• সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন

ফুচকা ও প্রেম ✍️ এন আই বিপুল।

মোঃ নজরুল ইসলাম বিপুল / ৩০ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

সূর্য তখনো রাজশাহীর পদ্মার বুকে তার শেষ আলোটুকু ঢেলে দেয়নি। টি-বাঁধের টিলার উপরে বসে আছে সজল আর মেহনাজ। পশ্চিমের আকাশটা রক্তিম আভায় রাঙা, আর তার উপরেই গাঢ় ছাইরঙা মেঘের আনাগোনা। নাটোর থেকে আসা সজল আর নওগাঁর মেহনাজ, দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাদের পরিচয়ের শুরু ক্লাসরুমে, আর ভালোবাসার শেকড় গেড়েছে এই পদ্মার পাড়েই।

হাতে মেহনাজের অর্ধেক খাওয়া ফুচকার প্লেট। প্লেটটা সজলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মেহনাজ বলল, “আর একটাই আছে, তুমি খাবে?”

সজল মুচকি হেসে বলল, “না। আজকের এই ফুচকার প্লেটের সবটাই তোমার প্রাপ্য।”

ফুচকাওয়ালা মামা পাশেই দাঁড়িয়ে হাসছিলেন। তিনি এমন হাজারো ভালোবাসার গল্পের নীরব সাক্ষী। পদ্মার বুকে জন্ম নেওয়া প্রেমের গল্প, যা টি-বাঁধের ফুচকার প্লেটে শেষ হয় অথবা নতুন করে শুরু হয়। সজল আর মেহনাজের সম্পর্কটা ও তেমনই ছিল।

সজল বলল, “সবার মতো আমরাও কোনোদিন এই পদ্মার পাড়েই দাঁড়িয়েছিলাম। একটা ফুচকার প্লেট নিয়ে। আর আজ দেখো, এই পদ্মার পাড়েই আমাদের গল্পটা শেষ হচ্ছে।”

মেহনাজ ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার চোখ ছলছল করছে। “কেন এমন হল?”

“কারণ, আমরা নিজেদের স্বপ্নের কাছে পরাজিত হয়েছি,” সজল বলল।

“আমাদের স্বপ্নগুলো কি তবে ছোট ছিল?”

“না, আমাদের স্বপ্নগুলো অনেক বড় ছিল। কিন্তু আমরা সেই স্বপ্নগুলোকে পূরণ করতে পারিনি। সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে হার মেনেছি। তাই আজ আমাদের এই পথচলাটা এখানেই শেষ হচ্ছে।”

মেহনাজ মাথা নিচু করে রইল। তার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। সজল তার হাতটা ধরে বলল, “কাঁদছ কেন?”

“আমি তোমার জন্য কাঁদছি,” মেহনাজ বলল।

“আমার জন্য কাঁদলে কি হবে?”

“আমি তোমার জন্য কাঁদছি, কারণ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছ।”

“আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না। আমরা দুজন দুজনের স্বপ্নগুলো নিয়ে বাস্তবতার কাছে পরাজয় মেনে নিচ্ছি। এটাই বাস্তব।”

তাদের এই কথার মাঝেই ফুচকাওয়ালা মামা কাছে এসে বললেন, “যাওয়ার সময় শেষ বিদায়ের ফুচকাটা খেয়ে নাও, বাবা।”

“ফুচকা?” মেহনাজ অবাক হয়ে বলল।

“হ্যাঁ, এই ফুচকাটা তোমরা একসঙ্গে খাও। কারণ, এই ফুচকাটা শুধু ফুচকা নয়, এটা ভালোবাসার গল্প। এটা তোমাদের গল্পের সাক্ষী।”

সজল আর মেহনাজ একে অপরের দিকে তাকাল। দুজনের চোখে অশ্রু ঝরছিল। তাদের ভালোবাসার প্রথম সাক্ষী, সেই পদ্মার পাড়ের ফুচকাওয়ালা। আর আজ তাদের শেষ বিদায়ের সাক্ষীও সেই ফুচকাওয়ালা।

সজল বলল, “চলো, আমরা এই ফুচকাটা খাই। এটা আমাদের শেষ স্মৃতি হোক।”

মেহনাজ আর সজল শেষবারের মতো একসঙ্গে ফুচকা খেল। সেই ফুচকার স্বাদে ছিল পদ্মার জলের মতো নোনা, আর জীবনের তিক্ততা। ফুচকাটা শেষ করে সজল মেহনাজের হাতটা ধরে বলল, “ভালো থেকো।”

মেহনাজ আর কিছু বলল না। শুধু সজলের চোখে চোখ রেখে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইল। তাদের চোখের ভাষায় কত গল্প, কত আবেগ। সেই গল্পগুলো আর কোনোদিন বলা হবে না।

সজল উঠে দাঁড়াল। শেষবারের মতো মেহনাজের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাদের দেখা হবে, আরেক জীবনের জন্য।”

সজল চলে গেল। মেহনাজ সেখানেই বসে রইল। তার চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝরছিল। সেই ফুচকাওয়ালা মামা কাছে এসে মেহনাজের কাঁধে হাত রেখে বললেন, “মা, কিছু ফুচকা খাবে?”

মেহনাজ মাথা নেড়ে না করল।

ফুচকাওয়ালা মামা বললেন, “যাও, মা। ফিরে যাও। আরেকটা গল্পের জন্য অপেক্ষা কর।”

মেহনাজ উঠে দাঁড়াল। হেঁটে চলল। তার পথটা ছিল কাঁটাযুক্ত। তবুও সে হাঁটছিল। কারণ, তার স্বপ্নের পথচলা এখনো শেষ হয়নি।

 

~@বিপুল….


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন