত শুনিয়ে দেন।

বাবুলের মনে কিছুটা প্রশান্তি নামে। তারপরেও চলে যান

মাওলানা অনুপম হোসেনের কাছে…

পরদিন ফজরের নামাজের পর বাবুল হোসেইন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও ইসলামিক স্কলার মাওলানা অনুপম হোসেনের কাছে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ে।

– “মাওলানা সাহেব, আমি আপনার সময়টা একটু চাই।”

– “বল ভাই, মন খুলে বলো। আল্লাহর কাছে গোনাহ লুকিয়ে রাখা যায় না, কিন্তু অনুতপ্ত মন সবকিছু জিতে নিতে পারে।”🌺

বাবুল হিমহিম গলায় বলল, “আমি মাদীনার এক সাহাবির মতোই ভুল করেছি… একজন মেয়েকে স্পর্শ করেছি, কিন্তু আমি এখন ভীষণ অনুতপ্ত।”

মাওলানা হেসে বললেন, “তাহলে তুমি সেই ব্যক্তির উত্তরাধিকারী যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল—‘আমি তার সাথে সহবাস ব্যতীত সবই করেছি।’ কিন্তু নবীজি তখন বলেননি, ‘তোমার পাথর মারা লাগবে’, বরং এক আয়াত শুনিয়ে বলেছিলেন—তোমার নিয়মিত নামাজ, তাওবাহ আর ভালো কাজ তোমার ভুলগুলোকে ধুয়ে ফেলবে।”🌹

বাবুল বিস্ময়ে তাকিয়ে বলল, “সত্যি কি, মাওলানা সাহেব? আমি কি এখনও ভালো হতে পারি?”

– “তুমি তো এখনই ভালো, কারণ তুমি অনুতপ্ত। তুমি এসেছো ক্ষমা চাইতে, রাস্তা পাল্টাতে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তো তখন বলেছিলেন—‘এটা শুধু তার জন্য নয়, বরং সবার জন্য।’ তোমার জন্যও।”💐

মাওলানা বাবুল হোসেইনকে বলেন…

অনুপম হোসেন বললেন, “তুমি এখন নিয়মিত নামাজ কায়েম করো, কুরআন তিলাওয়াত করো, আর কখনো একাকীত্বে শয়তানের সুযোগ দিও না। আল্লাহ তোমার অন্তরের তাকওয়া দেখেন, শুধু কাজ নয়।”

বাবুল মাথা নোয়াল, চোখে পানি এসে গেছে।

– “মাওলানা সাহেব, আমি আবার নামাজের পথে ফিরব। আমি আর পেছনে ফিরব না।”🪷

শেষ দৃশ্য:

কয়েক মাস পরে, অনুপম হোসেন জুমার খুতবায় বললেন—

“ভাইয়েরা, যখন কেউ গোনাহ করে, লজ্জা আর অনুতাপে ভেঙে পড়ে, তখন সে এক বিশেষ মেহমান হয় আল্লাহর দরবারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যারা অনুতপ্ত হয়, তারা যেন গোনাহই করেনি।”

✓গুনাহ করার পর কেউ তওবা করলে তাকে তোমরা খোটা দিও না এ কথাটি মাওলানার সাহেব সকলকে বললেন।

মসজিদের এক কোণায় বসা বাবুল হোসেইন মাথা নিচু করে অশ্রুভেজা চোখে আল্লাহর কাছে দোয়া করছিল—

“হে আল্লাহ, তুমি যেমন একজন সাহাবিকে ক্ষমা করেছো, তেমন করেই আমাকে ক্ষমা করো। আমি তোমার দয়ার আশ্রয়ে এসেছি…”

✓মানুষের গোনাহ ঢেকে রাখা সওয়াবের কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে গুনাহ ঢেকে রাখে তার গুনাহ ঢেকে রাখবেন।

শিক্ষণীয় বিষয়:

এই গল্প আমাদের শেখায় যে, গোনাহ হতেই পারে। মানুষ ভুল করে। কিন্তু অনুতাপ, তাওবা এবং নিয়মিত নামাজ সেই গোনাহকে ধুয়ে ফেলে দেয়। এটি শুধু সাহাবির জন্য নয়, বরং আমাদের সকলের জন্য।

> “নিশ্চয়ই ভালো কাজ মন্দ কাজকে দূর করে দেয়।”

(সূরা হুদ: ১১৪)

সমাপ্ত।

✍️

রচনায়:মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺

আরবি:প্রভাষক বলদীআটা ফাজিল মাদ্রাসা ধনবাড়ী টাঙ্গাইল জেলা