গল্প: জীবনের পাঠশালা
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
গ্রামের এক প্রান্তে ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর, ঘরের নাম মেহেরুন্নেছার ঘর। বয়স পঁচিশ পেরোলেও চোখে এখনও অদ্ভুত এক দীপ্তি যেন শত বাধা পেরিয়ে জীবনের মানে বুঝে ফেলা এক মেয়ের আলোকচিত্র। বাবা দিনমজুর, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব লেগে থাকলেও, মেহেরু কখনও হতাশ হয়নি। সে জানত, জীবনের সেরা পাঠশালা হচ্ছে সংগ্রাম।
বিদ্যালয়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে সে প্রতিদিন ভাবত একদিন সে লিখবে, এমনভাবে লিখবে যেন তার গল্প পড়ে কেউ দুঃখ ভুলে হেসে ওঠে। না, মেহেরু লেখিকা ছিল না। সে ছিল একজন পাঠক, এক পাঠক যার প্রতিটি কান্না গোপনে সঞ্চিত হয়েছে কাগজের ভাঁজে, বালিশের কোণে।
একদিন তার লেখা ডায়েরি এক বন্ধু পড়ে ফেলল। বন্ধুটি বলল, “তুই তো লিখতে পারিস! তোর লেখা যদি পত্রিকায় ছাপা হতো?”
মেহেরু হেসেছিল।
সে বলেছিল, “আমার লেখার কী দাম আছে?”
কিন্তু বন্ধুটি তার লেখা পাঠিয়ে দেয় একটি অনলাইন পত্রিকায় “বাংলার কথা”। সপ্তাহ না পেরোতেই তার লেখা ভাইরাল। সবাই অবাক একজন দিনমজুরের মেয়ে এমন বাস্তবতা লিখল কীভাবে?
কেউ জানত না, জীবনের প্রতিটি অভাব, প্রতিটি ক্ষুধা, প্রতিটি না-পাওয়াই ছিল তার কলমের কালি।
মেহেরু এখন শুধু লেখে না, সে এখন অনেক নারীর অনুপ্রেরণা।
তার গল্প বলে জীবনের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জীবন নিজেই। এখানে বই নয়, বাস্তবতা শেখায়। আর যাঁরা শিখতে জানে, তারাই হয় একদিন কলমের সিপাহী।
🖋️ লেখকের মন্তব্য:
‘মেহেরুন্নেছা’ এই গল্পের একটি কাল্পনিক চরিত্র। বাস্তব জীবনের অসংখ্য নারীর অজানা দুঃখ, বেদনা আর লড়াইয়ের ছায়া এ চরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। এ গল্পটি কোনো একজন মানুষের নয়—বরং সমাজে বেঁচে থাকা হাজারো নারীর অভিজ্ঞতার সম্মিলিত প্রতিচ্ছবি।