Print | 🍌 মধুর গল্প: ঐক্যের বরকত রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:৩১/১০/২০২৫

প্রিন্ট এর তারিখঃ নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১২:০৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ১২:৪৮ এ.এম

🍌 মধুর গল্প: ঐক্যের বরকত রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:৩১/১০/২০২৫

🍌 মধুর গল্প: ঐক্যের বরকত

অনেকদিন আগের কথা। এক গভীর বনে বাস করত নানা রকম পশুপাখি—হরিণ, খরগোশ, পাখি, বানর, এমনকি কিছু বন্য কুকুরও। কুকুরগুলো ছিল খুব হিংস্র প্রকৃতির। তারা একে অপরের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করত, কখনো খাবার নিয়ে, কখনো অল্প একটু পানি নিয়েও মারামারি শুরু হয়ে যেত।

একদিন তীব্র রোদে সারা বন শুকিয়ে গেল। পানির অভাবে সব প্রাণী কষ্টে ছিল। অবশেষে কুকুরগুলো একটি ছোট জলাশয় খুঁজে পেল। কিন্তু সেখানে ছিল মাত্র একটি সরু ঘাট, যেখানে একসাথে দুইটির বেশি কুকুর নামলে পানি ঘোলা হয়ে যেত।

তাই একে একে পানি খাওয়ার জন্য তারা নামতে লাগল। প্রথমে একটি কুকুর নামল, তার কিছুক্ষণ পরই আরেকটি নামতে চাইল। মুহূর্তেই শুরু হলো তর্ক—কে আগে খাবে, কে পরে! তারপর তৃতীয় কুকুর এসে বলল, “তোমরা ঝগড়া বন্ধ করো, আমি আগে এসেছি।” কথা কাটাকাটিতে মুহূর্তেই মারামারি শুরু হয়ে গেল।

ঠিক তখনই উপরের আকাশে একদল কাক উড়ছিল। তারা এই দৃশ্য দেখে হাসতে লাগল এবং নিজেদের মধ্যে বলতে লাগল,
—“এই কুকুরগুলো এখন মারামারি করুক, যেই মারা যাবে, আমরা তাদের দেহ খেয়ে নেব। আল্লাহ আমাদের রিজিক এভাবেই পৌঁছে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহই রাজ্জাক (রিজিকদাতা)!”

এক কাক নিচে বসে চেঁচিয়ে বলল,
—“ও কুকুরেরা! তোমাদের এই ঝগড়ার মধ্যে আমাদের আহারের ফয়সালা হয়ে গেছে।”

এই কথা শুনে কুকুর তিনটির হুঁশ ফিরল। তারা থেমে একে অপরের মুখের দিকে তাকাল। প্রথম কুকুরটি বলল,
—“আমরা যদি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করি, তাহলে আমাদের জীবনই শেষ হয়ে যাবে, আর অন্যরা আমাদের মাংস খাবে। আমরা বরং একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে চলি।”

তিন কুকুরই মাথা নাড়ল সম্মতির ইঙ্গিতে। তারা বনের একটি বড় বটগাছের মুতার উপর বসল অর্থাৎ গুঁড়ির উপর এবং সেখানে ঐক্যের অঙ্গীকার করল। তারা সিদ্ধান্ত নিল—“আজ থেকে আমরা একসাথে থাকব, একসাথে শিকার করব, একসাথে খাবো এবং কখনো ঝগড়া করব না।”এবার তারা একটি বাঁশের সাঁকো দিয়ে
কাদাবালি পথ পেরিয়ে এক নতুন দিনের স্বপ্ন দেখল।

এরপর থেকে তারা সত্যিই একসাথে চলতে শুরু করল। তাদের বন্ধুত্ব দেখে বনজীবরা অবাক হল। বন যেন আরও শান্ত হয়ে উঠল। আমরা মানুষেরা যদি একত্রে মিলেমিশে থাকি তবেই আমরা শ্রেষ্ঠ আশরাফুল মাখলুকাত। কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেশতাদেরকে যখন জিজ্ঞেস করেছিল তখন তারা তার উত্তরে যা বলেছিল তা আমাদের অবশ্যই মনে আছে।

গল্পটি এখানেই শেষ নয়—এই ঘটনার মধ্যে রয়েছে এক গভীর শিক্ষা।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা:
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন—
“আর তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং বিভক্ত হয়ো না।”
(সূরা আলে ইমরান)
অর্থাৎ, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব থাকা উচিত। ঝগড়া-বিবাদ করলে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি, শত্রুরা আমাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। কিন্তু ঐক্য থাকলে আল্লাহর রহমত আমাদের উপর নাযিল হয়।

কুকুরগুলোর মতো আমরাও যদি নিজেদের স্বার্থে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করি, তবে শত্রুরা আমাদের ক্ষতি করবে। আর যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তবে আল্লাহ আমাদের জন্য বরকত ও নিরাপত্তা দান করবেন।
✓নৈতিক শিক্ষা:
ঐক্যই শক্তি। বিভক্তি ধ্বংস ডেকে আনে। আল্লাহই রিজিকদাতা—তাঁর ওপর ভরসা রাখাই মুমিনের কাজ।

✓শেষ কলমে,
🖋️মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
💐প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা মান্দা, নওগাঁ।

প্রকাশকঃ সবুজ হুসাইন।

সম্পাদকঃ মোঃ ইমদাদুল হক নয়ন।

সাগরিকা প্রকাশনী কতৃক সংরক্ষিত