• সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
সুখবর… সুখবর….ফুটওয়্যার শিল্পে বিনামূল্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ: ভাতা ও চাকরির নিশ্চয়তা সহ ভর্তির সুযোগ। গল্প: মর্যাদার মাপকাঠি(ঠ্যাং এর নিচে) লেখক: মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:২৭/১০/২০২৫ ভ্রমণ কাহিনী:কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺  তারিখ:২৭/১০/২০২৫ শিরোনাম:ও আমার প্রিয়তমা স্ত্রী, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:২৭/১০/২০২৫ শিরোনাম:ছকিনার টোস্টের গল্প তারিখ:১৭/১০/২০২৫ 💐 শিরোনাম:আলতাদীঘির সোহাগীর  বাতি🕯️ , রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২৬/১০/২০২৫ ছোট গল্প:বইয়ের পাতায় লুকিয়ে থাকা বারোটি বছর। ✂️ছোট গল্প: কাঁচির লাইসেন্স (গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে রচিত একটি হৃদয়স্পর্শী গল্প) শিরোনাম:পুষ্প রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:২৬/১০/২০২৫ স্কীলস্ ফর ইন্ডাষ্ট্রি কম্পিটেটিভনেস এন্ড ইনোভেশন (SICIP)

ভ্রমণ কাহিনী:কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺  তারিখ:২৭/১০/২০২৫

Reporter Name / ২৬ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

ভ্রমণ কাহিনী:কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপ

রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺

তারিখ:২৭/১০/২০২৫

প্রস্তাবনা

ভ্রমণ মানুষের জীবনে এনে দেয় এক অনন্য আনন্দ ও প্রশান্তি। জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে, মনকে প্রফুল্ল করতে এবং জ্ঞানের দিগন্ত প্রসারিত করতে ভ্রমণের বিকল্প নেই। ভ্রমণ মানে শুধু স্থান পরিবর্তন নয়, বরং নতুন পরিবেশে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন, নতুন মানুষকে জানা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা গভীরভাবে উপলব্ধি করা। আমি নিজেও জীবনের নানা সময়ে ভ্রমণে বের হয়েছি। তবে জীবনের স্মরণীয় ভ্রমণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ। এই ভ্রমণ কেবল আনন্দই দেয়নি, বরং জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ করেছে।

✓প্রস্তুতি

আমি তখন হাসিল স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করছিলাম। শিক্ষকতা জীবনের প্রতিটি দিনই নতুন অভিজ্ঞতায় ভরা। একদিন হঠাৎ করেই সহকর্মী শিক্ষকবৃন্দের উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো একটি ভ্রমণে যাওয়ার। গন্তব্য হবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ—বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। খবরটি শুনেই আমার মন আনন্দে ভরে উঠল। দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছে ছিল নীল সমুদ্রের বুকে অবস্থিত এই বিস্ময়কর দ্বীপটি দেখব। সুযোগ এসে গেলে তো আর দেরি করা চলে না। তাই আমি দ্রুত ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

সফরে অংশ নিলেন বসাকপাড়া শাখার সকল শিক্ষক, মূল শাখার ডেফুলিবাড়ির শিক্ষকমণ্ডলী, তাদের পরিবার-পরিজন এবং হাসিল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিয় ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম ও তার সহধর্মিনী । এতো মানুষ মিলে ভ্রমণটা হবে জমজমাট—এই ভেবেই আনন্দ আরও বেড়ে গেল।

যাত্রার সূচনা: কক্সবাজারের পথে

আমাদের যাত্রা শুরু হলো কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে। সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে আর ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে ছুটে চলা আমাদের গাড়ি যেন একেকটা আনন্দ তরঙ্গ বয়ে আনছিল। কক্সবাজার পৌঁছে আমরা উঠলাম সমুদ্রসৈকতের পাশে অবস্থিত পরিচিত হোটেল সী ওয়ার্ল্ড-এ। সেখানে আমরা দুইদিন অবস্থান  করলাম।

কক্সবাজার মানেই তো অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। হোটেল রুমের বিশ্রাম গ্রহণের পর। সেখান থেকে  আগ্রহ জন্মেছিল  বিস্তীর্ণ সমুদ্রসৈকত আর অবিরাম ছুটে চলা ঢেউ দেখার। প্রথমবারের মতো এই দৃশ্য দেখা নয়, কিন্তু প্রতিবারই মনে হয় যেন নতুন কিছু দেখছি।

✓ইনানি বিচ:
ইনানি বিচে যাত্রা আমরা সকলে মিলে একটি গাড়িতে করে ইনানী-বিচে পৌঁছে গেলাম । ইনানী বিচে পৌঁছে আমরা সেখানকার সাগরের নানান দৃশ্য অবলোকন করলাম সন্ধ্যার দিকে ফিরলাম  হোটেল সী ওয়ার্ল্ডের দিকে। এটি
✓কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে।
✓এখানে রয়েছে প্রবালপাথরের স্তূপ, যা অন্য সৈকত থেকে একে আলাদা করেছে।
✓সাগরের নীল জল আর পাহাড়ি পটভূমি এটিকে অনন্য সৌন্দর্যে ভরিয়ে দিয়েছে।

-✓মহেশখালী দ্বীপ ভ্রমণ

কক্সবাজারে পৌঁছে প্রথমেই আমরা ঘুরতে গেলাম মহেশখালী দ্বীপে। নৌকায় করে দ্বীপে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই অনন্য। চারদিকে নীল জলের বেষ্টনী, হালকা বাতাসের দোল আর নৌকার খসখস শব্দ—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল আমরা যেন স্বপ্নরাজ্যে ভাসছি।

মহেশখালীর প্রকৃতি অপরূপ সুন্দর। পাহাড়, আর সবুজ বনানীতে ঘেরা এই দ্বীপের মানুষগুলোও বেশ সরল। এই দ্বীপের একটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে আদিনাথ মন্দির। আদিনাথ মন্দির থেকে আমরা হাঁটতে শুরু করেছিলাম আমাদের সাথে ছিলেন হাসিল স্কুল এন্ড কলেজের হেড টিচার কামরুল স্যার, কামাল স্যার ও আনা মামা আরো অনেকেই। এখানে জনপ্রিয় মহেশখালীর প্রাণের খিল্লি। আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, তারা মূলত লবণচাষ, মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। স্থানীয় মানুষের আতিথেয়তা আর সরলতা আমাদের মন ছুঁয়ে গেল।

✓কক্সবাজারের নানা দর্শনীয় স্থান

মহেশখালী ঘুরে এসে আমরা আরও ঘুরে দেখলাম কক্সবাজার শহরের নানা দর্শনীয় স্থান। রেলওয়ে স্টেশন, বাণিজ্য মেলা, বিভিন্ন শপিং সেন্টার—সব জায়গায় মানুষের ভিড় আর কর্মচাঞ্চল্য চোখে পড়ল। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল সমুদ্রসৈকতের সময় কাটানো।

সৈকতে দাঁড়িয়ে বিশাল ঢেউয়ের গর্জন শোনা, মানুষের দলবদ্ধভাবে সাগরে স্নান করার দৃশ্য দেখা, শিশুদের সমুদ্র তীরের ছুটে চলা বালুর মাঠে বিকেলের দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা—এসবই ছিল অমূল্য অভিজ্ঞতা। সূর্যাস্তের মুহূর্তে যখন সমুদ্রের জল লালচে সোনালি আভা ধারণ করল, তখন মনে হলো আমি যেন প্রভুর সৃষ্টির এক অলৌকিক খেলা প্রত্যক্ষ করছি।

✓সেন্টমার্টিন দ্বীপের পথে

অবশেষে এল প্রতীক্ষিত মুহূর্ত। আমরা রওনা দিলাম সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে। জাহাজে করে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা ছিল রোমাঞ্চকর। চারদিকে শুধু নীল জলরাশি, দূরে ভেসে চলা ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকা—মনে হচ্ছিল আমরা যেন সীমাহীন নীলিমার মাঝে হারিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জাহাজটি  ছিল কেয়ার সিন্দাবাদ এতে করে আমরা পৌঁছে যাচ্ছিলাম সেন্টমার্টিন দ্বীপের পথে জাহাজ থেকে লক্ষ্য করেছিলাম মায়ানমারের পাহাড়ের দৃশ্য নাফ নদী বিভিন্ন রঙের পাখি।

দ্বীপে পৌঁছে আমরা হোটেলে অবস্থান নিলাম। সমুদ্রের পাড়ে বসে খাওয়া-দাওয়া, হাঁটাহাঁটি আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সময় কেটে যাচ্ছিল। এখানে এসে মনে হলো, পৃথিবীতে স্বর্গ বলে যদি কিছু থাকে, তবে তা নিশ্চয়ই এরকম।

✓সাগরপাড়ের অভিজ্ঞতা

সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনা করার মতো নয়। একদিকে সমুদ্রের বিশালতা, অন্যদিকে নারকেল বাগান আর ঝিনুক-শাঁসের সমাহার। সকালে সূর্যোদয় আর রাতে ঝিকিমিকি তারা—সবকিছু মিলিয়ে দ্বীপ যেন এক স্বপ্নপুরী।

আমরা দেখলাম জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। সাগরপাড়ে বসে তাদের জাল টানতে দেখা ছিল সত্যিই মনোমুগ্ধকর। আর দ্বীপে ঘুরে বেড়ানো মানুষদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস আমাদের ভ্রমণকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলল।

✓ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণ

ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ছেড়া দ্বীপ ভ্রমণ। সেন্টমার্টিনের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই ছোট দ্বীপে পৌঁছাতে আমাদের বেশ হাঁটতে হয়েছে। তবে ক্লান্তির চেয়ে আনন্দই বেশি অনুভব করেছি। পথে পথে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ, ঝিনুক কুড়ানো শিশুদের হাসি—সবই এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

মাছের বাজার:
সাগরের বড় বড় মাছ , 🐙 অক্টোপাস,শামুক ,কাকড়া নানান কিছু বাজারে দেখা মিলল শাকসবজি নানান কিছু। ছোট্ট দ্বীপের একটি কথা না বললেই নয় এখানে কুকুরের সংখ্যা খুবই বেশি। যেদিকেই যাওয়া যায় সেখানেই প্রায় কুকুর রয়েছে মানুষের চাইতে নাকি এখানে অর্ধেক কুকুরের বাস। দ্বীপের ভিতর ঘুরাঘুরি করে ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে অল্প বয়সী অনেক ক্যামেরাম্যান।

ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্য এতই মুগ্ধকর যে, মনে হচ্ছিল আমি যেন স্বর্গীয় কোনো ভূমিতে এসে দাঁড়িয়েছি। এখানেই আমি, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক আশিক বিল্লা স্যার ও আবু বক্কর স্যার একসাথে এক মসজিদে নামাজ আদায় করলাম। ভ্রমণের পুরো সময়টাতেই যেখানে সুযোগ পেয়েছি, আমরা নামাজ আদায় করতে ভোলিনি। এতে ভ্রমণের আনন্দের পাশাপাশি আত্মিক প্রশান্তিও লাভ করেছি।

✓কেনাকাটা ও বিদায়ের প্রস্তুতি
সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া শেষে বের হলাম বাজারে। সেন্টমার্টিনের বাজারে শুঁটকি মাছের সুনাম বিশ্বজোড়া। অনেকেই বিভিন্ন রকমের শুঁটকি, ঝিনুক, শাঁস ও সামুদ্রিক শোপিস কিনলেন। আমিও বাদ গেলাম না। কিছু শুঁটকি মাছ এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করলাম।

দুই দিন কেমন করে যেন চোখের পলকে কেটে গেল। বিদায়ের সময় মনে হচ্ছিল, এই দ্বীপে আরও কয়েক দিন থেকে যাই। কিন্তু বাস্তবতা তো আর ইচ্ছার সাথে মেলে না। তাই আমরা সবাই মিলে ফিরে এলাম নতুন অভিজ্ঞতার ঝাঁপি নিয়ে।

✓তাইতো কবিতায় লিখেছি মনের গভীর থেকে-

-গ্রাম ছেড়ে মন উড়ে যায় দূর সমুদ্র পানে,
কক্সবাজারের ঢেউ ডাকে হৃদয়েরই টানে।
সেন্টমার্টিনে নীল জলরাশির অপার খেলা,
মহেশখালীতে শান্ত প্রকৃতি যেন দেয় ভেলা।

ইনানী বীচে রোদের আলো সোনালি রঙ ছড়ায়,
শঙ্খের সুরে ঢেউয়ের গান হৃদয় নীরব করায়।
খোদার নিদর্শন এ দৃশ্য অপূর্ব সৌন্দর্য,
ভ্রমণ শেষে বুকে জমে স্মৃতির স্বর্ণালংকার।

✓উপসংহার
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্য, সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটানো, আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা প্রত্যক্ষ করা এবং নামাজের মাধ্যমে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা—সব মিলিয়ে এই ভ্রমণ আমার হৃদয়ে অমলিন স্মৃতি হয়ে থাকবে।

মানুষ জীবনে যত ভ্রমণই করুক না কেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে একবার ভ্রমণ না করলে তার জীবনভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সত্যিই, ভ্রমণ মানুষকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, নতুন আলোয় পৃথিবীকে দেখতে শেখায়।

✍️ শেষ কলমে,
মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
তারিখ:১৪/০৯/২০২৫


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন