• মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কবিতা: রাসূলের দিদার শুধু ইমানদারের রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:৪/১১/২০২৫ 🖋️ মজার গল্প: বংশের দেমাগ : এক পতনের আখ্যান। যৌবনের আর্তনাদ: এক নারীর অকথিত গল্প, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 ছোট গল্প:বাদশাহ ফরিদ উদ্দিন এর ন্যায্য মজুরি। রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম উপন্যাস :শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।🍒 কবিতা: সময়মতো বিবাহ  রচনাঃমাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১/১১/২৩ 🖋️ গল্প: “আলেয়ার আফসোস আর সলিম উল্লাহর বোধোদয়”। রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 মজার গল্প : বাঁশ খানের ন্যায়ের বাঁশ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম ছোট গল্প: ক্ষুদ্র প্রাণীর শক্তি রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  গল্প: “ছাগলের বাচ্চার হক” রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 

উপন্যাস :শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।🍒

Reporter Name / ৩৩ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

উপন্যাস :শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।🍒

নাটোর জেলার কাশিকাটা উপজেলা। চারদিক জুড়ে সবুজের ছায়া, পুকুরে ভাসে পদ্মফুলের পাপড়ি, কাশবনের ভেতর দিয়ে হাওয়ার দোল খেলে যায়। সকালবেলা মসজিদের মিনার থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে, মহিষের গাড়ির চাকায় কাঁদা ছিটে ওঠে, আর নদীর পাড়ে গ্রামের মেয়েরা হাঁস ধোয় আর গীত গায়।
এই সৌন্দর্যের ভেতরেই বাস করতেন সলিমুদ্দিন সাহেব। পেশায় ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক, চরিত্রে ছিলেন মৃদুস্বভাব, ধর্মপ্রাণ ও নীতিবান। একমাত্র মেয়ে আদরি ছিল তাঁর প্রাণের টুকরো।

আদরি ছিল পড়ালেখায় খুব মেধাবী। কাশিকাটা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রী বলা হতো তাকে। ছোটবেলায় তার মুখের হাসিতে যেমন ভোর হতো, তেমনি সন্ধ্যায় তার কণ্ঠে নামাজের আজান শুনে মা বলতেন—
“আমার মেয়ে নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয় বান্দি হবে।”

কিন্তু মানুষ যেমন বড় হয়, তেমনি বদলাতে থাকে তার হৃদয়ও।

🌺একটি আলোর উপহার

আদরির মামাতো ভাই নাসির ঢাকায় পড়ত—বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে সে তখন নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছে। গ্রামের মানুষ নাসিরকে শ্রদ্ধা করত, কারণ সে গ্রাম থেকে উঠে নিজের মেধায় শহরের বড় পদে গেছে।
এক ছুটিতে সে গ্রামে এল। আদরির খুব আদরের ভাই সে। আদরি তার কাছে একদিন বলল—
“ভাইয়া, আমার ঘরে একটা ভালো আলো নেই, রাতে বই পড়তে কষ্ট হয়।”

নাসির হেসে বলল, “তোমার জন্য আমি একটা নতুন বাতি বানাবো, এমন যে বাতি গ্রামের কেউ দেখেনি।”

কয়েক দিন পর সে নিজ হাতে তৈরি করে আনল ছোট একটা ইলেকট্রিক বাতি। যখন সেই বাতি জ্বলে উঠল, পুরো ঘর যেন সোনার আলোর মতো ঝলমল করে উঠল। আদরির চোখে আনন্দের ঝিলিক। সে বলল—
“ভাইয়া, এই আলো আমার সৌভাগ্য হয়ে থাকবে।”

কিন্তু সময়ের সাথে সেই আলোই একদিন অন্ধকারে মিশে যাবে—তা কেউ তখন ভাবেনি।

✓বন্ধুত্বের মোড় ঘুরে যাওয়া

আদরির স্কুলজীবনে এক বন্ধু ছিল—জোকার মিয়া। নামটা শুনে হাসি পেলেও, সে ছিল খুব চঞ্চল ও নিরীহ প্রকৃতির। মজার ছলে সবাই তাকে “জোকার” বলত, কিন্তু হৃদয়ে সে ছিল গভীর ভালোবাসায় ভরা।

আদরি ও জোকারের বন্ধুত্ব সময়ের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়। জোকার প্রায়ই আদরিকে বই এনে দিত, পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করত। কিন্তু হঠাৎ করেই আদরির মনে অহংকার ঢুকে যায়। তার মামাতো ভাই নাসিরের ইঞ্জিনিয়ার পদ, শহরের চাকরি, গাড়ি—এসব দেখে আদরির মনে ধনী-গরিবের পার্থক্য তৈরি হয়।

একদিন স্কুলে জোকার বলল—
“তুমি তো অনেক ভালো করছো, এখন কলেজে ভর্তি হবে নিশ্চয়ই?”

আদরি একটু ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,
“তোমরা তো গরিবের সন্তান, তোমাদের বুঝিয়ে কী লাভ? আমি তো বড় জায়গায় যাবো।”

এই কথায় জোকারের চোখ ভিজে যায়। তবুও সে কিছু বলে না।
এদিকে গ্রামের আরও কিছু তরুণ ছিল—টুকুন, বাইপুল, তারা আদরির স্কুলসাথী। আদরির গর্ব তাদের কাছেও ধরা পড়ে। একসময় তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। আদরি এখন গ্রামের ছেলেমেয়েদের দিকে নিচু চোখে তাকায়। তার পোশাক, চালচলন, কথাবার্তা—সবকিছুতেই শহুরে ভাব।

✓অহংকারের দুঃশাসন

সময়ের প্রবাহে আদরি কলেজে ভর্তি হলো। তার চারপাশে তৈরি হলো এক নতুন সমাজ—সেখানে ধনীর দম্ভ, সাজগোজ, প্রতিযোগিতা। ধীরে ধীরে সে নিজের অতীত ভুলে গেল।

একদিন গ্রামের হাটে সে দেখল, তার পুরোনো বন্ধু জোকার মিয়া দোকানে কাজ করছে। ছেলেটি তাকে দেখে বলল—
“আদরি, কেমন আছো?”

আদরি মুখ ফিরিয়ে বলল,
“এই লোকেরা না, কথা বলতে গেলেই নিজেদের সমান ভাবে!”

তার কথায় আশপাশের লোক চমকে উঠল। কিন্তু আদরি তাতে বিচলিত হলো না। সে তখন নিজের গর্বে অন্ধ।

তার এই স্বভাব দেখে তার মা প্রায়ই বলতেন—
“মেয়ে, মনে রেখো, অহংকার করলে আল্লাহ রাগ করেন। ধন-সম্পদ নয়, বিনয়ই মানুষের সৌন্দর্য।”
কিন্তু আদরি শুনত না।

এমনকি তার মামাতো ভাই নাসির একদিন মৃদু করে বলেছিল—
“আদরি, মানুষকে ছোট করে দেখো না। আজ যারা নিচে, কাল তারাই উপরে উঠতে পারে।”

আদরি হেসে বলেছিল,
“ভাইয়া, আমি এখন বড় লোকের সঙ্গে মিশি, ছোটখাটো গ্রামের মানুষ আমার মতো শিক্ষিতদের বুঝবে না।”
নাসির তখন চুপ করে ছিল। তবে তার চোখে এক অদ্ভুত বেদনা ফুটে উঠেছিল।

✓চক্রান্তের শুরু

কলেজে পড়ার সময় আদরির সঙ্গে শহরের এক রাজনৈতিক দলের নেতার মেয়ে লুবনার বন্ধুত্ব হয়। লুবনা ছিল চতুর, কৌশলী এবং স্বার্থপর। সে আদরিকে বলত—
“তুমি খুব সুন্দর, তোমার মধ্যে নেতৃত্বের গুণ আছে। রাজনীতিতে এসো, আমরা তোমাকে সাহায্য করব।”

এই প্রলোভনে পড়ে আদরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। এখন সে গ্রামের দরিদ্রদের চোখে আর ‘আদরি আপা’ নয়—সে যেন নতুন এক ক্ষমতাধর মানুষ।

কিন্তু ক্ষমতার খেলায় তার মানবিকতা হারিয়ে যায়।
সে নিজের গ্রামের বন্ধু টুকুন, বাইপুল, এমনকি জোকারের প্রতিও ঘৃণা প্রকাশ করে। জোকারের দোকান ভেঙে ফেলার হুমকি দেয় স্থানীয় এক নেতা, আর সেই নির্দেশের পেছনে ছিল আদরির নীরব সম্মতি।

তার এই আচরণে গ্রামে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। একদিন তার মা বললেন—
“মেয়ে, তুমি এখন এমন কেন? যে মানুষকে তুমি একসময় স্নেহ করতে, এখন তাদের ক্ষতি করছো কেন?”
আদরি তখন রাগে গজগজ করে বলল,
“তোমরা পুরোনো যুগে আছো মা। এখন টাকাই সব।”
মা নীরবে কাঁদলেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, “হে আল্লাহ, আমার মেয়েকে হিদায়াত দাও।”

✓ভাগ্যের পরিহাস

নাসির meanwhile ঢাকায় বড় পদে উন্নীত হয়। একদিন অফিসের কাজে কাশিকাটায় আসে। আদরির মা তাকে অনুরোধ করেন—
“বাবা, তোমার বোনকে একটু বোঝাও। ও অহংকারে ডুবে যাচ্ছে।”

নাসির মনস্থির করল, বোনকে শিক্ষা দিতে হবে, তবে ভালোবাসার মাধ্যমে।

সে আদরিকে বলল—
“তুমি যদি মনে করো, আমি তোমার মতো শিক্ষিত কাউকে বিয়ে করব না, তাহলে তুমি ভুল করছো।”

আদরি বিস্মিত।
“মানে ভাইয়া?”

নাসির হাসল,
“আমি তোমাকেই বিয়ে করব—একজন বোন নয়, এখন একজন নারী হিসেবে, যাতে তুমি বুঝতে পারো সংসারের দায়িত্ব কাকে বলে।”

এ কথা শুনে আদরির মুখ শুকিয়ে গেল। সমাজে গুঞ্জন উঠল—মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে! কিন্তু ইসলামিক বিধান অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ নয়; পরিবারের সম্মতিতেই তাদের বিবাহ সম্পন্ন হলো।

বিয়ের পর নাসির তাকে যথেষ্ট সম্মান ও ভালোবাসা দিল, কিন্তু যখন আদরি অহংকারের আচরণ করত, তখন শাসনও করত।

একদিন আদরি রাগ করে বলল,
“তুমি এখন আমাকে কেন বকো?”
নাসির শান্তভাবে উত্তর দিল,
✓✓“শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।”

এই এক বাক্যে যেন আদরির হৃদয়ে বজ্রাঘাত হলো।

✓জীবনের শিক্ষা

দিন গড়াতে থাকে। আদরি এখন শহরে থাকে, সংসার সামলায়। নাসির তাকে ধীরে ধীরে ধর্মের পথে টেনে নেয়। নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান—সব কিছুতে সে অভ্যস্ত হতে থাকে।

একদিন এক অনুষ্ঠানে সে শুনল কোরআনের আয়াত—

> “আর তুমি অহংকার করে মুখ ফিরিয়ে নিও না মানুষের কাছ থেকে, এবং পৃথিবীতে গর্বভরে চলো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী ও আত্মম্ভরীকে পছন্দ করেন না।” (সূরা লুকমান, ৩১:১৮)
সেই রাতেই আদরি ঘুমোতে পারেনি। অতীতের সব অন্যায়, অপমান, অহংকার একে একে তার মনে ভেসে উঠল।

সকালে সে স্বামীর কাছে গিয়ে বলল,
“আমি আমার গরিব বন্ধুদের কষ্ট দিয়েছি, তাদের জন্য আমি অনুতপ্ত।”

নাসির মৃদু হেসে বলল,
“অনুতাপই তওবার শুরু। তুমি চাও, তাহলে আমরা সবাইকে ডেকে দুঃখপ্রকাশ করব।”

✓ফিরে দেখা

কয়েক দিন পর তারা দু’জন কাশিকাটায় ফিরে এলো। গ্রাম আগের মতোই সুন্দর—ধানের গন্ধ, নদীর সোঁদা বাতাস, গ্রামের মসজিদে মাইকের ধ্বনি।

আদরি প্রথমে গেল জোকার মিয়ার দোকানে। জোকার তাকে দেখে অবাক হয়ে বলল,
“তুমি?”

আদরির চোখে জল।
“ভাই, আমি ভুল করেছি। তোমাদের কষ্ট দিয়েছি। ক্ষমা করো।”

জোকার চুপ করে রইল কিছুক্ষণ, তারপর হেসে বলল,
“আমরা তো বন্ধুই ছিলাম, ক্ষমা কেন চাইবে? মানুষ ভুল করে, তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন।”

আদরি কেঁদে ফেলল। সেই কান্না ছিল অনুশোচনার, আর হৃদয়ের পরিশুদ্ধির কান্না।

✓গ্রামের নতুন সকাল

আদরি এরপর থেকে গ্রামে দানখয়রাত শুরু করে, মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে পড়ার আয়োজন করে। তার নিজের তৈরি করা ছোট স্কুলের নাম দেয়—“আলো একাডেমি”—যে আলো একসময় তার অহংকারের প্রতীক ছিল, আজ সেটাই হলো জ্ঞানের আলো।

একদিন সে গ্রামের মেয়েদের বলছিল—
“মেয়ে হও মানেই দুর্বল হওয়া নয়, কিন্তু বিনয় ছাড়া শিক্ষা কখনো পূর্ণতা পায় না।”

সবাই তার কথা শুনে চুপ করে গেল। কেউ কেউ চোখ মুছল, কারণ এই আদরিই তো একসময় তাদের অপমান করেছিল।

কিন্তু এখন সে বদলে গেছে।

✓শেষ অধ্যায়

বছর কয়েক পর এক বর্ষার দিনে নাসির অফিসে যাওয়ার আগে বলল,
“আজ বাইরে যেও না, বৃষ্টি বেশি।”

আদরি বলল,
“না, আজ আমার মেয়েদের স্কুলে সভা আছে।”

বিকেলে নাসির খবর পেল, স্কুল থেকে ফেরার পথে আদরির গাড়ি কাদা মাটিতে আটকে পড়ে, তখন সে নিজে নেমে মেয়েদের সাহায্য করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যায়। সবাই তাকে উদ্ধার করে, কিন্তু ততক্ষণে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে।

গ্রাম কেঁদে উঠল।

নাসির শান্তভাবে বলল,
“সে তার জীবনের অহংকার মুছে দিয়ে আলো ছড়িয়েছে—আজ আল্লাহর কাছে ফিরে গেল।”

তার কবরের পাশে ছোট্ট ফলকে লেখা হলো—
“শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।”

✓উপসংহার

আদরির জীবনের গল্পটি এক শিক্ষণীয় উপাখ্যান।
মানুষ যতই ধনী হোক, যত বড় হোক, বিনয় হারালে তার সব সাফল্য মাটি হয়ে যায়।

কোরআনে বলা হয়েছে—
“নিশ্চয়ই যে বিনয়ী, আল্লাহ তাকে মর্যাদা দান করেন; আর যে অহংকারী, আল্লাহ তাকে অপমান করেন।” (সহীহ মুসলিম)

আদরির জীবনে অহংকার তাকে অন্ধ করেছিল, কিন্তু এক ভালোবাসার শাসন তাকে ফের পথ দেখিয়েছে।
তার জীবন শেখায়—
ভালোবাসা মানে অন্ধ প্রশ্রয় নয়; সঠিক পথে ফেরাতে কঠোরতা কখনো সোহাগেরই রূপ।

🍌শেষ কলমে,
✍️মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম
🍒প্রভাষক হাদীস পরানপুর কামিল মাদ্রাসা মান্দা, নওগাঁ।
তারিখ:৫/১১/২০২৫
Copyright ©️ All rights reserved by author maulana MD FARIDUL Islam.


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন