• শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম
✍️শিরোনাম: মিথ্যার আগুন ও সত্যের আলো (গ্রামীন জীবনের ভুল বোঝাবুঝি ও সহীহ হাদীসের শিক্ষাভিত্তিক গল্প), রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২৫/১০/২০২৫ 💐পূর্ব পাড়ার মানতুর ছাগল খামার: এক স্বপ্নের উত্থান। ✍️রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺তারিখ:২০/১০/২০২৫ শিরোনাম:ইব্রাহিম খায়ের সোহাগ মাখা বলদ পালন।, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২৫/১০/২০২৫ কবিতা- বেস্ট ফ্রেন্ড -কবি-সাকিলা ইসলাম 🖋️ সনেট: চুলকানির বাম আর নারীনাম🙆 মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌼 প্রভাষক: আরবি বলদিআটা ফাজিল স্নাতক মাদ্রাসা। শিরোনাম: মানসিক শান্তি*  *রচনাঃ মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:২৩/১০/২০২৫ Master’s of Book – মাস্টার্স অব বুকস” আসছে আগামী ১৫ নভেম্বর। বাংলার কথা। শিরোনাম;বেসরকারি শিক্ষকের কান্না রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১৮/১০/২০২৫ 💐শিরোনাম: কৈডোলার স্মৃতিবিজড়িত সকাল ✍️লেখা: আপন ইতিহাস নির্ভর ছোট গল্প 🖋️রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:১৮/১০/২০২৫ কবিতাঃ- মান ইজ্জত সারা ✍️- রফিকুজ্জামান রফিক।

শিরোনাম:ইব্রাহিম খায়ের সোহাগ মাখা বলদ পালন।, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২৫/১০/২০২৫

Reporter Name / ৩৩ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫

শিরোনাম:ইব্রাহিম খায়ের সোহাগ মাখা বলদ পালন।
(একটি লোকজ জীবনের ছোটগল্প)

নাটোরের বনপাড়া উপজেলার পাশে ছোট্ট গ্রাম কাশিয়াকাটা। মাটি উর্বর, মানুষ পরিশ্রমী, আর প্রকৃতি উদার। এখানকার মানুষ গবাদিপশু পালনে অভ্যস্ত। সকালে ঘুম ভাঙে  মুয়াজ্জিনের আজান শুনে। পাখিদের কোলাহল আর বিকেলে মাঠ ভরে থাকে মহিষের হাম্বা  আওয়াজে। এমনই গ্রামে বাস করতেন ইব্রাহিম খাঁ—সাধারণ কৃষক, কিন্তু মনটা ছিল অতি কোমল আর স্নেহময়। তার পাশে ছিলেন ধমকপাড়ার আরেক কৃষক হাবিবুল্লাহ, যারও ছিল গবাদিপশু পালার অদম্য শখ।

দুইজনই একদিন ঠিক করলেন—“চলো, মহিষ পুষি। মহিষের দুধ বিক্রি করব, আর তাদের দেহের জোরে মাঠে কাজও হবে।” রাম ছাগল পোষা ও তাদের অদম্য শখ। ছাগলের ভ্যা ভ্যা শব্দে মাঠ ভরে ওঠে।
এভাবেই শুরু হয় তাদের মহিষ পালার গল্প।

১. আদরের শুরু

ইব্রাহিম খাঁর বাড়িতে প্রথম যখন কালোচে রঙের একজোড়া মহিষ আসে, তখন তার চোখ-মুখে আনন্দের ঝিলিক। যেন ঘরে নতুন সন্তান এসেছে। স্ত্রী ফাতেমা তখনও অবাক হয়ে বলেছিলেন—
—“এই মহিষগুলা কেমন জানি বুনো বুনো লাগে!”
ইব্রাহিম হেসে বলেছিলেন,
—“বুনো না রে, এরা আমার আদরের সন্তান হইয়া যাবে দেখবি!”

তিনি প্রতিদিন ভোরে উঠে নিজ হাতে মহিষের গা ধুয়ে দিতেন। ঘাস খাওয়াতেন, কখনো কখনো গলায় মলয় পাগড়ি পরিয়ে বলতেন—
—“তুমি আমার বাপের সম্পদ, তোমার দুধে আমার বাচ্চা বড় হইব।” আর মাঝে মাঝে সোহাগ করে বলদ পোষতেন ।

তার যত্নে মহিষগুলো দিন দিন মোটা-তাজা হয়ে উঠল। হাবিবুল্লাহও তার মহিষ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। দুইজনেই প্রতিদিন মাঠে মহিষ চরাতে যেতেন। বিকেলে যখন মহিষগুলো পানিতে গা ভিজিয়ে রাখত, তখন দুজনের গল্প হতো—কখনো জীবনের সুখ-দুঃখ নিয়ে, কখনো দাম নিয়ে, কখনো বা স্বপ্ন নিয়ে।

২. ইব্রাহিম খায়ের সোহাগ মাখা বলদের গল্প।

কিছুদিন পর ইব্রাহিমের মনে এক নতুন ভাবনা জাগল—“মহিষ আছে ঠিকই, কিন্তু একটা বলদ থাকলে চাষাবাদে সুবিধা হতো।”
তাই একদিন তিনি বাজারে গিয়ে একটা ছোট্ট দেশি বলদ কিনে আনলেন। কালচে বাদামী গায়ের রঙ, চোখে দুষ্টুমি, কিন্তু আচরণে মিষ্টি। বলদটির নাম “সোহাগমাখা দরদে রাখলেন।

প্রথম দিন থেকেই ইব্রাহিম তাকে যেন নিজের ছেলে হিসেবেই আগলে রাখলেন। নিজের হাতে খড় কেটে খাওয়াতেন, শীতের সকালে কাঁথা দিয়ে ঢেকে রাখতেন। যেন আদরের বলদের কাশি না লাগে। বলদের গলায় নতুন দড়ি পরাতেন, মাঝে মাঝে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।

গ্রামের মানুষ হাসাহাসি করত—
—“ইব্রাহিম, তুই কি বলদ না মানুষ পোষছিস?”
ইব্রাহিম হেসে বলতেন—
—“যে পশু মানুষের উপকার করে, তার প্রতি ভালোবাসা দেখানোই তো আসল মানুষত্ব।”

৩. দিন বদলায়, দাম বাড়ে

দিন যেতে থাকে। ইব্রাহিমের আদর আর যত্নে সোহাগ করে বলদটি বড় হতে লাগল। তার গায়ের পেশি ফুলে উঠল, চামড়া চকচক করে উঠল রোদের আলোয়। মাঠে কাজ করার সময় সোহাগের গতি দেখে সবাই অবাক হতো। একদিন গ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আজহার এসে বললেন—
—“ইব্রাহিম ভাই, এই  হার বলদটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আপনি যদি বিক্রি করেন, আমি দেড় লক্ষ টাকা দিতে রাজি।”

ইব্রাহিম স্তম্ভিত।
দেড় লক্ষ টাকা—একজন কৃষকের কাছে এটা বিশাল অঙ্কের টাকা। কিন্তু সেই টাকার চেয়েও তার কাছে সোহাগ মাখা আর বলদটি ছিল আদরের, হৃদয়ের।

তিনি স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করলেন। ফাতেমা বললেন—
—“টাকাটা পেলে আমাদের ঘর ঠিক করা যাবে, ঋণ শোধ হবে। কিন্তু তুমিই তো বলদের সঙ্গে এমন মিশে গেছো, ওকে ছাড়তে পারবে?”
ইব্রাহিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন—
—“জানি না রে, মন চায় না। কিন্তু সংসারের টানও তো আছে।”

৪. আবেগ আর বাস্তবতার লড়াই

পরের দিন সকালে ইব্রাহিম মাঠে গেলেন। সোহাগের সেই হার বলদটি ঘাস খাচ্ছে, মাঝে মাঝে মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাচ্ছে। ইব্রাহিম ভাবলেন,
“এই প্রাণীটা তো আমার কথা বোঝে। বিক্রি করে দিলে কি ও কষ্ট পাবে না?”

তারপরও সংসারের কথা মাথায় এলো। ছেলে কলেজে পড়ে, মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। টাকার প্রয়োজন। তাই তিনি আজহারের প্রস্তাবে বলদটি বিক্রি করতে সম্মতি দিলেন।

কিন্তু ঠিক সেই দিন বিকেলে বলদের হঠাৎ কাশি শুরু হলো।
“খোঁ খোঁ” শব্দে গোয়ালঘর কাঁপে। ইব্রাহিম ছুটে এলেন, গলা ছুঁয়ে দেখলেন—বলদের গলা গরম। চোখে পানি এসে গেল তার।
—“আহ রে আমার সোহাগ! আমার দেড় লক্ষ টাকার বলদ, তুই কাশতেছিস! আল্লাহ, আমি তোকে বিক্রি করার কথা ভাবছি, তাই কি তুই কষ্ট পাইছিস?”

তিনি সেই রাতে ঘুমাতে পারেননি। বারবার উঠে বলদের গায়ে হাত রাখেন, পানি খাওয়ান, নরম গলায় কথা বলেন—
—“তুই ভালো হইয়া যা রে আমার আদরের হার বলদ । কি সোহাগেই না আমি তোকে লালন পালন করেছিলাম। আমি আর তোকে বিক্রি করব না।”

৫. গ্রামের মানুষের কানাঘুষা

পরের দিন হাবিবুল্লাহ এসে বললেন—
—“ইব্রাহিম ভাই, শুনছি আপনি বলদ বিক্রি করবেন না?”
ইব্রাহিম মৃদু হেসে বললেন—
—“না ভাই, টাকার চেয়ে ভালোবাসা বড়। এই সোহাগ মাখা হার বলদ আমার ঘরের মতো, সন্তানসম।”
হাবিবুল্লাহ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন—
—“আপনার মনটা আলাদা। আজকাল তো মানুষ টাকার জন্য মা-বাবা বিক্রি করতে পারে, আর আপনি হার বলদ ছাড়তে পারলেন না।” তাও কেউ ৭০ হাজার কি আবার দেড় লক্ষ টাকা দাম করতেছে।

ইব্রাহিম হাসলেন—
—“সব কিছু বিক্রির নয়, ভাই। ভালোবাসার দাম টাকা দিয়ে হয় না।”

৬. সোহাগের আরোগ্য

ইব্রাহিম গ্রামের কবিরাজকে ডাকলেন। তিনি গাছের ছাল, কিছু ভেষজ দিয়ে বলদের গলা মালিশ করলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই সোহাগ আগের মতো চঞ্চল হয়ে উঠল। ইব্রাহিমের চোখে তখন তৃপ্তির অশ্রু—
—“আলহামদুলিল্লাহ, আমার আদরের সোহাগ মাখা হার বলদ আবার ভালো হইয়া গেছে!”

তিনি এবার প্রতিজ্ঞা করলেন, জীবনে যত কষ্টই আসুক, এই বলদটিকে আর বিক্রি করবেন না।
প্রতিদিন নামাজের পর দোয়া করতেন—
“হে আল্লাহ, যেভাবে এই প্রাণীর প্রতি আমার দয়া, তেমনি তুমি আমাদের প্রতি দয়া করো।”এইতো কিছুদিন আগে করোনার সময় কাশি এলো এলাকা সহ সারা পৃথিবীতে এই সর্দি-কাশির মাধ্যমে করোনা ব্যাধি ছড়িয়েছিল যার কারণে সারা পৃথিবীটা আতঙ্কগ্রস্থ হয়েছিল তবুও এত দুঃখের দিনেও তিনি তার এই আদরের দেড় লক্ষ টাকা দামের হার বলদ টা বিক্রি করতে সম্মত হননি।

৭. ইব্রাহিমের শিক্ষা

একদিন গ্রামের হাটে এক তরুণ কৃষক এসে ইব্রাহিমকে বলল—
—“চাচা, আপনি তো সহজেই দেড় লক্ষ টাকা পেতে পারতেন। কেন বিক্রি করলেন না?”
ইব্রাহিম মুচকি হেসে বললেন—
—“বাবা, জীবনে সব লাভ টাকা দিয়ে হয় না। একটা প্রাণীর ভালোবাসা, তার বিশ্বস্ততা, এগুলা টাকার চেয়ে অনেক দামি। আল্লাহ আমাদের দয়ালু করেছেন, আমরা যেন তাঁর সৃষ্টির প্রতিও দয়ালু হই।”

তরুণটি চুপ করে রইল। তার চোখে শ্রদ্ধা ভরে উঠল এই বৃদ্ধ কৃষকের প্রতি।

৮. শেষ অধ্যায়

বছর খানেক পরে ইব্রাহিম বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন। মাঠে কাজ করতে পারেন না আগের মতো, কিন্তু প্রতিদিন সকালবেলা লাঠি হাতে গোয়ালঘরে যান। আদরের সোহাগ মাখা হার বলদটি তখনো জীবিত, কিছুটা বুড়ো, কিন্তু আগের মতোই চোখে ভালোবাসা।

ইব্রাহিম ধীরে ধীরে বলদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন—
—“তুই আমার দুলালের মত, আল্লাহ তোরে হেফাজত করুক।” আহারে এবার একটি গাভী কিনব যার দুধের পুষ্টিগুণে আমাদের পরিবারের সকলেই পুষ্টি সমৃদ্ধ হতে পারবে।

এক বিকেলে গ্রামের বাচ্চারা খেলতে খেলতে দেখে ইব্রাহিম বলদটি মাঠে ছেড়ে দিয়ে পাশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছেন। সূর্যের আলো পড়ছে তাদের ওপর, এক অপার্থিব শান্তি।

ইব্রাহিমের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সোহাগ মাখা হার বলদটি ছিল তার পাশে। মৃত্যুর আগে তিনি ফাতেমাকে বলেছিলেন—
—“যখন আমি থাকব না, আমার সোহাগ মাখা হার বলদটিকে  কেউ কষ্ট দিও না। ও যেন আমার কবরের পাশে থাকে।”

ফাতেমা প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন।
ইব্রাহিম চলে যাওয়ার পর গ্রামের মানুষ দেখল—প্রতিদিন সকালে ইব্রাহিম খার আদরের বলদটি কবরের পাশে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে, যেন প্রিয় বন্ধুকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

৯. গল্পের শিক্ষা

ইব্রাহিম খাঁর জীবনের এই গল্প শুধু এক কৃষক আর তার বলদের সম্পর্ক নয়, এটি এক নিখাদ ভালোবাসা ও মানবিকতার প্রতীক।
আজ যখন মানুষ স্বার্থের দৌড়ে ছুটছে, তখন ইব্রাহিমের মতো মানুষ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—
“প্রাণীর প্রতিও দয়া করা আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ।”
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—

> “যে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করে, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন।” (সহিহ বুখারি)

ইব্রাহিম হয়তো বড় মানুষ ছিলেন না, কিন্তু তার হৃদয় ছিল এক বিশাল বিদ্যালয়—যেখানে শেখানো হতো মমতা, বিশ্বস্ততা ও কৃতজ্ঞতার পাঠ। তিনি ছাগল পালন করতেন পাটি ছাগলের দুধ সহ গাভীর দুধের পুষ্টিগুনে পরিবারসহ সমাজকে আলোকিত করেছিলেন।

শেষে গ্রামের লোকেরা আজও বলে—
“ইব্রাহিম খাঁর মতো কেউ আর জন্ম নেবে না, যে হার বলদের মধ্যে সন্তান দেখেছিল, আর তার এমন সোহাগ মাখা বলদও আর হবে না, যে মানুষের মতো ভালোবাসতে জানত।” আসুন আমরা পশুপাখি লালন পালন করি ছাগল পালন করে ছাগলের চামড়া ও দুধের পুষ্টিগুণে সমাজকে আলোকিত করি।
আংশিক আরও আসছে——-

✍️-শেষ কলমে,
🖋️মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
💐প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা মান্দা, নওগাঁ।
Copyright ©️ All rights reserved by author maulana MD FARIDUL ISLAM.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন