🍌বাংলাদেশের মাজার সংস্কৃতি ও গাজার বাজার: একটি বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 তারিখ:২/০৪/২০২৩

Reporter Name / ৩৮ বার পড়া হয়েছে

আপডেট: সোমবার, ৩ নভেম্বর, ২০২৫

শেয়ার করুন

🍌বাংলাদেশের মাজার সংস্কৃতি ও গাজার বাজার: একটি বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ

বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এ দেশের মাটিতে অসংখ্য ওলি-আওলিয়া, পীর-দরবেশ, আল্লাহর প্রিয়বান্দা ইসলাম প্রচার ও প্রসারে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের স্মৃতিচিহ্নরূপে গড়ে উঠেছে নানা মসজিদ, খানকা, মাজার ও দরগাহ। ইতিহাস সাক্ষী, এসব স্থান একসময় ছিল তাওহীদ, তাজকিয়া, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহভীতির পাঠশালা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য—সময়ের সাথে সাথে অনেক মাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভ্রান্তি, কুসংস্কার ও অইসলামী সংস্কৃতি। বিশেষ করে গাজার বাজার এ সমস্যার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ।

✓মাজার সংস্কৃতির মূল উদ্দেশ্য

মাজারের মূল উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর প্রিয়বান্দাদের স্মৃতি ধরে রাখা, তাঁদের দ্বীনি আদর্শকে অনুসরণ করা এবং মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। ইসলাম কোনোভাবেই মাজারকে আয়ের কেন্দ্র করে ভোগ-বিলাসের আসর হিসেবে অনুমোদন দেয় না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক জায়গায় মাজারকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের অঙ্গন তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে গাজা বিক্রি অন্যতম।

✓গাজার বাজারের বিস্তার

বাংলাদেশের অনেক বড় মাজারে নিয়মিতভাবে গাজার বাজার বসে। মাজার প্রাঙ্গণ ও আশেপাশে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা ইত্যাদি মাদক দ্রব্য বিক্রি হয় খোলামেলা। এ বাজার শুধু স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এখানে সক্রিয় থাকে চোরাকারবারি ও মাদক সিন্ডিকেট। ফলে বিপুল পরিমাণ টাকা প্রতিদিন এভাবে হাতবদল হয়, যা কোনোভাবেই রাষ্ট্রের নিয়ম-নীতির আওতায় আসে না।

✓অর্থনৈতিক প্রভাব

গাজার বাজার থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চোরাকারবারিদের পকেটে ঢোকে। এ অর্থ বৈধ কোনো খাতে ব্যয় হয় না; বরং এটি কালো টাকা ও অপরাধী চক্রকে শক্তিশালী করে। এই টাকার জোরে গড়ে ওঠে অপরাধ সাম্রাজ্য, বেড়ে যায় সন্ত্রাস ও দুর্নীতি। অন্যদিকে, এ অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন কিংবা জনসেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হলে সমাজ উপকৃত হতো।

🖋️সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষতি

✓গাজার বাজার কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি করে না, বরং এটি সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের জন্ম দেয়।

✓যুব সমাজ আসক্ত হয় মাদকে, নষ্ট হয় মেধা ও কর্মক্ষমতা।

✓মাজারের প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে গিয়ে মানুষ ভ্রান্ত পথে চলে যায়।

✓ইসলাম যেসব শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে নেশা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে, তা কার্যত উপেক্ষিত হয়।

💐✓আল্লাহ তা’আলা বলেন:

“হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারণকারী তীর—এ সবই শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব, তোমরা এসব থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।”

— (সূরা আল-মায়িদাহ: ৯০)

✓রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“যা অধিক পরিমাণে মাতাল করে, তার অল্প পরিমাণও হারাম।”

— (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

🌺রাষ্ট্র ও সমাজের করণীয়

১. সরকারকে কঠোরভাবে এসব মাজারকেন্দ্রিক গাজার বাজার বন্ধ করতে হবে।

২. মাজার পরিচালনা কমিটিকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে।

৩. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

৪. সমাজের আলেম-ওলামা ও সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে এসে মানুষকে সত্য শিক্ষা দিতে হবে।

৫. যুব সমাজকে ইসলামি শিক্ষা ও নৈতিকতায় গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

৬. গান বাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফিকির জন্ম দেয় কিন্তু মাজারকেন্দ্রিক গাঁজাখোররা এসব কাজ করছে।

💐✓উপসংহার

মাজার ইসলামি ঐতিহ্যের অংশ হলেও তা কোনোভাবেই গাজার বাজার বা অইসলামী কর্মকাণ্ডের স্থান হতে পারে না। এ পবিত্র স্থানগুলোতে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে—এই প্রত্যাশাই যুক্তিযুক্ত। গাজার বাজার বন্ধ করে মাজারকে দ্বীনী শিক্ষা, মানবিক মূল্যবোধ ও আত্মশুদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।

তারিখ:০২/১০/২০২৫

আপনার মতামত লিখুন :