ঘোমটার নিচে গার্ডিয়ান বিড়াল
আরাফাতুল ইসলাম
বিয়ের পর প্রথম রাত। ঘর ফুলে ভরা, আলো নরম। কিন্তু ঘরের বাতাসে একটা চাপা ভয় মিশে আছে। সেটা একমাত্র বর আরাফাতই বুঝতে পারছে। কারণ… বউ সিনথিয়া আপু। হ্যাঁ, তার কলেজ লাইফের প্রাক্তন সিনিয়র ম্যাডাম!
ঘরে ঢুকেই আরাফাত চেয়ার টেনে এক কোণায় বসে পড়ল। মুখে শুদ্ধ ভদ্রতার ছাপ
– আপু… মানে সিনথিয়া… মানে তুমি…
সিনথিয়া হালকা হেসে বলল,
– এইটা কী? এখনো ‘আপু’ বলছো? বিয়ে করেছো বউকে না রেগুলার ক্লাসরুমের ক্লাস ক্যাপ্টেনকে?
আরাফাত ঘেমে একাকার।
– না না মানে… তুমি এত সিনিয়র… আমিও তো তোমার হাতে একবার স্ল্যাপ খেয়েছিলাম… হাহা… মনে আছে?
সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলল,
– হ্যাঁ, খেয়েছিলে, কারণ তুমি পিছনের বেঞ্চে বসে লাভ লেটার লিখছিলে! এখন বলো, বাসর রাতেও কি চুপচাপ বসে থাকবে, নাকি কিছু রোমান্টিক বলবা?
আরাফাত বলল,
– আমি তো ঠিক করছিলাম, তোমার জন্য আমার লেখা ‘নীরব প্রতিধ্বনি’ বইটা বাসরে উপহার দিবো… কিন্তু তুমি তো বই ছুঁয়ে বললে ‘কবিতা পড়ে ঘুম আসে’!
সিনথিয়া জিভ কেটে বলল,
– আরে ছাই! বাসর রাতেও তুমি কবিতা! নাকি ঘুমের ওষুধ?
আরাফাত মুচকি হেসে বলল,
– তোমার জন্য একটা কবিতা লিখছি…
‘সিনিয়র যখন হয় জীবনসঙ্গী,
বাসর হয় ভয় আর ভজহর মিশ্র বাঁচার সংকেত দিব্যি।’
সিনথিয়া এবার বালিশ ছুঁড়ে মারল।
– এই কবি সাহেব, চুপ করে আসো এখানে!
সিনথিয়া খুব রেগে গেছে আরাফাত কাপা কাপা গলায় বলল
— জী আসছি
সিনথিয়া গম্ভীর গলায় বলে,
— আরাফাত, এক মিনিট… তোমার একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিতে চাই।
আরাফাত হতবাক,
— কি পরীক্ষা আপু—I mean… সিনথিয়া?
সিনথিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
— এই ঘরে একটা বিড়াল আছে। ওকে ধরো। বিড়াল ধরতে পারলে, বিড়াল মারতেও পারবা!
আরাফাত চোখ বড় বড় করে ঘরের কোণে তাকাল। সত্যিই একটা বিড়াল বসে আছে!
সে ফিসফিস করে বলল,
— বিয়ের আগে বন্ধু জাহিদ বলছিল বাসর রাতে বিড়াল মারা জরুরি, কিন্তু এতটাই লিটারেল হবে ভাবিনি!
বিড়াল ধরতে গিয়ে ধুমধাড়াক্কা শুরু। টেবিল উল্টে গেল, পানির গ্লাস পড়ে ভেঙে গেল, আর বিড়াল হরহামেশা ঝাঁপিয়ে ঘর থেকে পালাল।
আরাফাত হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
— আমি তো বিড়াল না, নিজের ইজ্জত মারতে আসছি মনে হয়!
সিনথিয়া হেসে গড়িয়ে পড়ে,
— শোনো, বিড়াল মারার মানে বুঝতে শিখো আগে, তারপর বাসর রাত করো!
সেই রাত থেকে ‘বিড়াল মারা’ শব্দটা আরাফাতের জীবনের ট্রমা হয়ে রইল। এখনো বিড়াল দেখলে তার ঘামে ভেজা স্মৃতি জেগে ওঠে!