একটি জানালা, দুটি মন
পর্ব ১: প্রথম দেখা
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
রেলস্টেশনের সকালটা ছিলো কুয়াশায় মোড়া।
ফেনী স্টেশন ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। মানুষজন আসছে, কেউ ট্রেন ধরতে, কেউবা বিদায় জানাতে। হকারদের চিৎকার, চায়ের দোকানে ধোঁয়া, আর দূরের কোথাও ভেসে আসা ট্রেনের হুইসেল—সব মিলিয়ে এক বিষণ্ন অথচ জীবন্ত সকাল।
আরাফাত ট্রেন ধরবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে। ব্যাগটা পাশে রেখে দাঁড়িয়ে আছে প্ল্যাটফর্মের ধারে। চোখে অদ্ভুত একটা ক্লান্তি আর ভিতরে একটা অজানা শূন্যতা। কিন্তু কে জানতো, সেই শূন্যতা কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য এক অনুভবে পূর্ণ হবে?
হঠাৎ চোখ গেলো স্টেশনের বেঞ্চের দিকে।
একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখল সে।
সাদামাটা একটা সালোয়ার-কামিজ, মুখে কোনো সাজ নেই, কিন্তু তবুও যেনো চোখ সরানো যায় না। মায়াবী চোখ, চুলে হালকা বাতাসে উড়ে আসা অসাবধান কটা ঝাঁক, যেন নিখুঁত কোনো কবিতার উপমা।
আরাফাত তাকিয়েই রইল, অথচ সাহস হলো না কথা বলার। ভিতরে ভিতরে হাজার শব্দ খেলা করছিল, কিন্তু ঠোঁট যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে।
ট্রেন এলো কিছুক্ষণ পর।
চেপে বসল সবাই যার যার সিটে। আরাফাত উঠে গিয়ে নিজের টিকিট অনুযায়ী জানালার পাশে বসলো।
আশ্চর্য!
তার পাশের সিটেই বসে সেই মেয়েটি!
সেই মায়াবতী।
একটা ঝটকায় হৃদয় যেন হোঁচট খেলো।
গাড়ি চলা শুরু করল, জানালার বাইরে সবকিছু পিছিয়ে যেতে লাগলো। আর সিটের ভেতর, দুইটা মন নিঃশব্দে কাছাকাছি আসার অপেক্ষায়।
আরাফাত ভেবেছিল সেদিন শুধু স্টেশনেই দেখা হবে, কিন্তু ট্রেনের ভাগ্য যেন তাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে।
সে নিঃশব্দে তাকালো মেয়েটার দিকে, মৃদু হাসল।
মেয়েটা তাকিয়ে বললো,
— “আপনি কি ফেনীতেই থাকেন?”
এটাই ছিলো শুরু।
একটি জানালার পাশে, দুটি অচেনা মন
নিঃশব্দে কোনো এক অনুভবের পথে পা বাড়ালো।
চলবে…