আমার জীবনপথ খুব মসৃণ ছিল না। চলার পথে আমাকে অনেক জুলুম আর অবিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেই আঘাতগুলো, সেই যন্ত্রণাগুলো— সব আমার স্মৃতিতে গেঁথে আছে। কিন্তু আজ যখন আমি পেছনে ফিরে তাকাই, তখন একটি অদ্ভুত সত্য দেখতে পাই, যা আমাকে শান্তি দেয়: আমার সাথে যারা অন্যায় করেছিল, তাদের অনেককেই আমি অস্তিত্বহীন হতে দেখেছি।
এই "অস্তিত্বহীন" হওয়াটা হয়তো শারীরিক মৃত্যু নয়, আবার শুধুই ক্ষমতার পতনও নয়। হয়তো তারা তাদের সম্মান, প্রতিপত্তি বা মানসিক শান্তি হারিয়েছে। দেখেছি কীভাবে সময়ের চাকা ঘুরে যায় এবং প্রকৃতি তার নিজের বিচার কার্যকর করে। এটিই প্রমাণ করে যে অবিচার কখনও টিকে থাকে না; হয়তো ধীর গতিতে, কিন্তু অনিবার্যভাবে তার ফল ভোগ করতেই হয়।
কিন্তু এই দৃশ্য দেখেও আমার ভেতরে কোনো বিজয়োল্লাস জাগে না, বরং জাগে এক গভীর শান্তি। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে মনকে ভারী করে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি অবাক হয়ে ভাবি, যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছিল, তাদের প্রতি কেন যেন আমার মনে কোনো ক্ষোভ বা বিদ্বেষ পুষে রাখিনি। হয়তো অবচেতন মনে আমি জানতাম, তাদের বিচার করার ভার আমার নয়, তা মহাকালের হাতেই দেওয়া শ্রেয়। ক্ষোভ পুষে রাখা মানে অন্যকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নিজের ভেতরেই এক কারাগার তৈরি করা— আমি সেই মুক্তি চাইনি।
আমার এই অভিজ্ঞতা আমাকে একটি চূড়ান্ত প্রার্থনার দিকে চালিত করেছে। আমি সেই পথে পা বাড়াতে ভয় পাই, যে পথে হেঁটে একদিন আমার ওপর জুলুমকারীরা তাদের পরিণতি দেখেছিল। আমি জানি, ক্ষমতা বা সুযোগের দম্ভ মানুষকে অন্ধ করে দিতে পারে এবং একসময় আমিও যেন জুলুমকারী না হয়ে যাই— সেই ভয় আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
তাই আজ আমার সবচেয়ে আন্তরিক প্রার্থনা শুধু আমার নিজের মুক্তির জন্য নয়, বরং আমার নৈতিকতার সুরক্ষার জন্য।
হে আল্লাহ, তুমি আমাকে জুলুমকারী হওয়া থেকে রক্ষা করো।
ক্ষমাশীল হওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু ন্যায়পরায়ণ থাকা আরও বেশি কঠিন। আমি চাই, আমার অন্তর যেন সবসময় স্বচ্ছ থাকে, যেন ক্ষমতা বা রাগের বশে আমি কারও জীবনে যেন দুঃখের কারণ না হই। অন্যের ধ্বংস দেখে আমি মুক্তি পাইনি, মুক্তি পেয়েছি শুধু আমার অন্তরের ক্ষমা আর এই ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে। এই পথই আমার কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ পাথেয়।
প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।
সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।