• বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
💐 গল্প: নিয়ামতপুরের হাটের সৎ বিক্রেতা, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 কবিতা: রাসূলের দিদার শুধু ইমানদারের রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম তারিখ:৪/১১/২০২৫ 🖋️ মজার গল্প: বংশের দেমাগ : এক পতনের আখ্যান। যৌবনের আর্তনাদ: এক নারীর অকথিত গল্প, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 ছোট গল্প:বাদশাহ ফরিদ উদ্দিন এর ন্যায্য মজুরি। রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম উপন্যাস :শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে।🍒 কবিতা: সময়মতো বিবাহ  রচনাঃমাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম  তারিখ:১/১১/২৩ 🖋️ গল্প: “আলেয়ার আফসোস আর সলিম উল্লাহর বোধোদয়”। রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺 মজার গল্প : বাঁশ খানের ন্যায়ের বাঁশ রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম ছোট গল্প: ক্ষুদ্র প্রাণীর শক্তি রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 

যৌবনের আর্তনাদ: এক নারীর অকথিত গল্প, রচনায় মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম 🌺

Reporter Name / ১৩ বার পড়া হয়েছে
আপডেট: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

যৌবনের আর্তনাদ: এক নারীর অকথিত গল্প

 

১. সূচনা

 

রাত তখন গভীর। জানালার বাইরে অন্ধকার আকাশে চাঁদটা আধো মুখে লুকিয়ে আছে মেঘের আড়ালে। ছোট্ট ঘরটার নিঃশব্দতায় কেবল শোনা যায় এক নারীর নিঃশ্বাসের আওয়াজ— ভারী, ক্লান্ত, অথচ স্থির। বিছানার পাশে একটা পুরনো চেয়ারে বসে আছে রুকাইয়া। বয়স ত্রিশ পেরিয়েছে, কিন্তু চোখের কোণে যে নিঃশব্দ কান্না জমে আছে, তা যেন শতবর্ষের ক্লান্তি বহন করে।

 

রুকাইয়া এক সময় ছিল এক প্রাণবন্ত মেয়ে—চঞ্চল, স্বপ্নময়, আর হাসিখুশি। বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক, মা গৃহিণী। গ্রাম্য মেয়েদের মতোই তাঁর স্বপ্ন ছিল সহজ—একটা ভালোবাসাময় সংসার, কিছু নিজের মতো মানুষ, আর একটু ভালোবাসা। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা তাকে শিখিয়েছিল—সব স্বপ্ন পূরণের নয়, কিছু স্বপ্ন কেবলই আক্ষেপ হয়ে থাকে।

 

২. যৌবনের দোলাচল

 

যখন রুকাইয়া কলেজে পড়ে, তখনই গ্রামের ছেলে-মেয়েরা তাকে ‘রুকাইয়া আপা’ বলে ডাকত—তার মিষ্টি কথা, মার্জিত ব্যবহার, আর পর্দার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে অনেকে তাকে অনুসরণ করত। কিন্তু তার এই সৌন্দর্য ও ভদ্রতা কিছু মানুষের ঈর্ষার কারণও হয়ে উঠেছিল।

 

একদিন কলেজের সামনে হঠাৎই এক ধনী পরিবারের ছেলের সঙ্গে চোখাচোখি হয়। নাম রাকিব। শহর থেকে মাঝে মাঝে গ্রামে আসত, বড়লোক বংশের ছেলে, দামি বাইক, চটুল চেহারা। প্রথমে রুকাইয়া তাকে পাত্তা দেয়নি, কিন্তু রাকিবের আচরণ ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত বন্ধুত্বে পরিণত হয়।

 

“তুমি আমার জীবনের আলো,” বলত রাকিব।

রুকাইয়া হাসত, “ভালোবাসা তো আলো নয় রাকিব, ওটা আগুন। আগুনে জ্বলে যেতে হয়।”

 

কিন্তু এই আগুন যে কতটা দহন তৈরি করতে পারে, তা সে তখনও জানত না।

 

৩. সমাজের শৃঙ্খল

 

রাকিবের সঙ্গে সম্পর্কটা যখন গভীর হতে শুরু করে, তখনই গ্রামের মানুষজন নানা কথা বলতে শুরু করল। “মেয়েটা নষ্ট হয়ে গেছে”, “শিক্ষকের মেয়ে এমন কাজ করবে?”—এমন তীর্যক মন্তব্যে চারপাশ ভারী হয়ে উঠল।

রুকাইয়া চুপ করে থাকল। সে জানত, সমাজ নারীর কথা শুনে না, কেবল তার বিচার করে।

 

একদিন রাকিব শহরে ফিরে গেল—বলো না কবে ফিরবে। সে আর ফিরলও না। ফোন ধরল না, চিঠি লিখল না, এমনকি রুকাইয়ার দিকে ফিরে তাকালও না।

সেদিন রুকাইয়া প্রথম বুঝল—একজন নারী যখন ভালোবাসে, তখন সে সমর্পণ করে পুরো আত্মাকে; কিন্তু একজন পুরুষ যখন খেলতে আসে, সে কেবল হৃদয় ভাঙার আনন্দ খোঁজে।

 

 

 

৪. নিঃসঙ্গতার গর্ভ

 

দিন যেতে লাগল। রুকাইয়ার চোখে জীবনের রঙ হারিয়ে গেল। বাবা মারা গেলেন হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে। মা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “মেয়েটা আমার একা হয়ে গেল।”

রুকাইয়া তখন সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিল। গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করল, ছোট ছোট বাচ্চাদের ভালোবাসায় জীবনটা নতুন করে গড়ে নিতে চাইল। কিন্তু রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, তখন বুকের ভেতরটা জ্বলে ওঠে—যেন কোনো অদৃশ্য আগুন তাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে।

 

“রুকাইয়া আপা, আপনি বিয়ে করেন না কেন?” —স্কুলের এক সহকর্মী একদিন জিজ্ঞেস করেছিল।

সে হেসে বলেছিল, “যে আগুনে একবার পুড়েছি, সেখানে আর হাত বাড়াই কীভাবে?”

 

 

 

৫. সমাজের নিষ্ঠুরতা

 

রুকাইয়ার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কখনো বদলায়নি। তার একাকীত্বকে অনেকে তুচ্ছ করেছে, কেউ করুণা দেখিয়েছে, কেউবা লালসার চোখে দেখেছে।

কিন্তু রুকাইয়া জানত—একজন নারীর সম্মান শুধু বিয়েতে নয়, তার চরিত্রে; আর সে চরিত্রের মূল্য বোঝে না এই সমাজ।

 

একবার এক অভিভাবক তার ছেলেকে স্কুল থেকে তুলে নিতে এলেন, কারণ—“একটা অবিবাহিত মেয়ে আমার ছেলেকে কী শিক্ষা দেবে?”

সেদিন রুকাইয়া কাঁদেনি। শুধু চুপচাপ কুরআনের আয়াত খুলে পড়েছিল—

 

> “আর যে ধৈর্য ধরে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই এটি দৃঢ় মনোভাবের কাজ।” (সূরা আশ-শূরা, ৪৩:৪৩)

 

 

৬. এক রাতের আত্মকথন

 

সেই রাতে রুকাইয়া ডায়েরি খুলে লিখল—

 

> “আমি কোনো অপরাধ করিনি, তবুও সমাজ আমাকে বিচার করেছে। আমি ভালোবেসেছিলাম, কিন্তু ভালোবাসার বিনিময়ে পেয়েছি লাঞ্ছনা। আমার যৌবন আজ যেন একটি পুড়ে যাওয়া ফুল—গন্ধ নেই, রং নেই, তবু হৃদয়ের এক কোণে এখনও বেঁচে আছে আশা।”

 

সে আয়নায় নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে—

“তুই এখনো সুন্দর রুকাইয়া। কিন্তু তোর সৌন্দর্য এখন চোখে নয়, তোর ধৈর্যে। তুই প্রমাণ করে গেছিস—একজন নারী তার সম্মান নিজেই রক্ষা করতে পারে, আল্লাহর ভয়ে, আল্লাহর ভরসায়।”

 

৭. নতুন প্রভাত

 

বছর ঘুরে যায়। একদিন গ্রামের একটি মেয়ে আসে রুকাইয়ার কাছে কান্না করে—

“আপা, এক ছেলে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। এখন আমি কী করব?”

 

রুকাইয়া তাকে বুকের ভেতর টেনে নিয়ে বলে—

“আল্লাহর দিকে ফিরে যা মা। মানুষ তো কেবল আঘাত দিতে জানে, কিন্তু আল্লাহ জানেন, কে কতটা কষ্ট পেয়েছে। তুই হারবি না।”

 

সেদিন সে নিজের কষ্টকে এক নতুন শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিল।

সে বুঝেছিল—নারীর জীবন কেবল ভোগের নয়, সে নিজেও সৃষ্টি করতে পারে আলো।

তার শিক্ষায় গ্রামের অনেক মেয়ে সাহস পেতে শুরু করল। পর্দার আড়ালেও আত্মমর্যাদার দীপ্তি দেখা গেল তাদের চোখে।

 

৮. পরিণতি

 

আজ রুকাইয়া পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। চুলে পাক ধরেছে, কিন্তু চোখে এখনও আছে এক অদ্ভুত জ্যোতি।

একদিন এক সাংবাদিক এসে সাক্ষাৎকার নিতে চাইল, “আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?”

 

রুকাইয়া মৃদু হাসল, বলল—

“নারী কাঁদতে জানে, কিন্তু সে হারতে জানে না। যৌবন শুধু রূপের নয়, এটা আত্মারও এক জাগরণ। আমি একবার পুড়েছিলাম, কিন্তু সেই আগুনই আমাকে আলোর পথ দেখিয়েছে।”

 

তারপর সে জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল—

“আমার যৌবনের আর্তনাদ আজ শান্তির দোয়ায় পরিণত হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে একা রাখেননি, তিনি আমাকে শক্তি দিয়েছেন।”

 

৯. উপসংহার

 

রুকাইয়ার জীবনের গল্পটি কোনো ব্যর্থ ভালোবাসার গল্প নয়—এটি এক নারীর জাগরণের গল্প। সমাজ তাকে যে ক্ষত দিয়েছিল, সে ক্ষতই তার শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।

তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে এখন একটাই বার্তা—

 

“নারী দুর্বল নয়, সে ধৈর্যের প্রতীক। সে কেবল সংসার নয়, একটি

সমাজ গড়তে পারে—যদি তাকে সম্মান দেওয়া হয়।”

 

শেষ কলমে,

মাওলানা মোঃ ফরিদুল ইসলাম

 

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এজাতীয় আরো লেখা

📲 Kaj Kori App – মোবাইল দিয়ে ইনকাম করুন!

অ্যাপে রয়েছে Rocket Game, Ludo, Spin & Earn, আর্টিকেল রিডিং, রেফার বোনাস — ১০০ পয়েন্ট = ১ টাকা

📥 Kaj Kori App ডাউনলোড করুন