গল্প: “ছাগলের বাচ্চার হক”
রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
মদিনার চারপাশে বসবাস করত এক সাধারণ মানুষ, নাম তার সালিম। খুব ধনী ছিল না, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কিছু খেজুর গাছ, কয়েকটি ভেড়া আর জমির মালিক বানিয়েছিলেন। সালিম ছিল নামাজী মানুষ, কিন্তু এক বছর যখন ফলন একটু কম হলো আর ভেড়াগুলোর দুধও কমে গেল, তখন তার মনে কেমন এক কৃপণতা ঢুকে গেল।
সে ভাবল, “এই বছরটা একটু কষ্টের গেল, যদি যাকাতটা না দিই, তাহলে হয়তো সামলে উঠতে পারব। আল্লাহ তো জানেন আমার অবস্থা!”
কিন্তু মসজিদের ইমাম একদিন খুতবায় বললেন—
“হে মুমিনগণ! যাকাত কেবল গরীবের অধিকার নয়, এটি তোমার ঈমানের অংশ। এক ছাগলের বাচ্চা হলেও, যদি সেটি গরীবের হক হয়, তবে তা ফেরত না দিলে তুমি আল্লাহর হক নষ্ট করছো।”
এই কথা শুনে সালিমের বুক কেঁপে উঠল। রাতে সে বিছানায় শুয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করল। চোখের সামনে ভেসে উঠল আবূ বকর (রাঃ)-এর সেই দৃঢ় চেহারা, যিনি বলেছিলেন—
“যদি তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে দেওয়া একটি ছাগলের বাচ্চাও আমাকে দিতে অস্বীকার করে, তবুও আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব।”
সালিম মনে মনে বলল, “আল্লাহর বান্দারা যে হক পেয়েছে, তা আমি কীভাবে গোপন করি? আমি কি আবূ বকরের সময়কার সেই অস্বীকারকারীদের মতো হব?”
পরদিন সকালেই সে তার সেরা ছাগলের বাচ্চাটি হাতে নিয়ে বের হল। গরীবদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক ছিল, নাম হামিদ। সালিম গিয়ে বলল,
—“ভাই, এই বাচ্চাটা তোমার। এটা আল্লাহর পথে যাকাত।”
হামিদের চোখে জল চলে এলো। বলল,
—“আল্লাহ তোমার রিজিক বাড়িয়ে দিন, ভাই। আমি বহুদিন ধরে ছাগলের দুধের স্বাদ ভুলে গেছি।”
সেদিন সালিম যখন ঘরে ফিরল, তার মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি নেমে এলো। মনে হলো যেন ভারী এক বোঝা কাঁধ থেকে নেমে গেছে।
কিছুদিন পর সে দেখল, তার ভেড়াগুলো আগের চেয়ে বেশি দুধ দিচ্ছে, খেজুরগাছেও ফল হয়েছে প্রচুর। সালিম তখন বুঝল—
যাকাত দেওয়া মানে নিজের সম্পদ কমানো নয়, বরং তা আল্লাহর রহমত দিয়ে বৃদ্ধি করা।
সেদিন সন্ধ্যায় সে মসজিদে গিয়ে বলল,
—“ইমাম সাহেব, আমি আজ বুঝেছি, দারিদ্র্যের হক রক্ষা মানে নিজের ঈমান রক্ষা।”
ইমাম হাসলেন, বললেন—
“সালিম ভাই, আল্লাহর পথে যে একটি ছাগলের বাচ্চাও দেয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে সোনার প্রাসাদ প্রস্তুত করেন। কারণ সেই বাচ্চার মধ্যে গরীবের হক আর আল্লাহর হক—দুটোই নিহিত থাকে।”
সালিম মাথা নিচু করে বলল,
—“আমি আজ থেকে আর কখনো কোনো হক নষ্ট করব না। আল্লাহর ওয়াস্তে, আমাকে সেই পথে রাখুন।”
শেষ কলমে, মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা মান্দা নওগাঁ।
Copyright ©️ All rights reserved by author maulana MD FARIDUL Islam.