Print | 🍯 গল্প: “মধু মিয়ার ভালোবাসা” রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২৮/১০/২০২৫

প্রিন্ট এর তারিখঃ অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ১০:১০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ৭:৫২ এ.এম

🍯 গল্প: “মধু মিয়ার ভালোবাসা” রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২৮/১০/২০২৫

🍯 গল্প: “মধু মিয়ার ভালোবাসা”

রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺

তারিখ:২৮/১০/২০২৫

সেই অনেকদিন আগের কথা। তখন গ্রামে বিদ্যুৎও ঠিকমতো আসত না, সন্ধ্যার পরেই কুপির আলোয় মানুষ খেতে বসত, গল্পগুজব করত। পুবপাড়ার মধু মিয়া ছিলেন একটু আলাদা ধরনের মানুষ—রসিক, উদার, আবার খানিকটা সরলও বটে।

মধু মিয়ার একটাই কষ্ট—তার কোনো সন্তান নেই। এ নিয়ে তিনি খুব দুঃখ পেতেন। কত কবিরাজ, কত ঝাড়ফুঁক—সব করেছেন, কিন্তু কিছুতেই ফল মিলছিল না। শেষে গ্রামের লোকজন বলল,

“মধু ভাই, শহরের ওই পীর সাহেবের দরবারে যাও। তাঁর দোয়ায় নাকি অন্ধের চোখও ফেরে!”

বেচারা মধু মিয়া শেষমেশ গেলেন পীর সাহেবের দরবারে। ভক্তিভরে সালাম দিয়ে বললেন,

“বাবা, আমার জন্য দোয়া করেন—আমার যেন একটা সন্তান হয়।”

পীর সাহেব দোয়া করলেন, মধু মিয়া খুশি হয়ে ফিরে এলেন। মাস যায়, বছর যায়—সন্তান হয় না। আবার গেলেন পীরের দরবারে।

“বাবা, দোয়া করেছিলেন, কিন্তু এখনও কোনো সন্তান হয়নি।”

পীর সাহেব হেসে আবার দোয়া করলেন। তবুও কাজ হলো না। তৃতীয়বার গেলে পীর সাহেব একটু বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“বাবা, তুমি কি সাদী করেছ?”

মধু মিয়া মাথা নিচু করে বললেন,

“না বাবা, আমি তো এখনও সাদী করিনি।”

পীর সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন—

“সাদী করোনি, তবে ছেলে সন্তান হবে কেমন করে? আগে সাদী করো, তারপর দোয়া নাও!”

পীর সাহেবের সেই হাসি যেন কানে বাজতে লাগল। ফিরে এসে মধু মিয়া সত্যিই বিয়ে করলেন। বউ ছিলেন চঞ্চল, রসিক আর বুদ্ধিমতী। গ্রামের লোকেরা বলত—

“মধু মিয়া তো এবার সত্যি মধু পেয়েছে!”

গ্রামের জীবন চলতে লাগল তার নিজস্ব ছন্দে।

ভোরে পাখিরা কিচিরমিচির শব্দে ডাকত, মহিষগুলো খালের জলে নেমে দুপুরের রোদে সাঁতার কাটত।

পুকুরে পাঙ্গাস, তেলাপিয়া লাফিয়ে উঠত।

ধানক্ষেতে ব্যাঙের ডাক, দূরে শিয়ালের হুক্কা হুয়া—সব মিলিয়ে এক প্রাণবন্ত গ্রামীণ সকাল।

এমনই একদিন বিকেলে মধু মিয়া মাঠ থেকে ফিরে বসে চা খাচ্ছেন। হঠাৎ তার স্ত্রী এসে বললেন,

“শুনছো, তুমি কি সত্যিই আমায় ভালোবাসো?”

মধু মিয়া একটু হেসে গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

“ভালোবাসি? আমি তোমায় প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি!”

"তোমায় আমি ভালোবাসি প্রাণের চেয়েও বেশি

বুকটা চিরে দেখ তুমি ভালোবাসার পাখি।"

স্ত্রী তখন চোখ টিপে বললেন,

“তা হলে প্রমাণ দাও!”

মধু মিয়া একটু বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“কীভাবে?”

স্ত্রী ঘরের ভেতর থেকে একটা কাঁচি বের করে এনে বললেন,

“এখন তো ছুরি নাই, তাই এই কাঁচিটাই আছে। তোমার বুক চিরে দেখি কত ভালোবাসো!”

মধু মিয়া থতমত খেয়ে গেলেন।

“আরে না না! আমি তো কথার কথা বলেছি। এ আবার কেমন প্রমাণ!”

স্ত্রী হেসে গড়িয়ে পড়লেন। বললেন,

“তোমাদের পুরুষেরা কথার কথা বলেই তো সব চালায়!”

গ্রামের উঠানে তখন পাখিরা ডানায় ঝাপটাচ্ছে, সূর্যের শেষ আলো গাছের পাতা ছুঁয়ে পড়ছে। মধু মিয়া বউয়ের দিকে তাকিয়ে একটু লজ্জিত, একটু হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে বললেন,

“আচ্ছা, ঠিক আছে, প্রমাণ না দেই, তবু তুমি আমার ভালোবাসা বিশ্বাস করো—এই তো জীবনের সুখ।”

সেই সন্ধ্যায় গ্রামে গল্প ছড়িয়ে পড়ল—

“মধু মিয়া নাকি বউকে ভালোবাসে এতটাই যে কাঁচি দেখেই ভয়ে পালিয়েছে!”

সবাই হাসল, কিন্তু সবাই জানত—এই সরল ভালোবাসাই আসলে জীবনের আসল সৌন্দর্য।

কারণ ভালোবাসা বুক চিরে দেখা যায় না, ভালোবাসা অনুভবে বোঝা যায়।

🖋️ মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম

সাবেক শিক্ষক হাসির স্কুল এন্ড কলেজ।

তারিখ:২৮/১০/২০২৫

Copyri

প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।

সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।

সাগরিকা প্রকাশনী কতৃক সংরক্ষিত