(চিঠি লিখছি শ্রদ্ধেয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর অনবদ্য এক সৃষ্টিকর্ম “দেবদাস” উপন্যাসের দেবদাস চরিত্রকে)
প্রিয় দেবদাস,
অন্তরের গহীন থেকে একরাশ ভালোবাসা তোমার জন্য। তোমার ভালোবাসা আর মুগ্ধতায় আমি বিমোহিত।তবে তোমাকে আবিষ্কারের লগ্নে আমি যেমন পেয়েছি বিরহ তেমন পেয়েছি অপেক্ষা। অপেক্ষা কেনো বললাম বলো তো? বোকা! এখনো বুঝোনি।রাগ করো না যেন বোকা বলেছি বলে। শ্রদ্ধেয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এক অনবদ্য সৃষ্টি তুমি।কি ভেবে উপন্যাসটা পড়েছিলাম মনে পড়ছে না। তবে ঠাওর করতে পারি, সেদিন খুব হেসেছিলাম তোমার নাম টা শুনে।
দেবদাস আবার কারো নাম হয় নাকি?
আমার হাসি দেখে কে! আম্মুর কাছে সেদিন আচ্ছা করে বকুনি খেয়েছিলাম। প্রত্যুত্তরে কিছু বলি নি। সবার অগোচরে বই পড়ার অভ্যাস আর অভিজ্ঞতা দুটোই বোধ করি আমার বেশি।
বইটা পড়া শুরু করলাম। পার্বতীকে ভীষণ ভালো লাগত,ওকে খুঁজতে খুঁজতে তোমাকে পেয়ে যেতাম! কি সুন্দর তাই না!
জানো নানু বাসায় গিয়ে পুকুরে মাছ ধরছিলাম ইয়া বড় একখান বরশি দিয়ে।তখন যেন তোমাকে আর পার্বতীকে খুঁজে পেলাম।আর সেই দৃশ্যটা স্বচক্ষে দেখতে পেলাম। পার্বতীর মাথায় ব্যাথার চিহ্ন যেন স্পষ্ট চক্ষুকাতর হলো।
ঘোর থেকে ফিরে আবার মাছ ধরায় মনোনিবেশ করলাম।
তোমাদের গল্প আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ঠাওর করতে পারলাম না। শুধু বোধ করি পিছু পিছু যেতে লাগলাম।
এবার আর মাছ ধরায় মনোনিবেশ করতে পারলাম না। পার্বতীর বিবাহ। মনটা বিষণ্ণ, গোধূলি লগ্নের সেই বিষন্ন বিকেলটা সাক্ষী।
দেবদাস আর তার পার্বতীর সমীকরণ কিভাবে পাল্টে যাচ্ছে চোখের পলকে!!!
নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। চক্ষু পানে অঝোরে বৃষ্টি দেখতে পেলাম।
মনে পড়ে সেই কথা!
“দেবদাস ভাবিল তাহার পার্বতী তাহাকে ছাড়া বাঁচিবে না;অথচ পার্বতীর জ্বরটুকু এলো না!”
হায়! একি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! একি হবার কথা ছিল!
যাহোক,দুজন দুপথে নিজেকে খুঁজে নিলো! আমাকে স্বার্থপর ভাবছো তো?যে কেনো দুজন দুপথে বললাম! নিয়তির পালাক্রমে ক্রমবদল ঘটল।
অপ্রত্যাশিত ভোরের কুয়াশার মত তুমি মিলিয়ে গেলে! না গেলে কি হতো না?
জানো তো খুব কেঁদেছি,ঐ যে বটবৃক্ষ,নিথর দেহটা বার বার যে আমাকে ডাকে।
জানি না আমার কথা গুলো তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করছে কি না, তবে তুমি আমার হৃদয়ে প্রবেশ করেছো।
মনটা ভার । বোধকরি মাথাটা ঝিমঝিম করছে। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের এক অনল তুমি। যেখানেই থাকো ভালো থেকো। তোমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি
তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকা এক বিষন্ন পাঠিকা
শাম্মী