পর্ব – ৫
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
সকালটা যেন অন্যরকম এক নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল। পাখির ডাক, মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙা—সবকিছুই স্বাভাবিক, কিন্তু আরাফাতের ভেতরটা কেমন খালি খালি লাগে। মাথার ভেতর একটা নাম, একটা চেহারা, একটা বিদায় মুহূর্ত—সব মিলে এক অব্যক্ত হাহাকার।
ফেনী থেকে কুমিল্লা, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া—সময়ের ব্যবধানে দূরত্ব বেড়েছে, কিন্তু সাহিদার উপস্থিতি মুছে যায়নি।
আরাফাত চুপচাপ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। হালকা রোদ, পাখিদের কিচিরমিচির, পাশের বাড়ির ছাদে শুকোতে দেওয়া কাপড়—সবকিছু আগের মতোই। কিন্তু তার মন যেন সেই জানালার পাশে আটকে আছে, যেখানে দু’চোখে কিছু বলার চেষ্টা করেছিল এক অপরিচিত মেয়ে।
“সাহিদা… তুমি কি টের পেয়েছিলে আমার দৃষ্টি? আমার সেই না বলা অনুভূতি?”
—মনে মনে এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, অথচ জানে, তার কোনো উত্তর আসবে না।
সারাদিন সে কারো সঙ্গে খুব বেশি কথা বলেনি। মায়ের আদরের হাসিতে সে নিজেকে খুঁজে পায়, কিন্তু বুকের এক কোণায় কোনো এক শূন্যতা ঘাপটি মেরে বসে আছে।
দুপুরে পুরোনো কিছু বই গুছাতে গিয়ে হঠাৎ করেই একটি ডায়রির পাতা খুলে যায়।
সেখানে সে কখনো লিখেছিল—
“যদি কোনোদিন এমন কেউ আসে, যে কিছু না বলেই চোখে চোখ রেখে হৃদয় ছুঁয়ে যাবে, তাকে আমি হারাতে চাইব না।”
সেই লেখা আজ নিজেকেই ব্যঙ্গ করছে। সে কি হারিয়ে ফেলেছে কাউকে, যাকে সে একবারের জন্যও ঠিকভাবে চিনে উঠতে পারেনি?
রাতে আরাফাত ছাদে হেঁটে বেড়ায় একা একা। নীচের রাস্তা একেবারে ফাঁকা। হালকা বাতাস বইছে। আকাশে চাঁদ উঠেছে। হঠাৎ তার চোখ পড়ে পাশের বাড়ির ছাদে শুকিয়ে রাখা একটি ওড়নার দিকে—হুবহু সেই মেয়েটির মতো। তার বুকের ভেতর কেমন করে ওঠে।
“হয়তো ভুল দেখছি,”—নিজেকে বোঝাতে চায়।
কিন্তু মন মানে না। মন বলে,
“যে অনুভূতি একবার ছুঁয়ে গেছে, সে কি আর ভোলা যায়?”
ঘুম আসে না আরাফাতের। সাহিদার চোখ যেন বারবার ভেসে আসে অন্ধকার ঘরে।
সে ভাবে,
“একটা নাম, একটা জানালা—কীভাবে এতটা গভীর হয়ে উঠলো আমার জীবনে?”
হয়তো সাহিদা তাকে ভুলে গেছে।
হয়তো এই দেখা ছিল কেবল একবারের।
তবু মনে হয়, যদি… যদি কোনোদিন আবার দেখা হয়?
চলবে…