ছোট গল্প:বইয়ের পাতায় লুকিয়ে থাকা বারোটি বছর।
ইকবাল চৌধুরীর গ্রামটির নাম ছিল শান্তিপুর। যেমন নাম, তেমনি রূপ। ভোরের আলোয় যখন পূর্বাকাশে লালচে আভা ছড়াতো, তখন যেন পুরো গ্রামটাই এক মায়াবী সাজে সেজে উঠতো। শান্তিপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুলকুল ধ্বনি তোলা ছোট একটি নদী। তার স্বচ্ছ জলে আকাশের প্রতিচ্ছবি আর দু’ধারের সবুজ গাছপালার ছায়া এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করতো। নদীর চরে কাশফুলের সারি যেন দিগন্তের এক সাদা দেয়াল। শরৎকালে সেই কাশফুলের দোলায় প্রকৃতি আরও মায়াবী হয়ে উঠতো।
এই শান্ত গ্রামেই একদিন ইকবাল ও রানীর এক নিষ্পাপ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাদের সম্পর্কটা ছিল নদীর স্রোতের মতোই সাবলীল, নির্ভেজাল। কোনো অনৈতিকতার কালিমা তাতে স্পর্শ করেনি, তাদের হৃদয়ের বন্ধন ছিল কেবল বিয়ের পবিত্র উদ্দেশ্যকে ঘিরে। ইতিহাসের পাতায় এমন অনেক গীতাঞ্জলি লিখা আছে অগ্রপথিক এর পাতায় জায়গা করে নিয়েছে।
একদিন ইকবাল তার মনের সব আবেগ একটি বইয়ের পাতায় পুরে দিল। বইটির উপরে সে লিখেছিল, ‘তুমি যদি আমাকে সত্যিই ভালোবেসে থাকো, তবে আমার এই বইটি গ্রহণ করবে। হ্যাঁ অথবা না, যেকোনো একটি উত্তর দেবে।’ সেই বইটিকে সে রানীর হাতে তুলে দেয়, তবে কোনো উত্তর আসেনি। বইটি নীরবে ফিরে এসেছিল ইকবালের কাছে, রানীর নীরবতাই ছিল তার উত্তর। সেই থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ইকবাল আর রানীর দেখা হয়নি, তাদের পথের বাঁক ভিন্ন দিকে চলে গিয়েছিল। প্রেমের গীতাঞ্জলি লিখে যেন প্রতিটি ইতিহাসের পাতায়।
এক শীতের সকালে, যখন গ্রামের মাঠগুলো কুয়াশার চাদরে ঢাকা, আর বন্ধুরা মিলে নদীর পাড়ে বসে উষ্ণতার খোঁজে আড্ডা দিচ্ছিল, তখনই ঘটে সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। রানী হঠাৎ সেখানে উপস্থিত হলো।২ বছর পর রানীর সাথে ইকবালের দেখা হলো। রানীর চেহারাতে মায়াবী রূপের রহস্য, তার চোখের তারায় সেই চেনা স্নিগ্ধতা এখনো অমলিন।
রানী সরাসরি ইকবালকে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?”
ইকবাল একমুহূর্ত থমকে গেল। পুরনো স্মৃতিগুলো এক ঝলকে তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। সেই বই, সেই নীরবতা, আর মাঝখানের দীর্ঘ একযুগ। মুহূর্তের দ্বিধা কাটিয়ে সে দৃঢ়ভাবে উত্তর দিল, “হ্যাঁ, করব।”
বন্ধুরা সকলেই আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলো, “আলহামদুলিল্লাহ!”।
এরপর তারা দু’জন আবার হারিয়ে গেল তাদের জীবনের পথে। কিন্তু এবার বিচ্ছেদ বহু বছর ।এক নতুন অধ্যায়ের সূচনায়। বছরের পর বছর ইকবালের চেতনায় ধরা পড়ে একের পর এক উপহারের ফিরে আসা, একটি বইয়ের নীরবতার উত্তর, আর এক সহজ ‘হ্যাঁ’-তে দুটি জীবনের নতুন গল্প শুরু হলো। কিন্তু বিচ্ছেদ বেদনা কেন শেষ হলো না। নীরব বইটির পৃষ্ঠাগুলো তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, যেমন শান্তিপুরের নদীটি নিরন্তর বয়ে চলে তার পুরোনো পথে।
✍️রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
🖋️প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা মান্দা নওগাঁ ।
তারিখ:২৪/১০/২০২৫
Copyright ©️ All rights reserved by author maulana MD FARIDUL ISLAM.