🍌গল্প: প্রতারণার নতুন ধাপ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:৩১/১০/২০২৫

/ গল্প, বিনোদন, সারাদেশ

🍌গল্প: প্রতারণার নতুন ধাপ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:৩১/১০/২০২৫

Reporter Name / ৩০ বার পড়া হয়েছে

আপডেট: শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫

শেয়ার করুন

🍌গল্প: প্রতারণার নতুন ধাপ

রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম

তারিখ:৩১/১০/২০২৫

গ্রামটির নাম ছিল চরকল্যাণপুর। চারদিকে সবুজের সমারোহ, মাঝখানে এক বিশাল পুকুর। গ্রামের উত্তর দিকে মসজিদ, যেখানে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত আজান ধ্বনিত হতো। গ্রামের মানুষগুলো ছিল অতি সরল, অতিথিপরায়ণ ও বিশ্বাসী। তারা একে অপরের সুখ–দুঃখে পাশে থাকতো, পরের উপকারে সবসময় প্রস্তুত থাকতো।

একদিন গ্রামের চায়ের দোকানে লোকজন আড্ডা দিচ্ছে, এমন সময় হঠাৎ এক অপরিচিত লোক এসে দাঁড়ালেন। পরনে পরিষ্কার পাঞ্জাবি, মুখে মিষ্টি হাসি। তিনি নিজেকে পরিচয় দিলেন—“আমার নাম বিপুল হোসেন। আমি পাশের জেলা থেকে এসেছি, এখানে ছোটখাটো ব্যবসা করতে চাই।”

গ্রামের লোকজন অতিথিকে সাদরে গ্রহণ করল। গ্রামের মুরব্বি হাজী লাল মিয়া তাকে পুকুরপাড়ের এক খালি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।

প্রথমে বিপুল ছোটখাটো লেনদেন শুরু করল—চাল, ডাল, তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে গ্রামের মানুষকে বিক্রি করত। কারো যদি টাকা না থাকত, সে হাসিমুখে বলত,

—“আরে ভাই, কালকে দিলেই হবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন।”

কয়েকদিনের মধ্যেই সে সবার আস্থা অর্জন করে ফেলল। সে শুধু ব্যবসায়ীই নয়, মসজিদেও নামাজ পড়ত, ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করত, এমনকি জুমার পর মুসল্লিদের মাঝে মিষ্টিও বিলাত। গ্রামের মানুষেরা মনে করত দানবীর লোক পেয়েছি। কত ভদ্র সমাজের আলোকিত মানুষ।

লোকজন বলাবলি করতে লাগল—

—“আরে, বিপুল ভাই তো সত্যি ভালো মানুষ!”

—“এমন ভদ্র ব্যবসায়ী আজকাল ক’জন আছে বলো?”

ধীরে ধীরে বিপুলের দোকান বড় হতে লাগল। গ্রামের মানুষ তার কাছে জিনিস কেনে, আবার কেউ কেউ তাকে টাকা ধারও দেয়। সে সময়মতো পরিশোধ করে আরও আস্থা অর্জন করল।

একদিন গ্রামের মসজিদে জুমার পর ইমাম সাহেবের পাশে দাঁড়িয়ে বিপুল বলল,

—“ভাইসব, আমি একটা বড় চালানের মাল আনতে চাই। যদি কেউ কিছু টাকা অগ্রিম দেন, আমি লাভের অংশ দেব ইনশাআল্লাহ।”

লোকজন ভাবল, এই তো সেই বিপুল ভাই, যিনি এতদিন সৎভাবে লেনদেন করেছেন। কে জানত, এটাই ছিল প্রতারণার নতুন ধাপের শুরু! অর্থাৎ বড় ধরনের একটা দাও মারার সুযোগ।

পরের দিন হাজী লাল মিয়া দিলেন দশ হাজার টাকা, মুন্সি করিম দিলেন বিশ হাজার, কাসেম মিয়া দিলেন পনেরো হাজার—এভাবে পুরো গ্রাম থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা জমা হলো। রফিকুল বলল,

—“আপনারা দোয়া করবেন, আমি তিনদিনের মধ্যে মাল এনে দেব।”

তিনদিন পার, পাঁচদিন পার, দশদিন পার—বিপুলের দেখা নেই। তার দোকান বন্ধ, ঘর খালি। সবাই ছুটল তার থাকার ঘরে—সেখানে শুধু একটা পুরোনো ব্যাগ, তাতেও কিছু কাগজপত্র ছাড়া কিছু নেই।

গ্রামজুড়ে হাহাকার পড়ে গেল। কেউ কেঁদে কেঁদে বলল, “আমার মেয়ের বিয়ের টাকাটা গেল।” আবার কেউ বলল, “আমি ঋণ নিয়ে দিয়েছিলাম, এখন মুখ দেখাবো কাকে?”

মসজিদে বিকেলের দিকে এক বিশেষ বৈঠক ডাকলেন গ্রামের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তাঁর পাশে বসলেন গ্রামের তরুণ সমাজসেবক অনুপম হোসেন।

✓মাওলানা সাহেব বললেন,

—“ভাইসব, আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ (সূরা নিসা: ২৯)।

একজন প্রতারক মানুষ শুধু টাকা নেয় না, সমাজের বিশ্বাসও চুরি করে। আমরা তাকে না চিনে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছি—এটাই ছিল আমাদের ভুল।”

✓এরপর অনুপম হোসেন দাঁড়িয়ে বললেন,

—“ভাই ও বোনেরা, আমরা সবাই দেখি নদী বা পুকুরে কচুরিপানা ছড়িয়ে পড়লে পানি নোংরা হয়ে যায়, মাছ মারা যায়, সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। আমাদের সমাজেও কিছু মানুষ আছে—এই প্রতারকেরা সেই কচুরিপানার মতো। তারা সমাজের সৌন্দর্য নষ্ট করে, মানুষের বিশ্বাস ধ্বংস করে। তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে।”

তিনি আরও বললেন,

—“আজকে থেকে আমরা প্রতিজ্ঞা করি—

💌✍️———

✓ যে কেউ নতুন ব্যবসা শুরু করবে, আগে তার পরিচয় যাচাই করব।

✓লেনদেনে লিখিত প্রমাণ রাখব।

✓ আর কখনো অন্ধভাবে কাউকে বিশ্বাস করব না।

বিশ্বাস করতে হবে, কিন্তু যাচাই করেই।”

গ্রামের তরুণেরা বলল,

—“ঠিক আছে ভাই, আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেব না।”

সেইদিন থেকে চরকল্যাণপুরে এক নতুন উদ্যোগ শুরু হলো—‘সততা পরিষদ’। অনুপম হোসেন ও মাওলানা আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তারা গ্রামজুড়ে সচেতনতা সভা করতে লাগল। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হলো—

“লেনদেনের আগে পরিচয় যাচাই করুন। বিশ্বাস করুন, কিন্তু পরীক্ষা করেই।”

ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষ বুঝতে শিখল—সব চকচকে জিনিস সোনা নয়, আর মিষ্টি কথা সবসময় সত্য নয়। মানুষের বিচার সুন্দর চেহারায় নয় বরং সুন্দর আচরণের মধ্যে।আমরা বাজারে সেরা ১ নং মাল লেখা থাকলেই তা বিশ্বাস করবো না। যতক্ষণ না এর গুণগত মান যাচাই করি আসলেই সেটা এক নং মাল কিনা এমনকি শুধু লেভেলেই ১ নং কিনা। বিএসটিআই অনুমোদন করে কিনা। এভাবে ই সবুজ শ্যামলী বাংলার অনেক ছেলেরা আদম ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে এই শ্যামলী বাংলার ছেলেরাই প্রতারণার শিকার হয় প্রবাসে গিয়ে।তারা কাঁদে আমাদের সবুজ শ্যামলী বাংলা ছেড়ে পড়ে গেলাম প্রতারণার ফাঁদে। সবুজ শ্যামলী বাংলার মায়েরা কাঁদে এই প্রতারণা দেখে তাদের প্রবাস জীবনে ছেলেদের দুর্বিষহ যাতনায়।

দূর প্রবাসে দাঁড়িয়ে তারা বলে আমার শ্যামলী বাংলা তোমায় ভালোবাসি তোমার ভাটা ভরা মুখের চেহারা যেন আজও মনে পড়ে।

এই আদম ব্যবসায়ীরাও সমাজের বড় কিট। এরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মানুষদেরকে প্রতারণা করছে । প্রবাসে উন্নত মানের চাকরি ইত্যাদির লোভ দেখিয়ে।

কয়েক মাস পরে পাশের এক গ্রামে খবর এলো—এক প্রতারক ধরা পড়েছে। নাম বিপুল হোসেন! গ্রামের কয়েকজন লোক গেল তাকে দেখতে। বিপুল মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, পুলিশের হাতে বাঁধা। হাজী লাল মিয়া চোখ মুছে বললেন,

—“আজ বুঝলাম, আল্লাহর বিচার দেরি হয়, কিন্তু অন্ধকারে হারিয়ে যায় না।”

ফিরে এসে তিনি মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

—“ভাইসব, আমাদের টাকা হয়তো আর ফিরবে না, কিন্তু শিক্ষা আমরা পেয়েছি। এই শিক্ষা যেন আমাদের সন্তানরাও মনে রাখে।”

সেদিনের সূর্যাস্তের সময় পুকুরের জলে লাল আভা পড়েছিল। কচুরিপানার পাতায় শিশিরের মতো আলো ঝলমল করছিল। অনুপম হোসেন চুপচাপ পুকুরপাড়ে বসে তাকিয়ে ছিলেন সেই আলোতে। তিনি ধীরে বললেন,

—“যেমন কচুরিপানা পরিষ্কার করলে পানি স্বচ্ছ হয়, তেমনি সমাজ থেকে প্রতারক দূর করলে সমাজও স্বচ্ছ হবে। আমাদের প্রত্যেককে সৎ হতে হবে, সচেতন হতে হবে।”

সেদিন গ্রামের শিশুরাও শিখে নিল—

“ভালো মানুষ চেনা যায় কাজে, কথায় নয়।”

চরকল্যাণপুরের মানুষ আর কখনো অচেনা লোককে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেনি। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা অন্য গ্রামেও ছড়িয়ে দিল।

আর মসজিদের ইমাম প্রতিটি জুমার খুতবায় বলতেন—

“হে মুমিনগণ, প্রতারণা শুধু অপরাধ নয়, এটি সমাজ ধ্বংসের আগুন।”

এভাবেই এক প্রতারণার গল্প হয়ে গেল সততার শিক্ষা।

চরকল্যাণপুরের মানুষ বুঝল—

🍒 “বিশ্বাস করতে হয়, কিন্তু যাচাই করেই।”

🍌 রচনায়

🖋️মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম

🕐তারিখ:৩১/১০/২০২৫