• শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন

অথই সাগরের সেই ডাক ✍️এন আই বিপুল।

মোঃ নজরুল ইসলাম বিপুল / ৬৩ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে যখন সকল মুখোশ খসে পড়ে, সকল কৃত্রিমতা বিলীন হয়ে যায়। আমার কাছে প্রকৃত প্রার্থনা বা প্রকৃত দীন বোঝার মাপকাঠি একটাই— অথৈ সাগরে পতিত হয়ে হাবুডুবু খাওয়া মানুষটি কিভাবে আল্লাহকে ডাকে।

আপনারা ভাবুন তো, সেই চরম মুহূর্তে তার মনে কি জান্নাতের লোভ থাকে? কি জাহান্নামের ভয় থাকে? না! সেই মুহূর্তে তার মনে কেবল একটিই আকুতি: বাঁচাও!— এবং এই আকুতি কেবল নিঃশর্ত নির্ভরতা ও আত্মসমর্পণের জন্ম দেয়। সে তার ভেতরের গভীরতম, খাঁটিতম স্থান থেকে ডাকে।

আমি বলি, তোমরা ঠিক সেভাবেই তাকে ডাকো।

আনুষ্ঠানিকতার ভারে চাপা পড়া দীন

আজকাল যা কিছু দেখি, তা এক বিশাল ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা— সেজদার গভীরতা মাপা, দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা গলা উঁচু করে আওয়াজ করা— এগুলো হলো লোভ দেখানো ভণ্ডামি। আমরা আল্লাহর ইবাদত করি, নাকি মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর জন্য প্রতিযোগিতা করি?

যদি আপনারা ভাবেন, তসবি, জুব্বা, পাগড়ি, টুপি— এগুলো দ্বীনের অংশ, তবে আপনারা গভীর ভুল করছেন। এগুলো আমাদের ব্যক্তিগত অভিরুচি, সংস্কৃতি বা ঐতিহ্যের অংশ হতে পারে। কিন্তু এর কোনোটিই দীনের মূল কাঠামো নয়। যদি তাই হতো, তবে আমাদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনের পাতায় তা স্পষ্ট করে দেওয়া থাকত। কোরআন আমাদের পোশাকের শালীনতা শিখিয়েছে, কিন্তু এই প্রতীকী বেশভূষাকে ইবাদতের শর্ত করেনি। আল্লাহ আমাদের বাহ্যিক আবরণ নয়, বরং আমাদের ভেতরের নিয়ত দেখেন।

লোভ ও ভয়: পবিত্র প্রেমের প্রধান শত্রু

যে ইবাদতকে আমরা ধর্মচর্চা বলি, তার ভেতরে যখন লোভ এবং ভয় প্রবেশ করে, তখন সেই ইবাদতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এটি কেবল একটি শর্তযুক্ত ব্যবসায়িক লেনদেন হয়ে দাঁড়ায়।

ইবাদতের তিনটি স্তর:

ধর্মতত্ত্ব অনুসারে, ইবাদতের উদ্দেশ্যকে প্রধানত তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়:

১. দাস-দাসীর ইবাদত (ভয়): এই ইবাদতের প্রেরণা হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া। এটি সর্বনিম্ন স্তর, যেখানে প্রেরণা হলো শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি। জাহান্নামের ভয় হয়তো সেখান থেকে আপনাকে নিষ্কৃতি দিতে পারে, কিন্তু খোদার দিদার (সাক্ষাৎ) নয়। আপনি শাস্তি এড়ালেন, কিন্তু তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারলেন না।

২. বণিকের ইবাদত (লোভ): এই ইবাদতের প্রেরণা হলো জান্নাত বা বেহেশত লাভ করা। এটি মধ্যম স্তর, যেখানে একটি প্রাপ্তির আশা থাকে—ঠিক যেন ব্যবসায় লাভ করার মতো। বেহেশতের লোভে ইবাদত হয়তো আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত বেহেশত এনে দিতে পারে, কিন্তু খোদার সন্তুষ্টি নয়। আপনি সেখানে আপনার প্রাপ্য পুরস্কার পেলেন, কিন্তু প্রেমের কোনো বিনিময় হলো না।

৩. মুক্ত মানুষের ইবাদত (প্রেম): এটি হলো সর্বোচ্চ স্তর, যেখানে ইবাদতের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাঁর সন্তুষ্টি (রিদা) অর্জন। এখানে কোনো লোভ বা ভয় কাজ করে না; ইবাদত নিজেই একটি আনন্দ ও কর্তব্য। যেখানে আমি বলি: “হে আল্লাহ, আমি তোমাকে ভালোবাসি, তাই আমি তোমার ইবাদত করি। আমার এই ভালোবাসার কারণে তুমি যদি আমাকে জাহান্নামেও দাও, আমার কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমার ইবাদতের উদ্দেশ্য বেহেশত পাওয়া নয়, কেবল তুমি।”

 

আচ্ছা আপনার কি মনে হয়, খোদা কি এমন এক প্রভু যিনি কেবল পুরস্কার ও শাস্তির ভয় দেখিয়েই পূজিত হতে চান? মানুষকে ভয় বা লোভ দেখিয়ে তিনি আর কার কাছে বড় বা শ্রেষ্ঠ হতে চান? এটাও কি সম্ভব? না! তিনি চান প্রেম, বিশুদ্ধ ভালোবাসা, এবং নিঃশর্ত আনুগত্য।

আমি এই সমাজের মানুষদের আহ্বান জানাই— আপনারা বণিক হবেন না, দাস হবেন না; আপনারা প্রেমিক হোন। আপনার নামাজ, আপনার রোজা, আপনার দান— সব কিছুকে সেই অথৈ সাগরের সেই নিঃশর্ত আহ্বানে ফিরিয়ে আনুন। লোভ ও ভয়ের বেড়ি ভাঙুন। দেখবেন, যখন মন খাঁটি হবে, তখন কোনো টুপি বা পাগড়ি ছাড়াই আপনার আত্মা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে গেছে। এটাই হলো বিশুদ্ধ দীন।

প্রেমই হোক একমাত্র প্রেরণা

দীনের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সঙ্গে একটি গভীর, ব্যক্তিগত সংযোগ স্থাপন করা। প্রকৃত ইবাদত হলো আত্মার মুক্তি। লোভ ও ভয়ের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে প্রেম ও নির্ভরতার আলোয় দাঁড়ানো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন