• শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
🖋️স্বামীকে অপমান ও তার কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করার পরিণাম: ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:১/১১/২০২৫ শিরোনাম:কচুরিপানার পুকুর ও জোকার মিয়ার জীবন। শিক্ষনীয় গল্প: রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১/১১/২০২৫ 🪶 মজার গল্প : রম্য রচনা বাছা,জামাই ,ডাউল কান্ড ✍️রচনায়:মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:১০/১০/২০২৩ উপন্যাস:“হিংসার আগুনে পুড়ে যাওয়া 💐রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🪶প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা,মান্দা নওগাঁ। 🖋️ছোট গল্প:আসল মানুষ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:১/১১/২০২৫ 💐ছোটগল্: “জাটকা মিয়ার দুঃখ” 🪶রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা মান্দা নওগাঁ । 🍌গল্প: প্রতারণার নতুন ধাপ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:৩১/১০/২০২৫ 🍌 মধুর গল্প: ঐক্যের বরকত রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:৩১/১০/২০২৫ কবিতা:অহংকারের শেষ কোথায়? মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌼 তারিখ:২২/০৭/২০২৫ [✓] মজার গল্প:সূফি সাহেবের শেষ ইচ্ছা রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:২৯/১০/২০২৫

শিরোনাম:কচুরিপানার পুকুর ও জোকার মিয়ার জীবন। শিক্ষনীয় গল্প: রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১/১১/২০২৫

Reporter Name / ২৭ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫

শিরোনাম:কচুরিপানার পুকুর ও জোকার মিয়ার জীবন।

শিক্ষনীয় গল্প: রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 

তারিখ:১/১১/২০২৫

 

অনেক দিন আগের কথা। এক নিস্তব্ধ গ্রাম— নাম তার ধনকামড়া। গ্রামের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে এক নতুন পুকুর। প্রথমদিকে পুকুরটা যেন ছিল গ্রামের প্রাণ। শিশুরা বিকেলে এসে পুকুরে ঝাঁপ দিত, মহিলারা জল তুলত, আর বৃদ্ধরা এসে বসে গল্প করত। চারপাশের গাছের ছায়া পড়ত পানির গায়ে, যেন এক টুকরো নীল আয়না।

 

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পুকুরের সেই সৌন্দর্য ম্লান হতে লাগল। ধীরে ধীরে কচুরিপানা এসে পুকুরের বুক ঢেকে ফেলল। প্রথমে কয়েকটা কচুরিপানা ভাসছিল, সবাই ভাবল তেমন কিছু না— বরং সবুজে বেশ লাগে। কিন্তু অল্প দিনেই দেখা গেল, পুরো পুকুরটাই যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। জলের মুখ দেখা যায় না, মাছ মারা গেছে, বাতাসে এক অদ্ভুত গন্ধ।

 

পাশেই ছিল এক কাঠের বাগান। সেই বাগানের পাশে স্থাপিত হলো একটি স’মিল— যেখানে গাছ কেটে কাঠ বানানো হতো। সারাদিন স’মিলের শব্দে গ্রামের শান্তি যেন কেটে যেত। তবুও মানুষ বলত, “চলো, কাজ হচ্ছে, এটাই ভালো।”

 

স’মিলের ধারে, পুকুরের পাড় ঘেঁষে, ছিল এক ছোট্ট বেকারদের আড্ডাখানা। সবাই একে বলত “বেকারের দোকান”। সেখানে সারাদিন বসে থাকত গ্রামের কিছু তরুণ— কারও চাকরি নেই, কারও পড়াশোনা শেষ হয়নি, কারও আবার ইচ্ছাই নেই কিছু করার। তারা রাজনীতি নিয়ে তর্ক করত, ক্রিকেট নিয়ে ঝগড়া করত, আর অন্যের ভালো-মন্দ নিয়ে হাসাহাসি করত।

 

এমন পরিবেশেই বাস করতেন জোকার মিয়া। নাম শুনে অনেকেই হাসত, কিন্তু গ্রামের সবাই জানত, তিনি আসলে শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, আর কিছুটা অদ্ভুত লোক।

 

🍯জোকার মিয়ার পরিচয়

 

জোকার মিয়া একসময় ছিলেন মেধাবী ছাত্র। মাদ্রাসায় পড়তেন, তারপর কলেজেও ভর্তি হয়েছিলেন। ইসলামি ইতিহাস পড়তে ভালোবাসতেন, মানুষের উপকার করতে চাইতেন। কিন্তু জীবনের গতি যেন তার জন্যে থেমে গেল কোনো এক বাঁকে।

 

তার পিতা ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। নিজের পরিশ্রমে সংসার চালাতেন। কিন্তু একদিন স’মিলে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যান। হঠাৎ করেই সংসারের ভার এসে পড়ল জোকার মিয়ার কাঁধে। পড়াশোনা থেমে গেল, জীবনের গতিপথ যেন কচুরিপানার মতো আটকে গেল।

 

তিনি চেষ্টা করলেন— গ্রামের শিশুদের পড়াতে শুরু করলেন, কারও চিঠি লিখে দিলেন, আবার কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন। কিন্তু এসব কাজের বিনিময়ে খুব বেশি কিছু পাওয়া যেত না। ফলে সংসার চলত কষ্টে।

 

একদিন গ্রামেরই এক ধনী লোক তাকে বলল,

“তুমি এত পড়ে কী করলা জোকার? দেখ, আমি কোনো বই না পড়ে জমি কিনে মানুষ হইছি।”

 

এই কথা শুনে জোকার মিয়া হাসলেন, বললেন,

“আপনি জমি কিনে মানুষ হয়েছেন, আমি জ্ঞান কিনে মানুষ হতে চেয়েছিলাম। পার্থক্য শুধু বোঝার।”

 

এই একরোখা কথা বলেই তিনি প্রায়শই লোকের বিদ্রুপের শিকার হতেন।

 

🪶বেকারের দোকান ও জোকার মিয়ার আড্ডা

 

বেকারদের দোকান ছিল এক অদ্ভুত জায়গা। ছোট্ট এক টিনের ছাউনি, নিচে কয়েকটা ভাঙা চেয়ার। কেউ চা বানায়, কেউ হুক্কা টানে, কেউ তাস খেলে। গ্রামের মানুষ মজা করে বলত,

“যেখানে কাজ নেই, ওখানেই বেকারের দোকান!”

 

জোকার মিয়া মাঝেমধ্যে সেখানে বসতেন। লোকেরা বলত, “এই যে, জোকার মিয়ার বেকারের দোকান!”

 

তিনি বসে সবার কথা শুনতেন, কখনও তর্কে যোগ দিতেন না। একদিন এক তরুণ বলল,

“মিয়া, তুমি তো শিক্ষিত লোক, কিছু করো না কেন?”

 

জোকার মিয়া মুচকি হেসে বললেন,

“যখন সমাজের নদী কচুরিপানায় ভরে যায়, তখন মাছও সাঁতার কাটতে পারে না, ভাই।”

 

সবাই হাসল, কিন্তু কেউ তার কথা বুঝল না।

 

🌺পুকুরের কচুরিপানা ও সমাজের আগাছা

 

দিন যেতে লাগল। পুকুরের জল এখন পুরোপুরি ঢেকে গেছে। গ্রামের শিশুরা আর আসে না, মহিলারা অন্য পুকুর থেকে জল আনে। চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়, কিন্তু কেউ পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয় না।

 

একদিন বিকেলে জোকার মিয়া একা বসে ছিলেন পুকুরের ধারে। কচুরিপানার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি মনে মনে বললেন—

“এই কচুরিপানা যেমন পুকুরটাকে ঢেকে ফেলেছে, তেমনি অসৎ মানুষগুলো সমাজটাকে ঢেকে ফেলছে। কেউ এগিয়ে আসছে না, সবাই দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে।”

 

সেদিন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন— কিছু একটা করবেন।

 

💐পরিবর্তনের সূচনা

 

পরদিন সকালে তিনি গ্রামের মসজিদের ইমামের কাছে গেলেন। বললেন,

“হুজুর, আমরা কি গ্রামের পুকুরটা পরিষ্কার করতে পারি? সবাই মিলে যদি উদ্যোগ নেই, তাহলে পুকুরটা আবার জীবন্ত হবে।”

 

ইমাম সাহেব বললেন,

“খুব ভালো চিন্তা, জোকার। কিন্তু গ্রামের লোকেরা কাজ করতে চায় না, সবাই কথা বলে।”

 

জোকার মিয়া উত্তর দিলেন,

“তবুও চেষ্টা করা দরকার, হুজুর। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

 

> ‘যে ব্যক্তি কোনো কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়, সে সওয়াব পায়।’

(সহিহ মুসলিম)

 

তাহলে পুকুর পরিষ্কার করাও তো সওয়াবের কাজ।”

 

ইমাম সাহেব রাজি হলেন। শুক্রবারের খুতবায় তিনি এই বিষয়টি বললেন— সমাজের পুকুর পরিষ্কার করা, কচুরিপানা সরানো, এবং নিজের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার আহ্বান জানালেন।

 

💐মানুষের জাগরণ

 

প্রথমদিকে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু জোকার মিয়া নিজে কাঁদা পানিতে নেমে কচুরিপানা তুলতে লাগলেন। তাকে দেখে কয়েকজন শিশু এগিয়ে এল, তারপর দু-চারজন তরুণও যোগ দিল। ধীরে ধীরে লোক বেড়ে গেল।

 

তিনদিনের মধ্যে পুকুরের অর্ধেক পরিষ্কার হয়ে গেল।

 

এক বৃদ্ধ এসে বললেন,

“বাপ, এতদিন কেউ কিছু করে নাই, তুমি শুরু করলা। আল্লাহ তোমারে উত্তম প্রতিদান দিন।”

 

জোকার মিয়া শুধু হাসলেন।

 

এক সপ্তাহ পর পুকুর আবার জলে ভরে উঠল। পাখি উড়ে এল, মাছ দেখা গেল। গ্রামের মানুষরা অবাক হয়ে বলল,

“জোকার মিয়া পাগল নয়, আসলে তিনি সমাজের দর্পণ।”

 

🪷বেকারদের জাগানো

 

পুকুর পরিষ্কারের পর জোকার মিয়া বেকারের দোকানে গিয়ে বললেন,

“তোমরা সারাদিন বসে আছো। এসো, কাজ করি। পুকুর যেমন জেগে উঠেছে, তেমনি আমরা সবাই জেগে উঠি।”

 

একজন বলল,

“কাজ কী?”

 

তিনি বললেন,

“একটা পাঠাগার গড়ে তুলি— যেখানে গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়তে পারবে।”

 

সবাই প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিল। কিন্তু পরে কিছু তরুণ সত্যিই রাজি হলো। গ্রামের পুরনো দোকান ঘরটা পরিষ্কার করে সেখানে কয়েকটা পুরনো বই সাজাল তারা। নাম দিল— ‘কচুরিপানা পাঠাগার’।

 

কেউ বুঝে হাসল, কেউ বুঝে শ্রদ্ধা করল। কারণ এই নামের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল জীবনের গভীর সত্য—

যেমন পুকুরের কচুরিপানা সরিয়ে জোকার মিয়া জলকে মুক্ত করেছেন, তেমনি অজ্ঞতা ও বেকারত্বের কচুরিপানা সরিয়ে দিতে চাইলেন জ্ঞানের আলো দিয়ে।

 

🌺সমাজের পরিবর্তন

 

মাসখানেকের মধ্যে গ্রামে পরিবর্তন দেখা গেল। পাঠাগারে শিশুদের ভিড় বাড়ল, তরুণেরা বই পড়ে স্বপ্ন দেখতে শিখল। কেউ চাকরি পেল, কেউ কৃষিতে নতুন পদ্ধতি নিল, কেউ আবার ইসলামি শিক্ষা শুরু করল।

 

একদিন ইমাম সাহেব খুতবায় বললেন,

“একজন মানুষের উদ্যোগে একটি সমাজ বদলে যেতে পারে। কচুরিপানার মতো মন্দ যদি আমাদের ঢেকে ফেলে, তবে আমাদেরই দায়িত্ব সেটি সরিয়ে ফেলা।”

 

গ্রামের লোকেরা জোকার মিয়াকে সম্মানের চোখে দেখতে শুরু করল। কেউ আর তাকে ‘জোকার’ বলে না, বরং বলত— “শিক্ষক মিয়া”।

 

🌺শেষ অধ্যায়

 

বছর ঘুরে যায়। দোলামারা গ্রাম এখন অনেক পরিবর্তিত। পুকুরের পানি ঝকঝকে, পাঠাগারে বইয়ের গন্ধ, তরুণেরা কর্মঠ।

 

একদিন এক ছোট ছেলে জোকার মিয়াকে জিজ্ঞেস করল,

“চাচা, আপনি কেন এত কষ্ট করে এই সব করলেন?”

 

তিনি মৃদু হাসলেন, বললেন—

“বাবা, কচুরিপানাকে যদি সরিয়ে না ফেলি, পুকুরটা একদিন শুকিয়ে যাবে। তেমনি অন্যায়, অলসতা আর অজ্ঞতাকে যদি দূর না করি, সমাজও একদিন মরে যাবে।”

 

ছেলেটা মাথা নাড়ল, আর জোকার মিয়ার হাত ধরল।

 

সূর্য তখন পুকুরের জলে পড়ে সোনালি রঙে ঝলমল করছে। কচুরিপানার জায়গায় এখন ফুটে আছে সাদা শাপলা। বাতাসে বইছে শান্তি ও আশার সুবাস।

 

জোকার মিয়া ধীরে ধীরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন—

“হে আল্লাহ, তুমিই সাক্ষী, আমি চেষ্টা করেছি। পরিবর্তন তুমিই দাও।”

 

নৈতিক শিক্ষা

 

১. সমাজের মন্দ যদি সবাই মিলে সরিয়ে না দেয়, তবে সেই মন্দই সমাজকে গ্রাস করে।

২. অলসতা ও বেকারত্ব কচুরিপানার মতো— যতক্ষণ না কেউ সরায়, ততক্ষণ সমাজের গতি থেমে থাকে।

৩. একজন মানুষের সৎ ইচ্ছাই পুরো সমাজের পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

৪. আল্লাহ তায়ালা বলেন—

 “নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।”

(সূরা আর-রা’দ: ১১)

৫. জ্ঞান, পরিশ্রম ও সততা— এই তিনটি জিনিসই সমাজকে জীবন্ত রাখে।

 

💐শেষ কলমে,

✍️মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম

🍌প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা মান্দা, নওগাঁ।

Copyright ©️ All rights reserved by author maulana MD FARIDUL Islam.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন